—ফাইল চিত্র।
নৈহাটির গঙ্গাতীরে বিস্ফোরণের পরে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখে অনেকের মনে জাপানের পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের ছবি ভেসে উঠেছে। কিন্তু পুলিশি সূত্র বলছে, ওই ধোঁয়ার সঙ্গে জাপান নয়, চিনের সম্পর্কই বেশি! কারণ, নৈহাটির দেবগ্রাম থেকে বাজেয়াপ্ত বাজির মশলার মধ্যে চিনা বারুদ থাকতে পারে। এবং সেই ‘বিদঘুটে’ বারুদ ফাটাতে গিয়েই এমন কাণ্ড ঘটেছে।
চিনা বারুদের ‘খ্যাতি’ অবশ্য নতুন নয়। নবম-দশম শতকে চিনে বারুদ ব্যবহারের কথা জানা যায়। বঙ্গে চিনা বারুদের আগমনের কথা ঠাঁই পেয়েছে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘তুমি সন্ধ্যার মেঘ’ উপন্যাসে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, তিব্বতি রাজার কাছ থেকে বারুদভর্তি ‘অগ্নিকন্দুক’ উপহার পেয়েছিলেন বিক্রমশীলা মহাবিহারের অধ্যক্ষ অতীশ দীপঙ্কর। তিব্বতের রাজা চিন দেশ থেকে কারিগর আনিয়ে সেই ‘কন্দুক’ বা বোমা তৈরি করিয়েছিলেন। মহাবিহার থেকে কলচুরিরাজের সেনাদের বিতাড়িত করতে সেই ‘কন্দুক’ ফাটিয়েছিলেন তিব্বতি ভিক্ষুরা। যাঁরা দীপঙ্করকে নিজেদের দেশে আমন্ত্রণ জানাতে হাজির হয়েছিলেন বিক্রমশীলায়।
নৈহাটির ‘নাটকীয়’ বিস্ফোরণ অবশ্য ছোটখাটো ‘অগ্নিকন্দুক’-এর কাজ নয়। পুলিশি সূত্রের খবর, নৈহাটির দেবগ্রামে বেআইনি বাজি কারখানা থেকে প্রায় ১০ ট্রাক বারুদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। পাঁচ দিন ধরে তা গঙ্গার পাড়ে ফাটিয়ে নষ্ট করা হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার ফাটানোর সময় গোলমাল বাধে। গোয়েন্দারা বলছেন, ইদানীং বাজি তৈরির ‘রেডিমেড’ মশলা পাওয়া যায়, যাকে বলে চিনা বারুদ। বাজেয়াপ্ত বারুদের মধ্যে সেই মশলা ছিল বলে পুলিশের সন্দেহ।
আরও পড়ুন: নৈহাটির বিস্ফোরণ খোঁজ নিচ্ছে এনআইএ
পুলিশের একাংশের বক্তব্য, গর্ত তৈরি করে তাতে সমান ভাবে বারুদ পুরে তার পরে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়। পাঁচ দিন ধরে সেই কাজ চলছিল। টানা কাজ করতে করতে বৃহস্পতিবার বম্ব ডিসপোজ়াল স্কোয়াডের সদস্যদের গা-ছাড়া মনোভাব তৈরি হয়েছিল কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। গঙ্গার পাড়ে স্থান নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে পুলিশের অন্দরে।
পুলিশি সূত্রের দাবি, আরও দুই ট্রাক ভর্তি বাজেয়াপ্ত করা বারুদ রয়েছে। দেবগ্রামের বহু বাড়িতে তল্লাশি বাকি। কিন্তু বৃহস্পতিবারের বিস্ফোরণের পরে আপাতত বারুদ নিষ্ক্রিয় করা বন্ধ রয়েছে। শুক্রবার ঘটনাস্থলে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেছে ফরেন্সিক দল। এ দিন ঘটনা নিয়ে ভবানী ভবনে বৈঠকও হয়েছে। এক সিআইডি-কর্তা বলেন, ‘‘কী বারুদ ফেটেছে এবং ফাটানোর সময় কোনও গাফিলতি ছিল কি না, ফরেন্সিক রিপোর্ট আসার পরেই সেই বিষয়ে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy