Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
State news

আগাম রিপোর্ট পেয়েও কেন বিশৃঙ্খলা এড়াতে পারল না কলকাতা পুলিশ? উঠছে প্রশ্ন

মঙ্গলবার অমিত শাহের রোড শো-কে কেন্দ্র করে যে এই ধরনের গন্ডগোল-অশান্তি হতে পারে, তা আগে থেকেই পুলিশকে সতর্ক করেছিল কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চ।

তখন বিদ্যাসাগর কলেজের সামনে দিয়ে যাচ্ছে অমিত শাহের রোড শো। সে সময়ই তাঁর গাড়ির সামনে কাচের বোতল, ইট ছোড়া শুরু হয়। —নিজস্ব চিত্র।

তখন বিদ্যাসাগর কলেজের সামনে দিয়ে যাচ্ছে অমিত শাহের রোড শো। সে সময়ই তাঁর গাড়ির সামনে কাচের বোতল, ইট ছোড়া শুরু হয়। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৯ ২২:৪২
Share: Save:

বেনজির পুলিশি ব্যর্থতার সাক্ষী রইল শহর। আগাম রিপোর্ট হাতে পেয়েও অমিত শাহের রোড শো ঘিরে সংঘর্ষের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারল না কলকাতা পুলিশ।

মঙ্গলবার অমিত শাহের রোড শো-কে কেন্দ্র করে যে এই ধরনের গন্ডগোল-অশান্তি হতে পারে, তা আগে থেকেই পুলিশকে সতর্ক করেছিল কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চ। স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের তৃণমূল এবং বিজেপি সেল থেকে স্পষ্ট রিপোর্ট দেওয়া হয়েছিল যে, তৃণমূল সমর্থকেরা বিধান সরণি এবং কলেজ স্ট্রিটে রোড শোয়ের রুটেই অমিত শাহকে কালো পতাকা দেখিয়ে বিক্ষোভ দেখাবেন এবং এই বিক্ষোভ মূলত র‌্যালি রুটের উপরে অবস্থিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই হবে। ঠিক তেমনই বিজেপি সেল থেকেও রিপোর্ট দিয়ে স্পষ্ট জানানো হয়েছিল, এই বিক্ষোভের পাল্টা প্রতিরোধের জন্যও প্রস্তুত থাকবে বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। হামলা হলে সেই হামলারও প্রত্যুত্তর দেবেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। অর্থাৎ দু’পক্ষই সমস্ত প্রস্তুতি নিয়েই বিক্ষোভ এবং মিছিলে নামবে।

অর্থাৎ ভিতরে ভিতরে যে এত বড় একটা সংঘর্ষের আবহ তৈরি হয়েছে, স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের রিপোর্ট অনুযায়ী সেটা খুব ভাল করেই জানতেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা। তা সত্ত্বেও গোটা সময় অমিত শাহের মতো এমন একজন ভিআইপি নেতার রোড শোয়ে একজন পুলিশকেও দেখা গেল না! আগাম সতর্কতা থাকা সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীদের আগেই সরিয়ে নেওয়া গেল না কেন? বা বিক্ষোভকারীদের আগে থেকে ছত্রভঙ্গ করা হল না কেন?

আরও পড়ুন: অমিতের রোড শো ঘিরে দফায় দফায় সংঘর্ষ-আগুন-ভাঙচুর, জখম অনেকেই

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই যে এই বিক্ষোভ-হামলা হতে পারে, তা জানা সত্ত্বেও বিদ্যাসাগর কলেজের মতো এত স্পর্শকাতর কলেজে আগে থেকে পুলিশি প্রহরা কেন ছিল না? কী করে হস্টেল বিল্ডিংয়ের মধ্যে এতজন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক আগে থেকেই রয়ে গেলেন এবং বিনা বাধায় তাঁরা এতগুলো বোতল এবং ইট ছুড়লেন? এবং এমন একটা ভিআইপি রোড শোয়ে শুধুমাত্র রাস্তার কিছু পয়েন্টে এত কম সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হল কেন? অমিত শাহের রোড শোয়ে বিশৃঙ্খলা ঘিরে এই প্রশ্নই এখন উঠতে শুরু করেছে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এই সব প্রশ্নের অবশ্য কোনও সঠিক উত্তর মেলেনি কলকাতা পুলিশের তরফে। কলকাতা পুলিশের জয়েন্ট পদমর্যাদার একাধিক আধিকারিককে ফোন করা হলে তাঁরাও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা শুধু বলেন, ‘‘আরও বড় ধনের গন্ডগোল হতে পারত। কপাল জোরে কার্যত তা এড়ানো গিয়েছে।’’

এ দিন সবচেয়ে বড় গন্ডগোলটা হয় বিদ্যাসাগর কলেজের সামনে। স্পর্শকাতর এই কলেজের সামনে কোনও পুলিশি প্রহরাই ছিল না। কলেজের ভিতরে ২৫ থেকে ৩০ জন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্য ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী কলেজের এক কর্মীর দাবি, অমিত শাহের রোড শো দেখতে কলেজের অনেক কর্মীই তখন হার্ডিঞ্চ হস্টেলের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। সে সময়ই হঠাৎ কলেজের ভিতর থেকে কাচের বোতল এবং মুহূর্মুহু ইট পড়তে শুরু করে অমিত শাহের গাড়ির সামনে। বিপদ বুঝে গাড়ির ভিতরে ঢুকে যান অমিত শাহ। তার গাড়ি হস্টেল পেরিয়ে চলে যায়।

এর আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে একদফা বিক্ষোভ এবং সংঘর্ষ হয়ে গিয়েছে বিজেপি এবং তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে। মেডিক্যাল কলেজ পেরনোর পর থেকে কলেজ স্ট্রিটে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের দরজা থেকে শুরু হয়ে যায় টিএমসিপির বিক্ষোভ। সেটা একটা পর্যায় পর্যন্ত বিক্ষোভে আবদ্ধ থাকলেও অমিত শাহের গাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে পৌঁছলেই ভিতর থেকে জলের বোতল, চটি এমনকি কয়েকজন ছাত্রকে ইটও ছুড়তে দেখা যায়। বিজেপি সমর্থকেরা গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকতে চেষ্টা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে ব্যারিকেড করে থাকা পুলিশের বাহিনী তা তখনকারের মতো নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ নিয়ে এমনিতেই তেতে ছিলেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। এর পর বিদ্যাসাগর কলেজের সামনে ফের অমিত শাহের রোড শোয়ে হামলা করা তা আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি পুলিশ। অমিত শাহের গাড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের হস্টেলের গেট পেরিয়ে চলে যায়। তার পরই শাহের পিছনের গাড়ি থেকে কয়েকশো বিজেপি সমর্থক ঝাপিয়ে পড়েন এবং রেলিং টপকে দ্রুত বিল্ডিংয়ের মধ্যে ঢুকে পড়েন। ভিতরে ঢিকেই ইউনিয়নের ছেলের তাড়া করে। অনেকে পালিয়ে যেতে সমর্থ হলেও, কলেজের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের অনেক ছাত্র বিজেপি সমর্থকদের হাতে মার খান। উত্তেজিত বিজেপি সমর্থকেরা হস্টেলের একতলা পুরোপুরি তছনছ করে দেন। নির্দ্বিধায় ভিতরে ভাঙচুর চালাতে শুরু করেন তাঁরা। বিদ্যাসাগরের আবক্ষ একটি মূর্তিও ভেঙে দেন। সে সময় মূল কলেজের অফিসেই ছিলেন অধ্যক্ষ গৌতম কুণ্ডু। তিনি হস্টেল বিল্ডিংয়ে আসার আগেই তিনটি বাইক জ্বালিয়ে দেন সমর্থকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE