জলের অভাবে আমনের চাষ সঙ্কটে পড়েছিল কৃষি-প্রধান পূর্ব বর্ধমানে। ডিভিসি-র জলাধারে ধরে রাখা জল ছেড়ে তা কোনও মতে সামলানো হলেও, বোরো বা রবি-চাষে কী হবে, চিন্তায় রয়েছেন চাষিরা। তাঁদের দুশ্চিন্তা রয়েছে ধান কেনার গতি বা বছরের পরে বছর আলুর দাম না মেলা নিয়েও। শুক্রবার সে জেলায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য চাষের পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ জানালেন।
কালনার অঘোরনাথ পার্ক স্টেডিয়ামে এ দিনের সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আসার পথে দেখলাম খুব সুন্দর ধান হয়েছে। কেন্দ্র বলছে, চাষিদের আয় দ্বিগুণ করবে। আমরা এখনই তিন গুণ করে দিয়েছি।’’ সভার পরে রায়নার চাষি সুন্দরগোপাল দাস, গলসির আসগর মণ্ডলেরা অবশ্য দাবি করেন, ‘‘এ বার ধান বাঁচানো গেলেও, প্রতি বছর জল নিয়ে দুশ্চিন্তা দূর করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। ধান কেনায় গতি আনাও প্রয়োজন। সে ব্যাপারগুলোও সরকারের নজরে থাকলে ভাল।’’
জেলার চাষিদের একাংশের অভিযোগ, জলের অভাবে এ বার অনেক এলাকায় ধানের ফলন ভাল হয়নি। আউশগ্রামের জমিতে ধান পুড়িয়ে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন চাষিরা। জেলার সব কিসানমান্ডি চালু হয়নি। গ্রামীণ এলাকায় সহায়ক মূল্যে ধান কেনা এখনও ‘সে ভাবে’ শুরু হয়নি। হিমঘরে মজুত আলুর দাম ক্রমশ কমছে। আলু ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশের দাবি, কয়েক বছর ধরে লোকসানে চলছেন তাঁরা। কিছু হিমঘর মালিকেরও দাবি, আলু রেখে লাভ হচ্ছে না।
আরও পড়ুন: ভেজাল মদে নজরদারি কই, উষ্মা মুখ্যমন্ত্রীর
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য জানান, চাষের জলের সমস্যা মেটাতে ২,৭৬৮ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তাতে হাওড়া, হুগলি, দুই বর্ধমান ও বাঁকুড়ায় সেচ-পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কৃষিজমির খাজনা, ‘মিউটেশন ফি’ মকুব করা হয়েছে। ফসলে বিমায় চাষিদের কিস্তির টাকা রাজ্য সরকার দিচ্ছে। এক লক্ষ চাষিকে পেনশন, বিকল্প চাষ, ফসলের ক্ষতিপূরণ, কৃষিযন্ত্র বিলির মতো নানা সুযোগ-সুবিধার কথাও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ‘হোক না মন্দির! কিন্তু মন্দিরে পুজো করতে যাওয়ার জন্য তো পেটে রুটি চাই, সেটা কোথায়?’
তবে কালনার প্রবীণ কৃষিজীবী হরেন মল্লিক, বাবর আলি শেখের বক্তব্য, ‘‘ধান, আলুর দাম নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কিছু বলবেন বলে আশা করেছিলাম। তা হল না।’’ রাজ্য হিমঘর ব্যবসায়ী সমিতির কর্তা কৌশিক কুণ্ডু জানান, আজ, শনিবার কৃষি বিপণন দফতরের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে দাবিদাওয়া জানাবেন তাঁরা।
বামপন্থী সংগঠন ‘কৃষকসভা’র কালনা জোনাল সম্পাদক মহম্মদ আলির মন্তব্য, ‘‘খাজনা, মিউটেশন বা বিমার বাইরে ফসলের জন্য চাষির আরও খরচ আছে। তাঁদের আয় কী ভাবে বাড়ল জানি না!’’ তবে ‘তৃণমূল কিসান ও খেত মজদুর সংগঠন’-এর নেতা শাজাহান শেখ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বরাবরই চাষিদের পাশে আছেন। ধান-আলু নিয়ে এখনই দুশ্চিন্তার পরিস্থিতি নেই।’’
(সহ-প্রতিবেদন: সৌমেন দত্ত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy