মাটি থেকে বিমান নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত এটিসি-র মহিলা অফিসারেরা। কলকাতা বিমানবন্দরে। নিজস্ব চিত্র
অর্ধেক আকাশ আগেই অধিকার করেছেন তাঁরা। শুক্রবার, নারী দিবসে ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে সঙ্গে আকাশেও শাসন চলল তাঁদের। ককপিটে বসে দিনভর দেশ-বিদেশ সফর করলেন মহিলা পাইলটেরা। এবং সেই সব উড়ানের অন্য কর্মীরাও মহিলা।
এয়ার ইন্ডিয়ার এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কলকাতার নাম। ১৯৮৫ সালেই প্রথম শুধু মহিলা কর্মীদের সাহায্যে কলকাতা থেকে শিলচর যায় তাদের ফকার ফ্রেন্ডশিপ বিমান। ককপিটে ছিলেন দুই মহিলা পাইলট। তারও প্রায় বছর তিরিশ আগে ভারতের আকাশে প্রথম মহিলা পাইলট হিসেবে ককপিটের দায়িত্ব নেন ক্যাপ্টেন দূর্বা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিও এই বাংলার মেয়ে। সেটা ছিল ১৯৫৬ সাল। বছর ছয়েক আগে প্রয়াত হয়েছেন দূর্বা। বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠা বোয়িং-৭৭৭ পাইলট অ্যানি দিব্যা এ দিনই প্রভাবশালীদের মঞ্চ ‘লিঙ্কডইন নেটওয়ার্ক’-এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে জানান, পুরুষ-প্রধান পাইলট পেশায় এই জায়গায় পৌঁছতে তাঁকে কী ভাবে লড়াই চালাতে হয়েছে।
শুক্রবার সকালে কলকাতা থেকে ভুবনেশ্বর উড়ে যায় নারী-বিমান। ককপিটে দুই মহিলা পাইলট। কেবিনে শুধুই সেবিকা। এ দিন দেশে এই ধরনের প্রায় ৪০টি উড়ান চালিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া। ১২টি আন্তর্জাতিক উড়ানও রয়েছে এই তালিকায়। বোয়িং ৭৮৭ বা বোয়িং ৭৭৭-এর মতো দূরপাল্লার বিমানের ককপিটের দায়িত্বেও এ দিন দেখা গিয়েছে মহিলা পাইলটদের। তার মধ্যে দিল্লি থেকে সিডনি, শিকাগো, রোমের উড়ান ছিল, ছিল মুম্বই থেকে লন্ডন, সাংহাই, নিউ ইয়র্কের উড়ানও। এয়ার ইন্ডিয়ার দাবি, একটি উড়ান সংস্থার এত মহিলা পরিচালিত উড়ান চালানোর কৃতিত্ব বিশ্বে তারাই প্রথম অর্জন করেছে। এ দিন ওই সব বিমানের যান্ত্রিক বিষয় দেখভালের জন্যও এগিয়ে রাখা হয় মহিলা ইঞ্জিনিয়ারদের এবং বিমান ছাড়ার সূচি বানানোর মহিলা ফ্লাইট ডেসপ্যাচারদের। সংস্থার পূর্বাঞ্চলীয় দফতরে মহিলা কর্মীদের নিয়ে মুখোশ তৈরির শিবির, স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে আলোচনাসভারও আয়োজন ছিল।
আকাশের বিমান এ দিন মাটিতে বসেও নিয়ন্ত্রণ করেছেন মহিলারা। কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, এ দিন বেলা পৌনে ২টো থেকে পৌনে ৩টে পর্যন্ত মহিলা অফিসারেরাই এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) সামলেছেন। ওই সময়ের মধ্যে ১৬টি বিমান ওঠানামা করেছে। এখন কলকাতা বিমানবন্দরের এটিসি-তে ৪১ জন মহিলা অফিসার রয়েছেন।
বেসরকারি সংস্থা স্পাইসজেট জানায়, এ দিন তাদের ২২টি উড়ান শুধু মহিলাদের দিয়ে চালানো হয়েছে। চেক-ইন ও বিমানে ওঠার সময় অগ্রাধিকার দেওয়া হয় একক মহিলা যাত্রীদের। প্রত্যেক মহিলা যাত্রীকে দেওয়া হয়েছে গরম পানীয়, কুকি।
আরও পড়ুন: জন্মদাত্রীর খোঁজে শহরে জার্মানির যুবক
আবুধাবির সরকারি উড়ান সংস্থা ইতিহাদ এ দিন সেখান থেকে লন্ডনে যে-বিমান চালিয়েছে, তাতেও পাইলট থেকে সেবিকা, ইঞ্জিনিয়ার— সকলেই মহিলা। ভুটানের ড্রুক উড়ান সংস্থাও পারো থেকে বাগডোগরা হয়ে ব্যাঙ্ককের উড়ান চালিয়েছে মহিলাদের দিয়েই। হংকংয়ের উড়ান সংস্থা ক্যাথে পেসিফিক জানিয়েছে, শুক্র ও শনিবার তাদের মহিলা যাত্রীদের বিমানবন্দরে যাতায়াতের জন্য একটি বিশেষ অ্যাপ ক্যাবে ৩০০ টাকা পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হচ্ছে। কলকাতা থেকে যে-সব মহিলা ড্রাগন এয়ারের উড়ান ধরছেন, এই সুবিধা পাচ্ছেন তাঁরাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy