Advertisement
০৪ মে ২০২৪

আত্মঘাতী হয়েছেন তিনশোরও বেশি মানুষ

চার বছরে প্রতারিতদের কারও ভিখারির দশা। কেউ কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতে পারছেন না। কেউ ‘খুন’ হয়েছেন। হামলার আশঙ্কায় কাউকে থাকতে হচ্ছে অজ্ঞাতবাসে। আত্মঘাতীর সংখ্যাটাও তিনশো ছাড়িয়ে গিয়েছে—এমনটাই দাবি প্রতারিতদের সংগঠনের।

 সুপ্রকাশ মণ্ডল ও শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:০৯
Share: Save:

প্রায় পাঁচ বছর পার। লুটের কোটি কোটি টাকার হদিস মেলেনি এখনও।

চার বছরে প্রতারিতদের কারও ভিখারির দশা। কেউ কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতে পারছেন না। কেউ ‘খুন’ হয়েছেন। হামলার আশঙ্কায় কাউকে থাকতে হচ্ছে অজ্ঞাতবাসে। আত্মঘাতীর সংখ্যাটাও তিনশো ছাড়িয়ে গিয়েছে—এমনটাই দাবি প্রতারিতদের সংগঠনের।

২০১৪ থেকে এ পর্যন্ত রাজ্যে চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে ধৃত প্রভাবশালীদের বেশির ভাগই জামিনে মুক্ত। সিবিআই-ইডি’র তদন্ত এখনও চলছে। কখনও সেই তদন্তের গতিতে প্রতারিতেরা আশা দেখছেন, কখনও গ্রাস করছে হতাশা। তদন্ত প্রক্রিয়ায় ‘রাজনীতির খেলা’ও দেখছেন অনেকে।

কবে শেষ হবে তদন্ত?

অন্তত আরও এক বছর যে লাগবে সে ইঙ্গিত ইতিমধ্যেই দিয়েছে সিবিআই। সারদা, রোজ ভ্যালি-সহ একশোর মতো অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে ওই কেন্দ্রীয় সংস্থা। তাদের দাবি, সব মিলিয়ে চার লক্ষ কোটি টাকারও বেশি লুট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সাড়ে চার কোটিরও বেশি মানুষ। কবে বিচার পাবেন এই প্রতারিতরা?

সম্প্রতি সিবিআইয়ের পূর্বাঞ্চলের যুগ্ন অধিকর্তা পঙ্কজ শ্রীবাস্তব কলকাতা হাইকোর্টকে জানিয়েছেন, প্রায় সব মামলায় ‘সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট’ পেশ হয়েছে। তদন্ত ২০২০ সাল পর্যন্তও চলতে পারে। আরও অনেক প্রভাবশালীর নাম পাওয়া গিয়েছে। কঠোর আইনি পদক্ষেপের প্রস্তুতি চলছে।

২০১৪ সালে কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নান এবং সিপিএমের আইনজীবী নেতা বিকাশ ভট্টাচার্যের আবেদনের ভিত্তিতেই সুপ্রিম কোর্ট ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’ খুঁজতে সিবিআইকে ওই তদন্তভার দেয়। সেই তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে এখন মান্নান মনে করছেন, ‘‘রাজনৈতিক কারণেই সিবিআই তদন্তে বাধা আসছে। তাই আমরা সুপ্রিম কোর্টের নজরদারির মাধ্যমে সিবিআই তদন্তের আবেদন করেছিলাম। কিন্তু সম্মতি মেলেনি। তবু সঠিক বিচার পাব বলে আমরা আশাবাদী।’’ বিকাশবাবু বলেন, ‘‘মাঝেমধ্যেই এই মামলা গতি হারিয়েছে। তবে এখন সিবিআই অনেক সক্রিয়। তদন্তের গতিপ্রকৃতির উপর আমাদের নজর রয়েছে। প্রয়োজনে ফের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হবে।’’

২০১৩ সালের এপ্রিলে কাশ্মীরের সোনমার্গ থেকে পলাতক সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন ও অন্যতম ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতারের পরেই এ রাজ্যে চিটফান্ড কেলেঙ্কারি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। একে একে সামনে আসে রোজ ভ্যালি, র‌্যামেল, রাহুল, ভিবজিওর-সহ বহু বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থার নাম। তাতে নাম জড়ায় রাজ্যের অনেক নেতা-মন্ত্রী-সাংসদ, পুলিশ কর্তা, ব্যবসায়ীরও। সুদীপ্ত-দেবযানী ধরা পড়ার পরে সারদার আমানতকারীদের টাকা ফেরতের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে শ্যামল সেন কমিশন গঠন করা হয়। ওই কমিশনের মাধ্যমে প্রায় দেড়শো কোটি টাকা কয়েক লক্ষ আমানতকারীকে ফেরত দেওয়া হয় বলে রাজ্য সরকারের দাবি। কিন্তু সিবিআই তদন্তভার নেওয়ার পরই কমিশন বন্ধ হয়ে যায়।

প্রতারিতরা বাঁচার জন্য সংগঠন গড়েছেন। ‘অল বেঙ্গল চিটফান্ড সাফারার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ নামে ওই সংগঠনের সভাপতি রূপম চৌধুরী অবশ্য তদন্ত নিয়ে হতাশা গোপন করেননি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘তদন্তে যে পুরোদস্তুর রাজনীতি হচ্ছে, সেটা পরিষ্কার।
কেউ সুযোগ বুঝে সিবিআই পাঠাচ্ছে, আবার কেউ কাউকে বাঁচাতে রাস্তায় বসছেন। ক্ষতিপূরণ বোধহয় কোনও পক্ষেরই অগ্রাধিকারের তালিকায় নেই!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chit Fund Suicide
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE