Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Murder

জেল থেকে শ্মশানে, ছেলের শেষকৃত্য বৃদ্ধের

ছেলে মাস্ক পরতে না-চাওয়ায় গোলমাল বাধে। বাড়ি ফিরে ওই বৃদ্ধ রাগের মাথায় ছেলের গলায় কাপড়ের ফাঁস দিয়ে মেরে ফেলেন বলে অভিযোগ।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২০ ০৫:২৯
Share: Save:

প্রতিবন্ধী ছেলেই ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান। কিন্তু রাগের বশে সেই ছেলেকেই শনিবার ‘খুন’ করেছেন শোভাবাজার লেনের বৃদ্ধ বংশীধর মল্লিক। রবিবার আদালত থেকে কয়েক ঘণ্টার প্যারোলে মুক্তি পেয়ে ছেলের শেষকৃত্য সারলেন নিমতলা শ্মশানে।

বংশীধরবাবুর আইনজীবী অনিন্দ্যকিশোর রাউত জানান, তাঁর মক্কেলকে এ দিন ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির করানো হয়। অভিযুক্তের স্ত্রী ১৮ বছর ধরে শয্যাশায়ী। একমাত্র ছেলের শেষকৃত্য করার কেউ নেই। বাবা হিসেবে অভিযুক্ত নিজে ছেলের শেষকৃত্য করতে চান। তাঁকে সেই সুযোগ দেওয়ার আর্জি জানান অনিন্দ্যবাবু। বিচারক তা মঞ্জুর করেন।

কোর্ট থেকে প্রথমে প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে যাওয়া হয় বংশীধরবাবুকে। বিকেলে তিনি প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার আবেদনপত্র জমা দেন। সন্ধ্যায় পুলিশ তাঁকে নিমতলা ঘাট শ্মশানে নিয়ে যায়। ময়না-তদন্তের পরে তাঁর ছেলের দেহও নিয়ে যাওয়া হয় নিমতলায়।

আরও পড়ুন: আজ থেকে কিছু ছাড়, তবে হটস্পটে কড়া নিয়মে সিল বহু পাড়া

শনিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ অশীতিপর বংশীধরবাবু নিজেই শ্যামপুকুর থানায় হাজির হয়ে জানান, ছেলে শীর্ষেন্দু মল্লিককে (৪৫) খুন করে ধরা দিতে এসেছেন তিনি। শুনে চমকে ওঠেন কর্তব্যরত অফিসার। পুলিশ জানায়, শীর্ষেন্দু জন্মাবধি কথা বলতে পারতেন না, হাত-পায়ের গড়ন ছিল অস্বাভাবিক। বংশীধরবাবুর স্ত্রীও ১৮ বছর ধরে শয্যাশায়ী। শনিবার বিকেলে ছেলেকে শোভাবাজার লেনের বাড়ির সামনে হাঁটাতে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই সময় ছেলে মাস্ক পরতে না-চাওয়ায় গোলমাল বাধে। বাড়ি ফিরে ওই বৃদ্ধ রাগের মাথায় ছেলের গলায় কাপড়ের ফাঁস দিয়ে মেরে ফেলেন বলে অভিযোগ। তাঁর স্ত্রী সব দেখলেও শারীরিক ভাবে অশক্ত হওয়ায় আটকাতে পারেননি।

পুলিশি সূত্রের খবর, শনিবার রাত থেকেই বার বার থানার মধ্যে আক্ষেপ করছেন বংশীধরবাবু। পুলিশকর্মীরা তাঁর সঙ্গে সহানুভূতিশীল ব্যবহার করলেও তিনি তা নিয়ে আপত্তি করেছেন। বলেছেন, ‘‘আমি খুনি। আমার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবেন না।’’ একটি সূত্রের দাবি, ঠিক কী ঘটেছিল, তা জানতে তদন্তকারীরা কথা বলেছেন বৃদ্ধের সঙ্গে। তা থেকে পুলিশ জেনেছে, প্রতিবন্ধী ছেলেকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসতেন তিনি। প্রতিবন্ধী ছেলের প্রতি মনোযোগ যাতে না-কমে, সেই জন্য দ্বিতীয় সন্তান চাননি মল্লিক দম্পতি। স্ত্রী শয্যাশায়ী হয়ে পড়ার পরে একাই ছেলের যত্নআত্তি করতেন ওই বৃদ্ধ। কিন্তু অসুস্থ স্ত্রী এবং সন্তানের দায়িত্ব নিতে নিতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। তার উপরে করোনা-আতঙ্কও হয়তো গ্রাস করেছিল।

পুলিশ সূত্রের খবর, বনেদি ঘরের সন্তান বংশীধরবাবুর সংসারে আর্থিক সমস্যা দেখা দিয়েছিল। লকডাউনের পরবর্তী সময়ে আর্থিক অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়বে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। তাই ‘অবাধ্য’ সন্তান মাস্ক পরতে না-চাওয়ায় রাগে-হতাশায় এমন কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু এখন ভুগছেন অনুতাপে। এক পুলিশ অফিসার জানান, জেলে নজরদারিতে থাকলে আপাতত ভাল থাকবেন ওই বৃদ্ধ। প্রয়োজনে মানসিক চিকিৎসাও করানো যেতে পারে। কিন্তু এ দিনই ওই বাড়িতে ফিরলে ফের কোনও বিপদ ঘটিয়ে ফেলতে পারতেন তিনি।


(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE