Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Congress

সভাপতিকে ‘না’ বলে দূরেই বিরোধী নেতা

বামেদের সঙ্গে এ বারের জোট-আলোচনার তোড়জোড় যখন শুরু করেছেন সোমেনবাবুরা, সেই সময়ে মান্নান মাথা ঘামাচ্ছিলেন তৃণমূল এবং বিজেপির ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতাদের নিজেদের দিকে টেনে আনার উদ্যোগে।

সোমেন মিত্র ও আব্দুল মান্নান। ফাইল চিত্র।

সোমেন মিত্র ও আব্দুল মান্নান। ফাইল চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২০ ০৩:৩৯
Share: Save:

বাইরের পথ ঠিক করার আগেই ঘরের জট আরও পাকিয়ে গেল কংগ্রেসে!

রাজ্যে বর্তমান পরিস্থিতির উপরে মুখ্যমন্ত্রী সর্বদল বৈঠক ডেকেছেন আজ, বুধবার। বিধানসভা ভোটের আগে সমঝোতা কোন পথে এগোবে, সেই প্রশ্নে বামেদের সঙ্গে আলোচনার পর্বও আজ সন্ধ্যায় শুরু করতে চলেছে প্রদেশ কংগ্রেস। রাজ্য কংগ্রেসের নেতৃত্ব যে বৈঠককে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ আখ্যা দিচ্ছেন। এই আবহেই দুই মেরুতে চলে গেলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র এবং বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। ক্ষুব্ধ মান্নান আজ নবান্নের সর্বদল এবং ক্রান্তি প্রেসে বাম নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা— দুই বৈঠক থেকেই সরে দাঁড়িয়েছেন। বিরক্ত সোমেনবাবুও পরিষদীয় দলের নেতাকে নিজের হালে ছেড়ে দিতে চেয়েছেন। প্রকাশ্যে দু’জনের কেউই অবশ্য এই নিয়ে মুখ খোলেননি।

বামেদের সঙ্গে এ বারের জোট-আলোচনার তোড়জোড় যখন শুরু করেছেন সোমেনবাবুরা, সেই সময়ে মান্নান মাথা ঘামাচ্ছিলেন তৃণমূল এবং বিজেপির ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতাদের নিজেদের দিকে টেনে আনার উদ্যোগে। এই বিষয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীকেও অবহিত করেছেন বিরোধী দলনেতা। বিধান ভবনে কংগ্রেস এবং বিধানসভায় পরিষদীয় দলে কী হচ্ছে, সে ব্যাপারে একে অপরের কাছে কার্যত কোনও খবর নেই! কংগ্রেস সূত্রের খবর, বাম জোটের বিষয়ে তাঁর মতামত জানার জন্য সোমেনবাবু যোগাযোগ করেছিলেন মান্নানের সঙ্গে। বাম-বৈঠকে যাওয়ার জন্যও অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু মান্নান জানিয়ে দেন, প্রদেশ সভাপতির অনুগামীরা যে সব কাজকর্ম করছেন, তাতে তিনি কংগ্রেসের দলীয় ব্যাপারে মাথাই ঘামাতে চান না! স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মান্নানকে ফোন করার পরে তাঁরই সর্বদল বৈঠকে যাওয়া উচিত, এ কথাও বলেন সোমেনবাবু। কিন্তু রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে সম্প্রতি যে ‘আচরণ’ হয়েছে তাঁর প্রতি, তার পরে আর নবান্নের বৈঠকে যেতে নারাজ মান্নান। মুখ্যমন্ত্রীর পরে এ দিন মুখ্যসচিবকেও তাঁর অপারগতার কথা জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। আর সোমেনবাবু-সহ প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের বলেছেন তাঁদের কাজের সঙ্গে নিজের ভিন্নমতের কথা।

আরও পড়ুন: ছুড়ে দেওয়া ত্রাণ ধরতে নদীর ধার ঘেঁষে মরিয়া দৌড়

শাসক শিবির থেকে বিক্ষুব্ধদের টেনে আনার চেষ্টায় মান্নানের সঙ্গে অবশ্য প্রদেশ কংগ্রেস বা বাম শিবিরের বিশেষ আপত্তি নেই। গোল বাধছে গোটা কাজের পদ্ধতি ঘিরেই। সোমেন-ঘনিষ্ঠ কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘রাজ্যের ক্ষেত্রে অধীরও (চৌধুরী) মুর্শিদাবাদের বাইরে বিশেষ মাথা গলায় না। কিন্তু যে নেতারা বৈঠকে ডাকলে আসেন না এবং পরে বলেন আমাদের মত নেওয়া হল না, তাঁদের বোঝা বড় কঠিন!’’ আবার মান্নানের ঘনিষ্ঠ এক জনের বক্তব্য, ‘‘নিজের এলাকাতেও কেউ চেনে না, এমন নেতাদের নির্বাচনী কমিটিতে বসিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস চালানো হলে, বিরোধী নেতা তাঁর মর্যাদাটুকু না পেলে তিনি কেন সব উদ্যোগে শামিল হতে যাবেন?’’ সামনের বিধানসভা ভোটে তিনি আর দাঁড়াতেই চান না, ঘনিষ্ঠ মহলে এমন ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছেন মান্নান।

প্রয়াত বরকত গনি খানের অনুগামী হিসেবে ‘ছোড়দা’(কংগ্রেস রাজনীতিতে সোমেনবাবু এই নামেই বরাবর পরিচিত) এবং মান্নানের দীর্ঘ কাল হৃদ্যতা ছিল। ব্যক্তিগত ভাবে এখনও পরস্পরের খোঁজ রাখার চল আছে। তবু সোমেনবাবু দ্বিতীয় দফায় সভাপতি হওয়ার পরে বিরোধী দলনেতার সঙ্গে রাজনৈতিক সমীকরণ গোলমাল হচ্ছে বারংবার, ভুগছে কংগ্রেস। প্রাক্তন এক প্রদেশ সভাপতির মন্তব্য, ‘‘কংগ্রেস জন্মের সময়েই মনে হয় গ্রহ-নক্ষত্রের ফেরে কিছু একটা হয়েছিল! নেতা আর গোষ্ঠীর বিবাদ নিয়েই এত বছর কেটে গেল!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Congress Somen Mitra Abdul Mannan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE