বৈঠকে সনিয়া গাঁধী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।ছবি: সংগৃহীত।
বাংলায় কংগ্রেসের সামনে কি ফের উভয় সঙ্কট! সনিয়া গাঁধী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যৌথ উদ্যোগে বিরোধী রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক ফের চর্চায় নিয়ে এল সেই প্রশ্নকে।
রাজ্যে বিধানসভা ভোট কয়েক মাস দূরে। তৃণমূল এবং বিজেপির মোকাবিলায় বামেদের সঙ্গে যৌথ আন্দোলনে রয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস। বামেদের সঙ্গে নিয়েই তারা রাজ্যে তৃণমূলের সরকার পরিবর্তনের লড়াইয়ে নামতে চায়। কিন্তু সেই সময়ে কংগ্রেসের সভানেত্রী সনিয়া তৃণমূল নেত্রী মমতাকে পাশে নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের কার্যকলাপ মোকাবিলার ঘুঁটি সাজাচ্ছেন। তা হলে কি এ রাজ্যে কংগ্রেসের অবস্থান নিয়ে ফের সংশয় এবং বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে? কংগ্রেসের কাছে জাতীয় রাজনীতিতে মূল শত্রু যে হেতু বিজেপি, তাই এ রাজ্যে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তৃণমূলকে পাশে রাখতেই আগ্রহী কি না, সেই প্রশ্নও তুলছেন রাজনৈতিক শিবিরের কেউ কেউ।
প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব অবশ্য এর মধ্যে ‘বিভ্রান্তি’র কিছু দেখছেন না। তাঁদের যুক্তি, জাতীয় ও রাজ্য রাজনীতির বাধ্যবাধকতা অনেক সময়ই আলাদা। অতীতে এ রাজ্যে কংগ্রেস যখন বাম সরকারের বিরোধী, কেন্দ্রে তখন বামেদের সমর্থনেই ইউপিএ সরকার চলেছে। আবার এখন নিট এবং জেইই-প্রশ্নে বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের যৌথ উদ্যোগে কেরলের পিনারাই বিজয়ন শামিল হতে চাইলেও সে রাজ্যে কংগ্রেসের তীব্র সিপিএম-বিরোধিতার কারণে তা সম্ভব হয়নি।
প্রদেশ কংগ্রেসের সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান প্রদীপ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘রাজনীতির সব কিছু সরল অঙ্কে চলে না। বিষয়ভিত্তিক সমর্থন বা বিরোধিতার সঙ্গে সার্বিক রাজনীতিকে গুলিয়ে ফেলে এই বিভ্রান্তির প্রশ্ন তোলা হয়। পরীক্ষার প্রশ্নে মোদী সরকার যা করছে, তার মোকাবিলায় মমতা-সহ বিরোধী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের পাশে নিয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন। তার মানে কি রাজ্যের বিষয়গুলি নিয়ে বিরোধী দল কংগ্রেসের সব অবস্থান খারিজ হয়ে গেল?’’ একই সওয়াল বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানেরও।
সনিয়া-মমতা বৈঠক বা নৈকট্যের কারণে তাঁদের অস্বস্তির প্রশ্ন উড়িয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও বলছেন, ‘‘লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ছিনিমিনি খেলছে! তার বিরোধিতায় সনিয়া-মমতা একসঙ্গে বসে কোনও সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন। তার সঙ্গে রাজ্য রাজনীতির অঙ্ককে এক করে দেখা উচিত নয়।’’ নিট-জেইই পিছনোর দাবিতে বুধবারই এসএফআইয়ের ডাকে টুইট-কর্মসূচিতে শামিল হয়েছিলেন সুজনবাবুরাও। তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সনিয়ার ডাকে বিজেপি-বিরোধী কোনও প্রশ্নে একসঙ্গে সরব হয়েছেন মমতা এবং সীতারাম ইয়েচুরিও।
তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য রাজ্যের কংগ্রেসকে নিয়ে ভাবতে নারাজ। দলের নেতা ফিরহাদ হাকিমের কটাক্ষ, ‘‘বাংলায় কংগ্রেস ও সিপিএম একে অপরের কাঁধে ভর দিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে! এখানে কংগ্রেস কী করবে, তাতে কিছুই এসে যায় না। তবে বিজেপি-বিরোধিতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই যে নির্ভরযোগ্য মুখ, সনিয়া গাঁধীরা তা জানেন।’’ বিরোধী দলনেতা মান্নানের আবার পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘জাতীয় স্তরে বিরোধী ঐক্য সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। কিন্তু এ রাজ্যে তৃণমূলই যে বিজেপিকে ডেকে এনে জমি করে দিয়েছে এবং কংগ্রেসকে ভেঙেছে, তা কারওরই অজানা নয়!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy