Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
SSKM Hospital

‘ছেলেকে হারিয়েছি, ওর বন্ধু যেন সুস্থ হয়ে বাড়়ি ফেরে!’

দুই বন্ধু। এক জনের লড়াই শেষ হয়ে গিয়েছে শনিবার ভোরে। অন্য জন, হাসপাতালের কেবিনে শুয়ে এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন ঋষভের বাবা সন্তোষকুমার সিংহ। নিজস্ব চিত্র।

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন ঋষভের বাবা সন্তোষকুমার সিংহ। নিজস্ব চিত্র।

সোমনাথ মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৪:৩২
Share: Save:

দুই বন্ধু। এক জনের লড়াই শেষ হয়ে গিয়েছে শনিবার ভোরে। অন্য জন, হাসপাতালের কেবিনে শুয়ে এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

দু’জনের বাবা-ই সুস্থ করে ছেলেদের বাড়িতে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। এক জন পারলেন না। এ দিন আট বছরের ঋষভের দেহ নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতাল ছাড়ার সময় বাবা সন্তোষকুমার সিংহ কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “ছেলেকে হারিয়েছি। ওর বন্ধু যেন সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফেরে!”

দিব্যাংশুর বাবা গোপীনাথ ভগত এ দিনও হাসপাতাল চত্বরেই ছিলেন। গত কয়েক দিন ধরে সন্তোষ-গোপীনাথদের ঘরবাড়ি হয়ে উঠেছে এই এসএসকেএম চত্বর। ঋষভের মৃত্যুর পর একেবারেই চুপচাপ হয়ে গিয়েছেন গোপীনাথ। ভেজা চোখে বললেন, “আমার ছেলে বন্ধু হারাল। দু’জনে সুস্থ শরীরে বাড়ি ফিরলে ভাল লাগত।”

ছেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর, ময়নাতদন্তের জন্যে অপেক্ষা না করে সরাসরি দেহ বাড়ি নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন সন্তোষ। পরে পরিজনেরা বুঝিয়ে বলায় ময়নাতদন্তে রাজি হন শ্রীরামপুর পুরসভার ওই কাউন্সিলর।

আরও পড়ুন: আট দিনের লড়াই শেষ, পুলকার দুর্ঘটনায় আহত ঋষভের মৃত্যু

টানা আট দিন ধরে একস্ট্রা কর্পোরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজেনেশন (ইসিএমও বা একমো) যন্ত্রের মাধ্যমে ঋষভের শরীরে অক্সিজেন পাঠানো হচ্ছিল। তার ফুসফুসে প্রচুর পরিমাণে কাদাজল ঢুকে থাকায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। সেই সংক্রমণের কারণে শরীরের অন্যান্য অঙ্গও কাজ করা বন্ধ করে দেয়। শেষ মাল্টি অর্গ্যান ফেলিওর হয়ে মৃত্যু হয় ঋষভের।

আরও পড়ুন: প্রাক্তন সাংসদ ও শিক্ষাবিদ কৃষ্ণা বসুর জীবনাবসান

এ দিন শ্রীরামপুর থেকে বহু মানুষ হাসপাতালে ভিড় করেছিলেন। ছিলেন সেখানকার সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই দুর্ঘটনার দিন থেকেই তিনি গোটা বিষয়টির মধ্যে ছিলেন। এ দিন কল্যাণ বলেন, “এই দুর্ঘটনা দেখিয়ে দিল রাজ্যে কী ভাবে পুলকার আইনের তোয়াক্কা না করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।’’ বেআইনি পুলকারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানোর পাশাপাশি ঋষভ যে স্কুল পড়ত, তার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন। তিনি বলেন, “স্কুলেরও নজরদারি থাকা জরুরি। সপ্তাহে একবার স্কুল কর্তৃপক্ষেরও দেখা উচিত, তাদের ছাত্ররা কোন পুলকারে যাতায়াত করছে।”

দুঘটনার সময় যারা উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছিলেন, তাঁরাও এ দিন হাসপাতালে এসেছিলেন। শ্রীরামপুরের সাত নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আসতাব হুসেন বলেন, “দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বন্ধুরা মিলে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। একে একে সব শিশুদের আমরা উদ্ধার করি। ঋষভের খোঁজ পাচ্ছিলাম না। ২০ মিনিট কাদাজলের তলায় পড়েছিল বাচ্চাটি। সবার শেষে ওকে উদ্ধার করা হয়। ঋষভের অবস্থা খুবই সঙ্কটজনক ছিল। এত চেষ্টার পরেও ওর দেহ নিয়ে আমাদের ফিরতে হবে ভাবিনি।” উদ্ধার কাজে হাত লাগিয়েছিলেন মহম্মদ বাবলুও। এ দিন তাঁকে মর্গের সামনে বসে অঝোরে কাঁদতে দেখা গেল। কোনও কথা বলতে পারছেন না।

বেলা ১১টার কিছু আগে ঋষভকে নিয়ে শ্রীরামপুরের উদ্দেশে রওনা হন সকলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Car Accident SSKM Hospital Polba Pool Car
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE