Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Mamata Banerjee

লোকাল ট্রেনে ৩ বারের বিধায়ক! তৃণমূল নেতার বৈভবহীন জীবনে মুগ্ধ বারুইপুর

এক যাত্রীকে বলতে শোনা গেল, “উনি তো মাটির মানুষ দাদা। এসইউভি গাড়ি চড়েন না। মাঠে নেমে চাষও করেন।’’

বিধায়ক যখন লোকাল ট্রেনের যাত্রী। নিজস্ব চিত্র

বিধায়ক যখন লোকাল ট্রেনের যাত্রী। নিজস্ব চিত্র

সোমনাথ মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২০ ১৮:৪৪
Share: Save:

লোকাল ট্রেন। ঠাসা ভিড়। তার মধ্যে ঘেঁষাঘেষি করে বসে বছর সত্তরের এক বৃদ্ধ সহযাত্রীদের সঙ্গে গল্পে মেতেছেন। পরনে সাদা ধুতি-পাঞ্জাবী। গলায় মাফলার। হাতে মান্ধাতার আমলের মোবাইল ফোন। ওই বৃদ্ধকে এ ভাবে ট্রেনে সফর করতে দেখে অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, যে মানুষটি তাঁদের পাশে বসে রয়েছেন, তিনি এলাকার বিধায়ক নির্মলচন্দ্র মণ্ডল!

জয়নগর থেকে সোনারপুর— অল্প দূরত্বের এই ট্রেন সফরে যে ভাবে নির্মলবাবু নিত্যযাত্রীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় মেতেছিলেন, তাতে অবশ্য আশ্চর্য হওয়াই স্বাভাবিক।

বারুইপুর (পূর্ব) বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হিসেবে এ বার নির্বাচিত হয়েছেন তৃণমূলের নির্মলচন্দ্র মণ্ডল। এ নিয়ে তিন বারের বিধায়ক তিনি। এ ভাবে নির্মলবাবুকে দেখে উত্তেজনা চেপে রাখতে না ট্রেনে সফররত সোনারপুরের বাসিন্দা গৌতম মল্লিক বলেই ফেলেন, “বৈভব প্রদর্শনের যুগে যেখানে সাধারণ এক কাউন্সিলারের প্রতিপত্তি দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়, সেখানে তিন বারের বিধায়ক কি না ট্রেনে চড়ছেন? তা-ও আবার শাসক দলের!”

আরও পড়ুন:কাউন্সিলর চড়ে এলেন কোটি টাকার গাড়িতে! তোলপাড় কলকাতা পুরসভা

এ কথা শুনে অন্য এক যাত্রীকে বলতে শোনা গেল, “উনি তো মাটির মানুষ দাদা। এসইউভি গাড়ি চড়েন না। মাঠে নেমে চাষও করেন। বাস-অটোতেও চড়তে আগে দেখেছি। সে বার আমিও অবাক হয়েছিলাম। সিন্ডিকেটের জমানায় উনি এক ব্যতিক্রমী চরিত্র।”

জয়নগর থানার এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন নির্মলবাবু। সঙ্গে কোনও নিরাপত্তা রক্ষী নেই। হাতে স্মার্টফোন নেই। বাড়ি ফেরার পথে তাঁকে এ ভাবে দেখে সফর করতে দেখে অনেকে মোবাইলে তাঁর ছবি বন্দি করেছেন। নিত্যযাত্রীদের সঙ্গে কথা বলার সময়, দলের প্রচার করতে দেখা যায়নি। অতি সাধারণ বিষয়ে আলোচনা। ব্যক্তিগত বিষয়ে খোঁজ নেওয়া। এমনই ছিল তার আলাপচারিতার বিষয়। নির্মলবাবুর কথায়: “কত টাকা পাই যে গাড়ি কিনব! দামি মোবাইল নেব! আমি সাধারণ এক জন মানুষ। যেটুকু পাই, তাতে ট্রেনে-বাসে-অটোতে করে যাওয়া যায়। আমি এ ভাবেই যাতায়াত করি। বিধানসভায় যাওয়ার সময়েও শিয়ালদহে ট্রেন থেকে নেমে বাসে করে যাই।”

আরও পড়ুন:আগামিকাল নির্ভয়া কাণ্ডে দণ্ডিতদের ফাঁসি হচ্ছে না

পৈতৃক জমি রয়েছে নির্মলবাবুর। চাষবাসের পাশাপাশি শিক্ষকতাও করেছেন পাঁচ বছর। এর পাশাপাশি সমাজসেবার কাজও করে চলেছেন ছাত্র জীবন থেকে। সেই কংগ্রেস দল করার সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়র সঙ্গে পরিচয়। তার পর তৃণমূলে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরের প্রতাপনগরের বাসিন্দা নির্মলবাবু এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। তিনি বলেন, “সকালে আমি ঘরেই থাকি। যত দ্রুত সম্ভব মানুষের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি। তার পর দলীয় কাজে অথবা সরকারি কাজে বাইরে যেতে হলে বাস-অটো তো রয়েছে। দূরে যেতে হলে ট্রেনে।” তৃণমূল নেতারা তো বটেই বিরোধী দলের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও নির্মলবাবুর বৈভ্যবহীন জীবনযাপনের প্রসংশা করে থাকেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC TMC MLA Mamata Banerjee Nirmal Chandra Mondal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE