Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

৬ লক্ষ ৭০ হাজারের ‘কাটমানি’ ফেরত দিলেন তৃণমূল নেতারা, ‘মধ্যস্থতা’য় বিজেপি

কার কী প্রাপ্য, তা বিজেপি-ই ঠিক করেছে। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসনের কাছে না গিয়ে কেন বিজেপি নিজেই মধ্যস্থতা করল?

 মোহন পালকে (ডান দিকে) টাকা ফেরত দিচ্ছেন তৃণমূল নেতা সুনীল সাহা। রবিবার তুফানগঞ্জের অন্দরান ফুলবাড়ি পঞ্চায়েতে। নিজস্ব চিত্র

মোহন পালকে (ডান দিকে) টাকা ফেরত দিচ্ছেন তৃণমূল নেতা সুনীল সাহা। রবিবার তুফানগঞ্জের অন্দরান ফুলবাড়ি পঞ্চায়েতে। নিজস্ব চিত্র

সঞ্জীব সরকার 
তুফানগঞ্জ শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৯ ০৩:১২
Share: Save:

কোচবিহারের তুফানগঞ্জ এলাকার কয়েক জন তৃণমূল নেতা ‘কাটমানি’ বাবদ নেওয়া মোট ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা রবিবার বিজেপি-র ‘মধ্যস্থতা’য় ফেরত দিলেন। অভিযোগ, কারও কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘরের জন্য ১০ হাজার টাকা ‘কাটমানি’ নেওয়া হয়েছিল, কারও কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে কেঁচো সার প্রকল্প, কলা গাছের চারা বিতরণ বা একশো দিনের কাজের জন্য। প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের কথা বলেও টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাতে নাম জড়িয়েছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষেরও। রবিবাবুর অবশ্য দাবি, ‘‘আমি ওই অঞ্চলের কোনও তৃণমূল নেতাকে চিনি না। এ সবই বিজেপির চক্রান্ত।’’

বিজেপির তুফানগঞ্জ বিধানসভার সংযোজক উৎপল দাস জানান, অনেকেই তাঁদের কাছে গিয়ে তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘তাই আমরাই মধ্যস্থতা করে ওই নেতাদের কাছ থেকে টাকা ফেরত নিয়ে যাঁর যা প্রাপ্য মিটিয়েছি।’’ কার কী প্রাপ্য, তা বিজেপি-ই ঠিক করেছে। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসনের কাছে না গিয়ে কেন বিজেপি নিজেই মধ্যস্থতা করল? জেলা বিজেপির সভাপতি মালতী রাভা বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে সবাইকে বলব কাটমানির টাকা ফেরত নিন, সেই সঙ্গে তৃণমূলের ওই নেতাদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগও করুন।’’

অভিযোগ, তুফানগঞ্জ ১ পঞ্চায়েত সমিতির এক সদস্যার স্বামী অতুলচন্দ্র বর্মণ এবং আরও চার স্থানীয় তৃণমূল নেতা আন্দোরান-ফুলবাড়ি ১ পঞ্চায়েতের নানা জনের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় কাটমানি নিয়েছেন। এ দিন তাঁরা ২০ জন বাসিন্দাকে মোট চার লক্ষ দশ হাজার টাকা ফেরত দেন। অতুলবাবু বলেন, ‘‘দলের জন্যই সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলাম। সেই টাকা ফেরত দিলাম।’’

এ দিনই, বারোকোদালি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার একটি বুথের তৃণমূল সভাপতি মুসকেত আলির কাছ থেকে বিজেপি দু’লক্ষ ষাট হাজার টাকা আদায় করে অনেকের হাতে তুলে দেয়। মুসকেত বলেন, ‘‘দলের জন্যই টাকা তুলেছিলাম। এখন নেতারা সরে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে আমাকে সমস্ত টাকা ফেরত দিতে হল।’’ কোচবিহার জেলার তৃণমূলের সভাপতি বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ বলেন, ‘‘বিষয়গুলো জানা নেই। তবে তৃণমূলে থেকে কেউ অন্যায় করলে বরদাস্ত করা হবে না।’’

এ দিনই কাটমানির টাকা সব থেকে বেশি মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ঢুকেছে বলে অভিযোগ করলেন ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহ। মুখ্যমন্ত্রীর নাম না করে তিনি বলেন, ‘‘সারদার টাকা, নারদের টাকা, রোজভ্যালির টাকা তো দিদিমণির কাছ থেকে চাইতে হবে! কারণ সেই হাজার হাজার কোটি কাটমানি তো আপনার বাড়িতে গিয়েছে।’’

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘তৃণমূলের নেতারা যে কাটমানি নেন, তা আমরা অনেক দিন ধরেই বলছি। এখন টাকা ফেরত দিয়ে তাঁরা প্রমাণ করছেন, আমাদের অভিযোগ সত্য।’’ তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব অবশ্য টাকা ফেরতের বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Corruption Bribe TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE