উপসর্গহীন কোভিডে আক্রান্ত ছিলেন প্রদীপ ঘোষ। ফাইল ছবি।
ফের শিল্প-সংস্কৃতির আঙিনায় কোভিডের ছায়া। উপসর্গহীন করোনা সংক্রমণে চলে গেলেন বিশিষ্টি আবৃত্তিকার, বাচিক শিল্পী প্রদীপ ঘোষ। বয়স হয়েছিল আনুমানিক ৭৫ বছর। শুক্রবার ভোর রাতে যোধপুর পার্কে নিজের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
প্রদীপ ঘোষের মৃত্যুর খবরে স্মৃতি ভারাক্রান্ত ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘‘কাজী সব্যসাচী যখন মধ্যগগনে, সেই সময়েই আবৃত্তির দুনিয়ায় তরুণ তুর্কী প্রদীপ ঘোষ। বয়েজ ওন লাইব্রেরি হলে বাবা নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর আবৃত্তি শোনাতে। প্রদীপদার কণ্ঠস্বর, বলার ভঙ্গি, উচ্চারণের স্পষ্টতা আর ব্যক্তিত্ব মুগ্ধ করেছিল। আরও দু’টি জিনিস ওই দিনই আকৃষ্ট করেছিল আমায়, ওঁর ব্যক্তিত্বে মাখামাখি সৌন্দর্য আর এঁকে অটোগ্রাফ দেওয়া।’’
প্রবীণ বাচিক শিল্পী দেবাশিস বসুর কথায়, একজন সরকারি চাকুরে এতখানি সংস্কৃতিমনস্ক, প্রদীপ ঘোষকে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। কাজী সব্যসাচীর পরে তাঁর কণ্ঠে 'কামাল পাশা' বা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'আফ্রিকা' জনপ্রিয়তার চূড়া স্পর্শ করেছিল। স্ত্রী চলে যাওয়ার পরে মানসিক দিক থেকে একা হয়ে পড়েছিলেন বাচিক শিল্পী। দেবাশিস বসু জানালেন, সহধর্মিনীকে ছাড়া কোনও দিন কোনও অনুষ্ঠান প্রদীপ ঘোষ করেননি। তাই, নিঃসঙ্গ আবৃত্তি শিল্পী শেষের দিকে ভুগেছেন নানা বার্ধক্যজনিত সমস্যায়।
প্রবীণ আবৃত্তিকারের প্রয়াণে স্মৃতিমেদুর জগন্নাথ বসুও। তাঁর স্মৃতিচারণায় উঠে এল প্রদীপ ঘোষের সঙ্গে কাজী সব্যসাচীর অন্তরঙ্গতা। ছয়ের দশকের শেষের দিক থেকে এক মঞ্চে এক কবিতা ভাগাভাগি করে বলতেন কাজী সব্যসাচী এবং প্রদীপ ঘোষ। নজরুলপুত্র হয়তো কোনও কবিতার মুখরা আবৃত্তি করে বলতেন, ‘বাকি শোনাবেন প্রদীপ’। এর পরেই সভাগৃহে রিনরিন করে বাজত প্রদীপের গলা।
জগন্নাথ বসু আরও জানালেন, অসাধারণ কণ্ঠের অধিকারী না হয়েও অদ্ভুত দক্ষতায় নিজের স্বর ব্যবহার করতে জানতেন প্রদীপ। মাইকে একেবারে মুখ ঠেকিয়ে আবৃত্তি করতেন অনায়াসে। যা কেউ কোনও দিন করেননি।
সেই বিশেষ ভঙ্গিমাই অমর করেছে আবৃত্তিকারের কণ্ঠে কাজী নজরুল ইসলামের ‘আমার কৈফিয়ৎ’ বা বুদ্ধদেব বসুর ‘জোনাকি’-র মতো কবিতা।
আরও পড়ুন: করোনা ঠেকাতে ক্লাবগুলির দায়িত্ব অনেক: মুখ্যমন্ত্রী
আরও পড়ুন: পুজো কমিটিগুলিকে রাজ্যের অনুদান দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন হাইকোর্টের
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy