Advertisement
E-Paper

কলকাতাতেই রয়েছে ভারতের প্রাচীনতম নিলামঘর!

রাসেল স্ট্রিটের ‘দ্য রাসেল এক্সচেঞ্জ’-এ প্রতি রবিবার এখনও ভিড় করেন মানুষ। নিলামে ওঠে পুরনো গ্রামোফোন, ঝাড়বাতি, পালঙ্ক। সত্যজিৎ রায় এই দোকানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে তাঁর ছবির জন্য পছন্দসই জিনিস বাছতেন।কলকাতার ধনী ও অভিজাত বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগের সুবাদে আবদুল মাজিদ বুঝলেন, ইংরেজদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও ফার্নিচারের প্রতি দারুণ আকর্ষণ এদেশীয়দের মধ্যে। কিন্তু শুধু সাধ থাকলেই তো হবে না। সে সব জিনিস তাঁদের নাগালের বাইরে। এ দিকে ক্রমাগত বদলি-সহ নানা কারণে কলকাতায় আসা-যাওয়া লেগেই ছিল তৎকালীন শাসকদের। যাঁরা চলে যাচ্ছেন, নিজেদের সাধের আসবাবপত্রগুলি নিয়ে পড়েছেন মহা চিন্তায়।

সায়ন্তনী সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৮ ০০:১০
স্মৃতিময়: রাসেল এক্সচেঞ্জ-এর বিরাট ঘর জুড়ে এমনই নানান জিনিস নিলামে ওঠার অপেক্ষায়।

স্মৃতিময়: রাসেল এক্সচেঞ্জ-এর বিরাট ঘর জুড়ে এমনই নানান জিনিস নিলামে ওঠার অপেক্ষায়।

একটা নতুন সুটকেস, খুব ভাল কন্ডিশন। মাত্র এক হাজার টাকা! গলাটা একটু চড়ল, ‘‘এক হাজার টাকা!’’ পিছন থেকে এক জন বললেন, ‘‘দু’হাজার টাকা।’’ পুরনো জিনিসের গন্ধমাখা বিরাট দোকানটার মাঝখানে ডায়াস-এর ওপর রাখা উঁচু চেয়ারে বসা মহিলা টেবিলে হাতুড়িটা ফেলতে গিয়েও ফেললেন না। ‘‘তিন হাজার টাকা!’’ বলে উঠলেন আর এক জন। ‘‘সাড়ে তিন,’’ এ বার অন্য গলা! ‘‘ছয় হাজার।’’ ক্ষণিক নৈঃশব্দ্য। টেবিলে হাতুড়িটা মারলেন মহিলা। তৃপ্তির হাসি হেসে বললেন, ‘‘ইট শুড বি লাইক দিস। এই না হলে অকশন!’’

ঝাঁ চকচকে এলাকায় রাস্তার উপরে দোকানটা একটু যেন বেমানান। মলিন সাইনবোর্ডে লেখা ‘দ্য রাসেল এক্সচেঞ্জ’। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই, হাজার ঝড়ঝাপটা সহ্য করে কী ভাবে দেশের প্রাচীনতম অকশন হাউসটি আজও প্রাণপণে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই লড়ে চলেছে। পুরনো অকশন হাউসগুলি ঝাঁপ ফেলে দিয়েছে কবে। আঠারো-উনিশ শতকের জনপ্রিয় অকশন হাউস ‘ম্যাকেঞ্জি লায়াল এন্ড কোং’— আফিম নিলামের জন্য যা বিখ্যাত ছিল— প্রথমে বন্ধ হয়ে যায়। পরে আস্তে আস্তে বন্ধ হয় রাসেল স্ট্রিটের ‘ডালহৌসি এক্সচেঞ্জ’, পার্ক স্ট্রিটের ‘চৌরঙ্গী সেলস ব্যুরো প্রাইভেট লিমিটেড’ এবং ‘ভিক্টর ব্রাদার্স’, ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের ‘স্টেইনার এন্ড কোং’-এর মতো বড় বড় অকশন হাউস। ধুঁকতে ধুঁকতে বেঁচে রইল রাসেল স্ট্রিটের তিনটি দোকান। তার মধ্যে ‘সুমন এক্সচেঞ্জ’ এবং ‘মডার্ন এক্সচেঞ্জ’ অনেক পরের দিকে তৈরি। নিয়মিত অকশন এরা বন্ধ করে দিয়েছে বহু দিন। ব্যতিক্রম ‘রাসেল এক্সচেঞ্জ’।

১৯৪০ নাগাদ আবদুল মাজিদ নামে বেরিলির এক যুবক তুখড় ব্যবসায়িক বুদ্ধি আর পুরনো জিনিসের প্রতি আকর্ষণ সম্বল করে কলকাতায় পা রাখেন। তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা পৃথিবী জুড়ে। যুদ্ধে জড়িয়েছে ভারতও। টালমাটাল রাজনীতি প্রভাব ফেলেছে অর্থনীতিতেও। কলকাতার ধনী ও অভিজাত বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগের সুবাদে আবদুল মাজিদ বুঝলেন, ইংরেজদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও ফার্নিচারের প্রতি দারুণ আকর্ষণ এদেশীয়দের মধ্যে। কিন্তু শুধু সাধ থাকলেই তো হবে না। সে সব জিনিস তাঁদের নাগালের বাইরে। এ দিকে ক্রমাগত বদলি-সহ নানা কারণে কলকাতায় আসা-যাওয়া লেগেই ছিল তৎকালীন শাসকদের। যাঁরা চলে যাচ্ছেন, নিজেদের সাধের আসবাবপত্রগুলি নিয়ে পড়েছেন মহা চিন্তায়।

এই সব দেখেশুনেই বেরিলির যুবকটির মাথায় অকশন হাউসের ভাবনা খেলে গেল। রাসেল স্ট্রিটে দোকান খুলে বসে, ইংরেজদের থেকে সস্তায় কিনে নিতে লাগলেন বিরাট পিয়ানো, ঝাড়লণ্ঠন, শ্বেতপাথরের টেবিল, নরম গালিচার মতো অজস্র জিনিস। ভেনিশিয়ান বা বোহেমিয়ান গ্লাস এর জিনিস, সতসুমা টি-সেট, অধুনা দুষ্প্রাপ্য ইংল্যান্ডের রয়্যাল ডালটন বোন চায়না, জার্মানির রোসেনথাল চায়না বা নারিটাকের পোর্সেলিনের জিনিসও আসতে লাগল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ইংরেজরা যখন দলে দলে দেশ ছেড়ে যেতে লাগলেন, আক্ষরিক অর্থেই ফুলেফেঁপে উঠল রাসেল এক্সচেঞ্জ। এত দিন দোকানে ইংরেজদের আনাগোনার জন্য দোকান থেকে একটু তফাতেই থাকতেন সাধারণ মানুষ। এ বার স্বপ্নের জিনিসগুলি হাতে পেতে একেবারে ঝাঁপিয়ে পড়লেন তাঁরা।

প্রতি রবিবার নিয়ম করে চালু হল নিলাম। রাসেল স্ট্রিট পার করে পার্ক স্ট্রিট পর্যন্ত চলে যেত দামি গাড়ির সারি। দোকানের বাইরে দল বেঁধে বাবুদের বাড়ি জিনিস নিয়ে যাওয়ার জন্য বসে থাকত কুলির দল। নিলামে পছন্দের জিনিস প্রতিদ্বন্দ্বীর থেকে ছিনিয়ে তৃপ্তমুখে দোকান থেকে বেরিয়ে এসে কুলির মাথায় সে সব চাপিয়ে দিতেন বাবুরা। শুধু ইগোর লড়াইয়েই অনেক সময় সাধারণ জিনিসেরও দাম বেড়ে যেত চড়চড় করে। তার পুরো ফায়দা নিত অকশন হাউস। মাল নিয়ে কুলিরা তা পৌঁছে দিতেন কলকাতার জমিদারবাড়িগুলির দরজায়, কখনও বা স্টেশনে। সেখান থেকে ট্রেনে জিনিস পাড়ি দিত মালদহ, মুর্শিদাবাদ, কোচবিহার বা দার্জিলিং।

আজকের রাসেল এক্সচেঞ্জ সে দিনের রাসেল এক্সচেঞ্জের ছায়ামাত্র। সেই সব সোনালি দিনের কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। এখনও অবশ্য প্রতি রবিবার নিয়ম করে নিলাম হয় এখানে। তবে অকশনে আসা মানুষ আর জিনিসপত্র, দুয়েরই চরিত্র বদলেছে আমূল। রবিবারের এমনই এক দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, ভিড়ে ঠাসা দোকানে পা দেওয়ার প্রায় জায়গা নেই। অন্য দিনের নিঝুম অন্ধকার-মাখা দোকানটা যেন মন্ত্রবলে জেগে উঠেছে। হেলমেট, পুরনো ঘড়ি, সাইড ব্যাগ, ট্রলি ব্যাগ, হকি স্টিক, বাতিল হওয়া ইলেকট্রনিক গ্যাজেট, পোকায় খাওয়া বই-ম্যাগাজিন এমনকি খানদুয়েক পারিবারিক অ্যালবামও বিরাট একটা টেবিলের ওপর ডাঁই করে রাখা। সবই উঠবে নিলামে। বিক্রেতারা জিনিস নিয়ে এলে ভ্যালুয়েশন করে দামের একটা প্রাথমিক ট্যাগ দেয় দোকান। সেই দাম থেকে শুরু হয় নিলাম। জিনিস বিক্রি হলে তার কুড়ি শতাংশ কমিশন নেওয়া হয়। দোকানের লাভ ওইটুকুই।

এখানকার জিনিসপত্র বিচিত্র, বৈচিত্রময় ক্রেতারাও। দেখলে মনে হয় একটা ছোট কলকাতা হঠাৎ হাজির হয়েছে উঁচু খিলানওয়ালা পলেস্তরা-খসা মলিন ঘরটিতে। নিতান্তই নিম্নবিত্ত কিছু মানুষ ঝুঁকে পড়েছে টেবিলের ওপর। নষ্ট হয়ে যাওয়া গ্যাজেটগুলো মেরামত করে ফের বেচে দেবেন এঁরা। কপালজোরে কোনও দামি জিনিস কম দামে পেয়ে যাওয়ার আশায় ইতস্তত ঘুরে বেড়ানো মধ্যবিত্তের দলও আছে। বাড়ির কাজ সামলে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে হাজির বেশ কয়েক জন গৃহবধূও। স্টিলের বাসনকোসন, ঘড়ি, ঘর সাজানোর ছোট জিনিস বেশ সস্তায় পাওয়া যায় এখানে। উচ্চবিত্ত স্বামী-স্ত্রী, বেশ কিছু অল্পবয়সি ছেলেমেয়ে হাজির নিতান্তই কৌতূহলে। হঠাৎ একটা শান্তিনিকেতনি ব্যাগে চোখ আটকে গেল এক ভদ্রলোকের। প্রয়াত স্ত্রীর ঠিক এমন ডিজাইনেরই একটা ব্যাগ ছিল। দুশো টাকা দিয়ে ব্যাগটা কিনতে পেরে মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেল তাঁর। এক অকৃতদারের নেশা প্লেবয় ম্যাগাজিন পড়া। শতচ্ছিন্ন ম্যাগাজিনগুলি ৫০ টাকায় হস্তগত করলেন। অকশন হাউসে অনেক উচ্চবিত্ত আবার সরাসরি আসেন না। দোকানেরই কোনও পরিচিত কর্মী তাঁদের হয়ে নিলামে দর হাঁকেন। ভিড়ের প্রথম ধাক্কাটা সামলান মাজিদের মেয়ে সরফরাজ বেগম। দেশের প্রথম, এবং একমাত্র মহিলা অকশনিয়র ইনি। এর পরে এসে হাল ধরেন তারই ছোট ভাই আরশাদ সেলিম।

দোকানের অন্য একটা দিক এই ভিড়ভাট্টার দিনেও বড্ড চুপচাপ। অতীতের গন্ধমাখা। দোকানের সাধারণ ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ পা দেন না এখানে। জায়গায় জায়গায় রং চটে যাওয়া গ্রামোফোন, কানন দেবীর গাওয়া গানের দুষ্প্রাপ্য রেকর্ড, সূক্ষ্ম কারুকাজ করা সুবিশাল সেগুন কাঠের পালঙ্ক, প্রাচীন আরামকেদারা, লতাপাতার কাজ করা দেরাজ-আলমারি, চার-পাঁচটা আয়না বসানো ড্রেসিং টেবিল, বেলোয়ারি কাঁচের ঝাড়লণ্ঠন, লণ্ঠন ধরে থাকা নারীমূর্তি, শ্বেতপাথরের টেবিল গা-ঘেঁষাঘেষি করে দাঁড়িয়ে। নিস্তব্ধ। ক্রেতার প্রয়োজন পাল্টে যাওয়ায় এগুলি সরাসরি বিক্রি হয় এখন। কলকাতার যে সব বনেদি বাড়ি ভেঙে তৈরি হয়েছে ঝাঁ-চকচকে ফ্ল্যাট, তাদের বিস্মৃত বনেদিয়ানা এসে জড়ো হয়েছে দোকানের অন্দরে। যে সব বাড়িগুলি এখনও টিকে আছে তার বাসিন্দারাও পুরনো জিনিস বিক্রি করে দিচ্ছেন, জানালেন দোকানের এক কর্মচারী।

মার্বেলের মূর্তি, লণ্ঠন, ঝাড়বাতি।

এই সব জিনিসের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ অনেক। দেখাশোনা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার জন্য আগে প্রচুর কর্মচারী থাকত। বাড়িগুলি থেকে সেই পাট উঠে গিয়েছে। এত বড় বড় আসবাব নতুন প্রজন্মেরও নাপসন্দ। আধুনিক ছিমছাম জিনিস জায়গা করে নিচ্ছে দ্রুত। ছেলেমেয়েরা বিদেশে চলে যাচ্ছে লেখাপড়া বা চাকরির সুবাদে, বাড়ির সব থেকে বয়স্ক মানুষটি মারা যাওয়ার পর তাঁর ব্যবহৃত জিনিসেরও ঠাঁই হচ্ছে নিলামঘরে। এখনকার মানুষের কাছে স্মৃতির থেকে জায়গা আর পয়সার মূল্য অনেক বেশি।

আরামকেদারা

যদিও এ সব আমাদের রুটিরুজি, তাও মাঝে মাঝে আমাদেরই খারাপ লাগে, একটু মনমরা গলায় বললেন কর্মচারীটি। তবে শহরের কোন কোন বনেদি বাড়ি থেকে জিনিস আসে, সে ব্যাপারে মুখ খুললেন না তিনি। মজার ব্যাপার, এক দিকে যখন বনেদি বড়লোকরা এই সব জিনিস বিক্রি করে দেন, অন্য দিকে কিছু নব্য বড়লোক আবার নিজেদের বাড়ি সাজানোর জন্য এগুলিই কিনে নিয়ে যান। বুটিক হোটেল, রেস্তরাঁগুলিতেও এই সব জিনিসের চাহিদা এখন তুঙ্গে। কলকাতার তো বটেই, রাজস্থানের বিভিন্ন হোটেল-হাভেলিগুলিও নিয়মিত খদ্দের। বিভিন্ন সিরিয়াল, পিরিয়ড ফিল্ম বানানোর জন্যও রাসেল এক্সচেঞ্জের এই সম্ভারের সাহায্য লাগে। সত্যজিৎ রায়, সন্দীপ রায় বহু বার এসেছেন এখানে। দোকানের আর এক পুরনো কর্মচারী স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বললেন, বাবার কাছে শুনেছি, ভীষণ খুঁতখুঁতে ছিলেন সত্যজিৎ রায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দোকানে বসে থেকে জিনিসপত্র নেড়েঘেঁটে মনমতো জিনিস নিয়ে যেতেন। ঋতুপর্ণ ঘোষও তাঁর ‘চোখের বালি’, ‘রেনকোট’ ছবির জন্য এই দোকানের শরণাপন্ন হয়েছেন। কিন্তু এখন লড়াইটা আরও কঠিন করে দিচ্ছে বাজার ছেয়ে যাওয়া চায়না প্রোডাক্ট। নিউমার্কেটে হুবহু এই নকশা আর ডিজ়াইনের চাইনিজ় জিনিস পাওয়া যাচ্ছে এখন। সেগুলো সস্তা, সহজলভ্য। ফলে সেই দিকে মানুষ ঝুঁকছে বেশি।

গ্রামোফোন

লড়াইটা অবশ্য সোজা ছিল না কোনও দিনই, বলছিলেন আরশাদ সেলিম। নিজেকে সেলিম জুনিয়র বলতে বেশি পছন্দ করেন। ‘অকশনিয়র’-এর চেয়ারে বসেন মাত্র সতেরো বছর বয়সে। দেশের কনিষ্ঠতম অকশনিয়র ছিলেন তিনি। দোকানের প্রতিটি খুঁটিনাটি তখন তাঁর নখদর্পণে। কিছু দিনের মধ্যেই ব্যবসায় শুরু হল দারুণ মন্দা। তত দিনে বহু বছর বিদেশে কাটিয়ে দেশে ফিরেছেন বড় ভাই আনোয়ার সেলিম। কলকাতার বড় বড় অকশন হাউসগুলি একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তখন। খাঁড়া ঝুলছে রাসেল এক্সচেঞ্জের মাথাতেও। বিদেশের ব্যবসায়িক ধ্যানধারণা আর কলকাতায় দোকান চালানোর অভিজ্ঞতা নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে সংঘাত হল। রাসেল এক্সচেঞ্জে মূলত যা কিছু বিক্রি হয় সেগুলি সবই পিরিয়ড পিস। এগুলিকে ‘অ্যান্টিক’ বলা যায় না। কারণ কোনও জিনিসকে অ্যান্টিক হতে হলে তাকে কমপক্ষে ১০০ বছরের পুরনো হতে হবে। এই সব জিনিস রাসেল এক্সচেঞ্জে বিক্রি হয় না, জানালেন আরশাদ।

সরফরাজ বেগম ও আরশাদ সেলিম

এমন জিনিস বিক্রির প্রস্তাব কি আসে না? প্রায়ই আসে। কখনও বহুমূল্য পুরনো রোলেক্স ঘড়ি, কখনও বা বিখ্যাত মনীষীদের চিঠি বিক্রি করতে চান অনেকে। ঐতিহাসিক মূল্য আছে, এমন জিনিসের সন্ধান পেলে দোকানের তরফ থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। এই ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হওয়ার পরেই কর্মচারী এবং সরাসরি বিক্রির বিভাগ ঢেলে সাজানো হয়েছিল। জিনিসপত্র ভাড়া দেওয়াও শুরু হয়েছিল। ‘‘আমরা দুজনেই দুজনের কথা কিছু কিছু মানলাম, কারণ মতান্তর হলেও আমাদের উদ্দেশ্য ছিল একটাই— এই ঐতিহ্য যে ভাবেই হোক বাঁচিয়ে রাখা। এর পরও নানা ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে দোকান। অনেক বার ভেবেছি, এ বার বোধহয় আর পারব না। সব শেষ হয়ে গেল। আবার দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই শুরু করেছি। এই যুদ্ধটা সহজে হারব না আমরা।’’ সেলিম জুনিয়রের গলায় প্রত্যয়। রাসেল এক্সচেঞ্জের ঐতিহ্য ও ব্যবসা নিয়ে দুই ভাইয়ের দৃষ্টিভঙ্গির তফাত, তাঁদের মিঠেকড়া সম্পর্ক, এই সব নিয়েই লন্ডনের তথ্যচিত্র নির্দেশক এডওয়ার্ড ওলস্‌ ‘দি অকশন হাউস, আ টেল অব টু ব্রাদার্স’ নামে তথ্যচিত্র তৈরি করেছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখানো হয়েছে তা।

বাইরের পৃথিবীটা আমূল বদলে গেলেও গত ৭৮ বছর ধরে শক্ত মুঠিতে সময় ধরে রাখার যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে রাসেল এক্সচেঞ্জ। ধুলোমাখা পরি, বিবর্ণ আসবাব এখন বিকিয়ে যায় এক দামে। ১০০ টাকার মিক্সির জন্য কাবারিওয়ালা, রিকশাওয়ালা আর গৃহবধূদের মধ্যে লড়াই চলে। প্রতি রবিবার রাসেল স্ট্রিটের ফাঁকা ফুটপাত ধরে চলতে চলতে শোনা যায়, শ্রীহীন একটা দোকানের ভিতর থেকে ভেসে আসছে মাইকের গমগমে স্বর, ‘বোলি লাগানোর’ আওয়াজ, হাতুড়ির গর্বিত আস্ফালন। আর দেখা যায় একটা ব্ল্যাকবোর্ড, যেখানে গত সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে লেখা হয়ে আসছে— ‘অকশন হিয়ার টুডে’।

Auction House India Russel Exchange
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy