Advertisement
E-Paper

ভিড় আছে, গান নেই

বর্ষশেষের পার্ক স্ট্রিট। ষাটের দশকেও এই রাতে গানে গানে আলো ঝরাতেন প্যাম ক্রেন, লুই ব্যাঙ্কস, ঊষা উত্থুপ। ক্যাবারে নাচে মাতিয়ে দিতেন মিস শেফালি। এখন শুধুই তালপাতার ভেঁপু বাজানো ধুমধাড়াক্কা ভিড়।বর্ষশেষের পার্ক স্ট্রিট। ষাটের দশকেও এই রাতে গানে গানে আলো ঝরাতেন প্যাম ক্রেন, লুই ব্যাঙ্কস, ঊষা উত্থুপ। ক্যাবারে নাচে মাতিয়ে দিতেন মিস শেফালি। এখন শুধুই তালপাতার ভেঁপু বাজানো ধুমধাড়াক্কা ভিড়।

অময় দেব রায়

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:০০
লাস্য: ক্যাবারে নাচের ফ্লোরে কিংবদন্তি মিস শেফালি।

লাস্য: ক্যাবারে নাচের ফ্লোরে কিংবদন্তি মিস শেফালি।

নতুন বার-কাম-রেস্তরাঁ খুলবে কলকাতায়। তাই জার্মানি থেকে আনা হয়েছে ইন্টিরিয়র আর্কিটেক্ট। সাদা দেওয়াল, লাল ল্যাম্প শেড, কাঠের ফ্রেমে সুন্দর নকশা করা ছবি। কিন্তু মালিক শিবজি ডি কোঠারির তাতেও মন ভরল না। নির্দেশ দিলেন, তাঁর সাধের এই নতুন রেস্তোরাঁ মোকাম্বো-র জন্য এক জন সুন্দরী গাইয়ে চাই। ১৮ বছরের এক তরুণী চৌরঙ্গির ছোটখাটো বার-এ গান গেয়ে বেড়াত। অল্প সময়েই বেশ নাম কুড়িয়েছে। ডাক পড়ল মোকাম্বোতে। এক ঝলক দেখে, প্রাণবন্ত কণ্ঠ শুনে আর চোখ ফেরানো গেল না। শিবজি সরাসরি জিজ্ঞেস করলেন মেয়েটি নতুন বারে গান গাইতে রাজি কি না! পলকে উত্তর এল, হ্যাঁ। মোকাম্বোর প্রথম ‘ক্রুনার’ বা বার গায়িকা হিসাবে ১৯৫৫ সালেই তাই চাকরি পেয়ে গেল সোনালি চুলের সেই অষ্টাদশী। মোকাম্বোর বর্তমান মালিক, শিবজির ছেলে নীতিন কোঠারির কথায়, ‘‘অমন লাস্যময়ী নারী খুব কম দেখেছি।’’ ধীরে ধীরে সেই অষ্টাদশীই হয়ে উঠল পার্ক স্ট্রিটের হৃৎস্পন্দন। কলকাতার রাত-কাঁপানো জ্যাজ সম্রাজ্ঞী প্যাম ক্রেন।

শুধু গাইলে হবে না। সাজপোশাকও হওয়া চাই সর্বাধুনিক। প্যাম ক্রেনকে প্রস্তুত করে তুলতে কোনও ত্রুটি রাখলেন না বার কর্তৃপক্ষ। কিটি ব্রানান নামের এক ইহুদি মহিলাকে তাঁর ফ্যাশন ডিজাইনার করা হল। মৎস্যকন্যার মতো এক ধরনের ফোলানো গাউন ছিল তাঁর প্রিয় পোশাক। প্রায় হাফ ডজন ‘ফিন টেল’ বানানো হল স্বর্ণকেশীর জন্য। রাখা হল আলাদা হেয়ার ডিজাইনার। প্রায় এক বছর ধরে তাঁকে প্রস্তুত করে ‘মোকাম্বো’ দরজা খুলল পরের বছর, ’৫৬ সালে। এই শহর জানত, বার-গায়িকা শুধু মদিরাবিভোর দর্শকদের সামনে গানের জন্য নন। পোশাক, লাস্যময় বিভঙ্গ, চুলের কায়দা, সব মিলিয়েই আলো ছড়াবে তাঁর উপস্থিতি।

প্যাম ক্রেনকে ঘিরে মোকাম্বোতে তখন রোজ সাজ সাজ রব। এক দিকে সিক্স-পিস লাইভ ব্যান্ড। ব্যান্ড লিডার আঁতো মেনেজেস। তাঁদের সঙ্গে জুড়ে গেলেন স্বর্ণকেশী গায়িকা। রোজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় শুরু হত গান, চলত রাত একটা-দেড়টা অবধি। জ্যাজ, পপ, ব্লুজ... টানা দশ বছর প্রতি রাতে প্যাম ক্রেনের স্বপ্নের মতো গলায় বিভোর হয়ে থাকত মোকাম্বো।

এর পর এক সময় কলকাতা ছাড়লেন প্যাম। ‘ইন্ডিয়া ফয়েলস’-এর তৎকালীন ম্যানেজিং ডিরেক্টর জন ডানকানকে বিয়ে করে চলে গেলেন ইউরোপ। কিন্তু বিয়েটা টিকল না। কন্যা আইলিনকে নিয়ে গায়িকা আবার ফিরে এলেন নিজের শহর কলকাতায়। সত্তরের দশকে ফের শুরু হল প্যাম ক্রেনের ম্যাজিক। এ বার মোকাম্বোর অনতিদূরে ব্লু ফক্স। এখানে এসেই পরিচয় হল কিংবদন্তি বাজিয়ে লুই ব্যাঙ্কসের সঙ্গে। যোগ দিলেন লুইয়ের দল ‘ব্যাঙ্কস ব্রাদারহুড’-এ। আগের তুলনায় প্যাম এখন আরও শাণিত। আরও নিখুঁত। ব্লুজ, ফক্সট্রট, ওয়াল্টজ-এও ছিলেন সমান পারদর্শী। দ্বিতীয় বিয়ে কলকাতায়, ডন সায়গলের সঙ্গে। প্যাম ক্রেনের গান, লুই ব্যাঙ্কসের গিটার আর ব্রাজ গনজালভেস-এর স্যাক্সোফোন শোনার জন্য তখন মাঝেমধ্যেই ব্লু ফক্সে হানা দিতেন আর ডি বর্মন। এসেছিলেন দেব আনন্দও! পার্ক স্ট্রিটের সেই তরুণী গায়িকার গানে তখন দেব ও আর ডি এতই মুগ্ধ যে, ছবিতে গান গাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হল তাঁকে। তার পরই ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম।’ বাকিটা ইতিহাস।

বেটি কার্টারের গান গাইতে ভালবাসতেন প্যাম। মুম্বইয়ের ‘জ্যাজযাত্রা’য় গাইতে এসেছেন বেটি, দর্শকাসনে প্যাম। অনুষ্ঠানশেষে লুই ব্যাঙ্কস প্যামকে ব্যাকস্টেজে নিয়ে গিয়ে আলাপ করিয়ে দিয়েছেন বেটির সঙ্গে। খানিক কথাবার্তার পর বেটি জড়িয়ে ধরেছেন প্যামকে। ভারতবর্ষেও যে কেউ তাঁর গান গায়, বিশ্বাসই করতে পারছেন না বেটি। পর দিন দুই গায়িকা একসঙ্গে লাঞ্চে, শপিং-এ। সেই পার্ক স্ট্রিট, সেই প্যাম ক্রেন আজ শুধুই স্মৃতি। ১৪ অগস্ট ২০১৩, চিরবিদায় নিলেন। তাঁকে সমাধিস্থ করা হল এই কলকাতাতেই।

ওবেরয় গ্র্যান্ডে কাজ করতেন ইলেস জোসুয়া আর ওমপ্রকাশ পুরি। তাঁরা কিছু দিন আগেই ট্রিঙ্কা আর ফ্লুরি-র কাছ থেকে পার্ক স্ট্রিটের টি-রুমটি কিনেছেন। ইতিমধ্যে জোসুয়া বেড়াতে গেলেন মহীশূরে। ঊষা আইয়ার নামে এক তরুণীর গান ভাল লেগে গেল। নিয়ে এলেন কলকাতায়। টি-রুমটিও বদলে গেল বার-কাম-রেস্তরাঁয়। নাম হল ট্রিঙ্কা’জ। ১৯৬৮, দক্ষিণ ভারতীয় শাড়িতে দুলে উঠল ট্রিঙ্কা’জ। ঊষা আয়ার পরে এ শহরেরই পাকাপাকি বাসিন্দা হবেন, শুধু বিবাহসূত্রে নামটা বদলে যাবে: ঊষা উত্থুপ।

ঊষা তখন কলকাতায় সবে এসেছেন। লোকে তাঁর গান শুনে প্যাম ক্রেনের নাম করে। কে এই প্যাম ক্রেন? দেখা করার ইচ্ছে হল। এক দিন শো শেষে ট্রিঙ্কা’জ থেকে সোজা হাঁটা লাগালেন ব্লু ফক্সের দিকে। প্যাম ক্রেন তখন গাইতে উঠছেন। বাদামের মতো চোখ। সোনালি চুল। কালো গাউন পরা ছিপছিপে শরীর মাদকতায় ভরপুর। এক ঝলক দেখেই প্যাম ক্রেনের ফ্যান হয়ে গেলেন ঊষা। উত্তরসূরি ঊষার কথায়, ‘‘ক্রেনের ড্রেস সেন্স ছিল অনবদ্য। এক কথায় তিনি এক জন কমপ্লিট পারফর্মার।’’ তখন ট্রিঙ্কা’জ-এ বাজাত ‘ট্রোজান্স’ নামে একটা দল। তাদের প্রধান মিউজিশিয়ান ছিলেন বিড্ডু। ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র গৌতম চট্টোপাধ্যায় জীবদ্দশায় প্রায়ই এক স্মৃতিচারণ করতেন। অশান্ত সত্তরের দশক। ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র গৌতম ও বন্ধুরা পার্ক স্ট্রিটে লেননের ‘ইমাজিন দেয়ার ইজ নো হেভেন’ গাইতে গাইতে ফিরছেন। পার্ক স্ট্রিটে তখন এক নতুন পঞ্জাবি গায়কও সাড়া জাগাচ্ছেন, অমৃক সিংহ অরোরা।

প্যাম ক্রেন। যাঁর রূপে আর গানের সুরে বুঁদ হয়ে থাকত সে কালের পার্ক স্ট্রিট

বন্ধুবান্ধব নিয়ে মোকাম্বো কিংবা ট্রিঙ্কা’জ-এ মাঝেমধ্যেই হানা দিতেন মিস শেফালি। রোজ রাতে ফিরপো’জ-এ তাঁর পারফরম্যান্স নিয়ে শোরগোল পড়ে যেত। এক দিনের কথা আজও ভুলতে পারেন না শেফালি। সে দিন মোকাম্বো থেকে ফিরপো’জ-এ গিয়েছেন। নাচগান হয়েছে প্রচুর। দুদ্দাড়িয়ে ফিরতে গিয়েও দেরি। কোনও মতে স্ল্যাক্সটা খুলে, ঘাসের ঘাঘরা আর বিকিনি পরে সোজা ফিরপো’জ-এর ফ্লোরে।

হাওয়াইয়ান নাচের ফ্লোরে প্রথমেই তিনি সুইং করতেন। সে দিন সুইং করতেই বুঝলেন, নীচ দিয়ে ঠান্ডা বাতাস ঢুকছে। ব্যাপার কী? তাড়াহুড়োয় স্ল্যাক্স খোলার সময় নীচের অন্তর্বাসও খুলে ফেলেছেন, কিন্তু হাওয়াইয়ান নাচের অন্তর্বাস পরেননি! এ তো মহাবিপদ! নাচ আর স্ট্রিপটিজের ককটেল হয়ে গেল যে! জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন শেফালি। কোনও রকমে নাচ সেরে দে ছুট। কী সব দিন গেছে! এখনও ভাবলে চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে পার্ক স্ট্রিটের রাতপরির।

প্যাম ক্রেনের আর এক দোসর লুই ব্যাঙ্কসের জীবনও এগিয়েছে অদ্ভুত গতিতে। বাবা বাজাতেন ট্রাম্পেট। ১৯৪০ সালে কাঠমান্ডু থেকে কলকাতায় আসেন তিনি। যোগ দেন এক ইউরোপিয়ান ব্যান্ডে। পরে ফের কাঠমান্ডু। ছেলে ডম্বর বাহাদুরের ছোটবেলা থেকে গানবাজনার শখ। বাবার দেখাদেখি ১৩ বছর বয়সে গিটার, ট্রাম্পেটে হাতেখড়ি। ছেলের নাম দিলেন বদলে। ডম্বর বাহাদুর থেকে লুই ব্যাঙ্কস। তাতেই নাকি আত্মবিশ্বাস দ্বিগুণ বেড়ে গেল। গিটার, ট্রাম্পেটের পাশাপাশি পিয়ানো শিখতে শুরু করলেন। কলেজ শোয়ে দার্জিলিং‌ থেকে কাঠমান্ডু। বাবার ব্যান্ডে হাত মকসো করে পাড়ি দিলেন কলকাতা। শুরুতে কিছু দিন হোটেল হিন্দুস্তান। তার পরই ব্লু ফক্স!

আচমকা লাইভ এন্টারমেন্টের উপর চাপানো হল বিপুল কর। অচিরেই বিভিন্ন রেস্তরাঁয় লাইভ গানবাজনা বন্ধ হয়ে গেল। যাঁরা গাইতেন তাঁরা অনেকেই কলকাতা ছাড়লেন। ব্যান্ডগুলি ভেঙে ছত্রখান। যন্ত্রীরা বেরোলেন অন্যত্র। অভিমানী ব্যাঙ্কসও শহর ছাড়লেন। কলকাতাকে ভালবেসে এক সময় আর ডি বর্মনের প্রস্তাব ফিরিয়েছিলেন। এ বার নিজেই আবেদন জানালেন। সানন্দে বম্বেতে ডেকে নিলেন আর ডি। ১৯৮৮-তে ব্যাঙ্কসের ‘মিলে সুর মেরা তুমহারা’ ছড়িয়ে পড়ল লোকের মুখে মুখে। পেলেন জাতীয় পরিচিতি।

অভিমানে শহর ছেড়েছিলেন লুই ব্যাঙ্কস। কার্লটন কিটো তা পারেননি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের স্যাঁতসেঁতে দু’কামরার ঘরটাই ছিল তাঁর প্রিয় আস্তানা। নন্দন বাগচীর কথায়, ‘‘লোকটা নোবেল পেতে পারতেন। অনেক কিছু দিয়েছেন। আমরা কিছু ফিরিয়ে দিতে পারিনি।’’

পার্ক স্ট্রিটের জ্যাজ কিং কিটোর ১০ হাজারের উপর নোটেশন ছিল মুখস্থ। জ্যাজ নিয়ে কেউ কোনও সমস্যায় পড়লে সঙ্গে সঙ্গে উপায় বাতলে দিতেন। দীর্ঘ দিন ‘ক্যালকাটা স্কুল অব মিউজিক’-এ পড়িয়েছেন।

পার্ক স্ট্রিট তখন ক্রমশ জৌলুস হারাচ্ছে। লুই ব্যাঙ্কস এক বার বললেন, ‘‘আমার সঙ্গে এস। দেখবে, জীবনটা বদলে গেছে।’’ কিটো বললেন, ‘‘আমি কলকাতাতেই ভাল আছি। পার্ক স্ট্রিটের সমস্ত রেস্তরাঁয় বাজিয়েছি। এই স্মৃতি নিয়েই চলে যেতে চাই।’’

আর এক জনের কথা না বললে ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাঁর কাজ ছিল হারমোনিকা বা মাউথ অর্গান বাজানো। বন্ধুদের ব্যান্ডে হঠাৎ এক দিন মহড়ায় এসে হাজির এক স্যাক্সোফোনবাদক। তাঁর বাজনায় মুগ্ধ হয়ে মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেন, হারমোনিকা নয়, স্যাক্সোফোন বাজাবেন এ বার থেকে। তিনি পল মল্লিক।

কলকাতায় আসতেন পল স্যাক্সোফোন শিখতে। এ ভাবেই এক দিন ফিরপো’জ-এ আত্মপ্রকাশ। ফিরপো’জ-এ ব্যান্ডমাস্টার ছিলেন রনি লাইক। রনি ও জো পেরেরার বন্ধুত্ব ছিল দেখার মতো। পলের বাজনা পছন্দ হল পেরেরার। নিয়ে এলেন দ্য পার্ক-এ। তার পর দীর্ঘ সময় জুড়ে পল ছিলেন পার্ক-এর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সে সব সোনালি দিন পল মল্লিককে আজও স্মৃতিমেদুর করে তোলে। ‘‘তখন ফ্লুরি’জ-এ স্যাক্সোফোন বাজাই। বাজনা শুনে এক তরুণী এসে জড়িয়ে ধরল। বলল, আই লাভ ইয়োর মিউজিক। আই ওয়ান্ট টু কিস ইউ।’’

জ্বলজ্বল করে ওঠে পলের চোখ, ‘‘তখন এক দিকে জ্যাজ মিউজিক, অন্য দিকে ক্যাবারে। সে সব বোঝার, কদর করার লোকও ছিল প্রচুর। ধীরে ধীরে সবাই বিদায় নিল। পড়ে থাকলাম শুধু আমি, আর পার্ক স্ট্রিট!’’

পল জানেন, এই পার্ক স্ট্রিটে বর্ষশেষে শুধুই ভিড়। বারে জ্যাজ, ব্লুজ, হাওয়াইয়ান, ক্যাবারে সবই এখন নিছক ধুলো-মাখা স্মৃতি। গান আর নেই!

Cabaret Dancers New Year Sensation Miss Shefali Usha Uthup
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy