তহবিলে যা পড়ে আছে, তাতে মেরেকেটে চলবে ন’দিন! সংস্থার যখন এ-হেন লালবাতি দশা, তখনই কর্মীদের ঘুরে দাঁড়ানোর ডাক দিলেন স্বয়ং ‘চিফ এক্জ়িকিউটিভ অফিসার’ বা সিইও। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার বীজমন্ত্র শোনা গেল তাঁর গলায়। সেই আহ্বানে কাজ হল ম্যাজ়িকের মতো। কয়েক দিনের মধ্যেই ইতিহাস গড়ল ওই সংস্থা। দ্রুত গতিতে সবাইকে ছাপিয়ে প্রযুক্তির দুনিয়ার এক নম্বরে উঠে এল তারা। বর্তমানে যাদের বাজারমূল্য লক্ষ কোটি ডলার ছাপিয়ে গিয়েছে।
বহুজাতিক মার্কিন টেক জায়ান্ট ‘এনভিডিয়া’র উত্থানের গল্পটা কোনও রূপকথার চেয়ে কম নয়। সাম্প্রতিক সময়ে রকেট গতিতে দৌড়োচ্ছে তাদের স্টকের সূচক। যদিও গোড়ার দিকে পরিস্থিতি একেবারেই এ রকম ছিল না। ১৯৯৫ সালে প্রথম বার একটি চিপ বাজারে আনে এনভিডিয়ার। নাম এনভি-১। কিন্তু ব্যবসায় মুনাফা হওয়া তো দূরে থাক, পুরোপুরি মুখ থুবড়ে পড়ে তারা। এক কথায় মার্কিন টেক জায়ান্টটির তৈরি চিপটিকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করে বাজার।
এ-হেন পরিস্থিতিতে আতান্তরে পড়ে এনভিডিয়ার। সংস্থা চালাতে তখন কর্তৃপক্ষের হাতে রয়েছে মাত্র ন’দিনের টাকা। ওই সময়ে খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা টেক জায়ান্টটির ভাগ্য বদলে দেন জেনসেন হুয়াং। কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আমরা এক বার ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু তার মানে পরের বার হব, এমন কোনও কথা নেই। আমরা শিখেছি, আমরা নতুন করে করব। এ বার বাজারের চাহিদামতো চিপ তৈরি করবে এনভিডিয়ার।’’
হুয়ানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে কোমর বেঁধে কাজে লেগে পড়েন মার্কিন টেক জায়ান্টটির কর্মীরা। অন্য দিকে অর্থের জোগান ঠিক রাখতে বিনিয়োগকারীদের বোঝানোর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন স্বয়ং সিইও। পরবর্তী চিপটা বাজার বদলে দেবে, এই আত্মবিশ্বাস ছিল তাঁর। ফলে লগ্নিকারীরা টাকা দিতে দেরি করেনি। এর জেরে কিছু দিনের মধ্যেই নতুন চিপ নিয়ে হাজির হয় এনভিডিয়ার। শুধু তা-ই নয়, এই ঘটনার পর আর কখনওই তাদের পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
বিশ্লেষকদের দাবি, আর এক মার্কিন বহুজাতিক টেক জায়ান্ট মাইক্রোসফ্টের নির্দেশমতো প্রথম বার টেক তৈরি করতে গিয়েছিল এনভিডিয়ার। ফলে বাজারের চাহিদার কথা মাথায় রাখেনি তারা। পরবর্তী কালে সেই সিদ্ধান্ত থেকে পুরোপুরি সরে আসেন সিইও জেনসেন হুয়াং। বর্তমানে এনভিডিয়ারকে কৃত্রিম মেধা (আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স বা এআই) প্রযুক্তির মেরুদণ্ড বললে অত্যুক্তি হবে না। বাজারের চাহিদা মেনে একের পর এক পণ্য তৈরি করে চলেছে তারা।