এই মেঘলা দিনে একলা যদি ঘরে মন না টেকে, তবে তো বেরিয়ে পড়তেই হয়। কিন্তু গন্তব্য স্থির করা কি মুখের কথা! জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে উপচে পড়া ভিড় থাকে। আর যদি সেই সব জায়গা ঘোরা হয়ে গিয়ে থাকে তা হলে পরিকল্পনা করা যায় একটু অন্য ভাবেই।
বর্ষায় মেঘ-কুয়াশার আনাগোনা দেখতে কেউ ছোটেন জঙ্গলে, কেউ যান পাহাড়ের আহ্বানে। কারও পর্যটন তালিকায় থাকে উত্তাল সমুদ্র। রিমঝিম বৃষ্টিতে সঙ্গীর সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য গোয়াও কম রোম্যান্টিক নয়।
তবে এই সব জায়গাকে সৌন্দর্যে টেক্কা দিতে পারে দক্ষিণ ভারতের শৈলশহরগুলিও। উটি, কোডাইকানাল, মুন্নার, দক্ষিণ ভারতের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। তবে সেই অর্থে পরিচিত নয়, পর্যটক মহলে কিছুটা অনাদৃত এমন কিছু জায়গাও কিন্তু বেছে নেওয়া চলে।
ভালপারাই, তামিলনাড়ু। ছবি: সংগৃহীত।
ভালপারাই, তামিলনাড়ু: পশ্চিমঘাট পর্বতের কোলে আন্নামালাই রেঞ্জ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩৫০০ হাজার ফুট উচ্চতায় সেই পাহাড়ের গা ঘেঁষেই গড়ে উঠেছে ভালপারাই। সবুজ পাহাড়ের শ্যামলিমা আরও বেড়ে যায় বর্ষার জল পেলেই। নেমে আসে মেঘপুঞ্জ। পাহাড়কে বেষ্টন করে পাক খেয়ে ওঠা সেই পথে গাড়ি চালানো বা জানলায় চোখ রেখে প্রকৃতি উপভোগের আনন্দ আজীবনের সঞ্চয় হয়ে থাকতে পারে। কফি বাগান, ঝর্না, শান্ত নিরালা পরিবেশ এই জায়গার রূপ বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুণ। এখানে দেখার জায়গা সবটাই। পর্যটনস্থল হিসাবে ঘুরে নেওয়া যায় আপার সোলার ড্যাম, নিরার ড্যাম, আলিয়ার ড্যাম, মাঙ্কি ফলস, বালাজি মন্দির, ভেলাঙ্কান্নি গির্জা-সহ অনেক কিছুই। তবে এখানকার অন্যতম আকর্ষণ হল ইন্দিরা গান্ধী ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি। বার্কিং ডিয়ার, বুনো শুয়োর, লেঙ্গুর-সহ অজস্র বন্যপ্রাণ, পক্ষীর বিচরণক্ষেত্র এই অভয়ারণ্য। ঘুরে নিতে পারেন আন্নামালাই ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্রও।
কী ভাবে যাবেন?
কোয়েম্বত্তুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ভালপারাইয়ের দূরত্ব ১১৯ কিলোমিটার। কাছের রেলস্টশেন পোলাচি ৬৪ কিলোমিটার দূর এখান থেকে।
নেল্লিয়ামপতি পাহাড়, কেরল। ছবি: সংগৃহীত।
নেল্লিয়ামপতি পাহাড়, কেরল: ঘন বনাঞ্চল, কফি বাগিচা, বন্যপ্রাণ নিয়ে নিজের মতো করে সেজে উঠেছে কেরলে এই শৈলশহর। মুন্নারের মতো পরিচিতি না থাক, রূপ তার কম নয়। ক্লান্ত জীবন থেকে দু’তিন দিনের মুক্তি ঠিকানা হতে পারে নেল্লিয়ামপতি। পাহাড়ের ঢালে ধাপ চাষ, ধাপে ধাপে নেমে আসা ঝর্না, ঠান্ডা আরামদায়ক পরিবেশ, মশলার ক্ষেত নিয়ে সেজে উঠেছে এই স্থান। পাহাড়ি পথে দু’চোখ ভরে দেখা যায় চা-বাগিচার নয়নাভিরাম রূপ। স্থানে স্থানে কমলালেবু, আনারসের বাগানও রয়েছে।
বর্ষায় পশ্চিমঘাট পর্বতের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি এখানকার আকর্ষণ হতে পারে গাছগাছালি, অরণ্য। ট্রেকার্স, পক্ষীপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্য এই স্থান। এখানকার পাহাড়ি বনভূমি চিতাবাঘ, হরিণ, বাইসন, হাতিদের আস্তানা। গ্রেট ইন্ডিয়ান হর্নবিল, মালাবার গ্রে হর্নবিল-সহ অসংখ্য পাখির দেখা মিলতে পারে এখানকার গাছগাছালিতে।
কী ভাবে যাবেন?
কোচি বিমানবন্দর থেকে নেল্লিয়ামপতির দূরত্ব ১১৫ কিলোমিটার। কোয়েম্বত্তুর থেকে দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। ৫৬ কিলোমিটার দূরে রয়েছে পাল্লাকাড রেলস্টেশন। ত্রিশূর রেলস্টেশন হয়েও আসা যায়। দূরত্ব ৭৭ কিলোমিটার।
সকলেশপুর, কর্নাটক। ছবি: সংগৃহীত।
সকলেশপুর, কর্নাটক: ইতিহাস, ভূগোল, দুইয়ের সমাহার রয়েছে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার এই জনপদে। বেঙ্গালুরু থেকে ২২০ কিলোমিটার দূরে এই স্থানে যেমন মন্দির রয়েছে, তেমনই রয়েছে টিপু সুলতানের তৈরি মনজরবাদ ফোর্ট। তীর্থযাত্রীদের কাছেও এই জায়গার মাহাত্ম্য রয়েছে। কুক্কে সুব্রহ্মণ্য মন্দির, সকলেশ্বর স্বামী মন্দির-সহ একাধিক ধর্মীয় স্থান রয়েছে এখানে। সকলেশপুরের পর্যটন আকর্ষণ বাড়িয়েছে মুরকান্নুগুডা, হাদলু, মগঝাল্লি জলপ্রপাত। বর্ষার মরসুমে তার রূপ হয় দেখার মতো। চাইলে অগ্নি গুড্ডা পাহাড়, ওমবাট্টু গুড্ডা-সহ একাধিক জায়গা পায়ে হেঁটেও ঘোরা যায়। মনজরবাদ ফোর্টের বিশেষত্ব এর স্থাপত্যশৈলীতে। উপর থেকে এটি দেখায় তারার মতো।
আরও পড়ুন:
কী ভাবে যাবেন?
বেঙ্গালুরু থেকে সড়কপথে সকলেশপুরের দূরত্ব ২২০ কিলোমিটার। ম্যাঙ্গালুরু থেকে দূরত্ব ১২৮ কিলোমিটার। কর্নাটকের যে কোনও বড় শহরের সঙ্গেই এই স্থান সড়কপথে যুক্ত। সকলেশপুরে রেলস্টেশনও আছে।