Advertisement
E-Paper

গঙ্গার পারে পাহাড়, এ কূল-ও কূল দেখা যায় না, কলকাতা থেকে তেমন দূর নয় এই জনপদ

সপ্তাহান্তে ঘুরে আসতে পারেন ইতিহাসের সাক্ষ্য বহনকারী পুরনো এক জনপদ থেকে। নদী, পাহাড়, ঝর্না— প্রকৃতি যেন দু’হাত উপুড় করে দিয়েছে এখানে।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:০৯
সপ্তাহান্তে ঘুরে আসার ঠিকানা রয়েছে কলকাতার অদূরেই।

সপ্তাহান্তে ঘুরে আসার ঠিকানা রয়েছে কলকাতার অদূরেই। ছবি: সংগৃহীত।

অফিসের কাজ, পরিবারের দায়দায়িত্ব, একঘেয়ে জীবন। কাজ থেকে ফুরসত মিললেও অনেকেরই বাড়িতে অলস সময় কাটাতে ইচ্ছা করে। তবে কোনও একটা সপ্তাহশেষে একটু পরিকল্পনা করে যাবেন নাকি গঙ্গা দেখতে?

শুনেই মনে হতে পারে, এ কেমন কথা? কলকাতার বাবুঘাট, প্রিন্সেপ ঘাটে বসলেই তো গঙ্গা দেখা যায়। তা ছা়ড়া বেলুড় মঠ, দক্ষিণেশ্বর থেকেও তা দৃশ্যমান। হাওড়া, হুগলি, মুর্শিদাবাদের মতো একাধিক জেলার বিভিন্ন শহর থেকেও প্রতি দিনই গঙ্গা দেখা যায়। গঙ্গার অন্য রকম সৌন্দর্যের সাক্ষী হতে হরিদ্বার, উত্তরাখণ্ড যাওয়া যায় বটে, সে দীর্ঘ পরিকল্পনা, অনেক দিনের ব্যাপার।

তবে লম্বা ছুটি আর বিশেষ পরিকল্পনা ছাড়াও যেতে পারেন এমন এক জায়গায়, যেখানে গঙ্গার রূপ বিভোর হয়ে দেখতে হবে। ঢেউখেলানো সবুজ পাহাড়, তার গা দিয়েই বয়ে গিয়েছে নদী। এতটাই তার বিস্তৃতি যে, এ পারে দাঁড়িয়ে ও পার ঠাহর হয় না। শুধু কি তাই! সেই জায়গায় আছে মুক্তোর মতো জলকণার ঝর্না, নদীর পাশে দালানবাড়ি, পুরনো মসজিদ, আরও কত কী!

ভাবছেন, এমন জায়গা কোথায় আছে? তার ঠিকানা হল পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ড। হাওড়া থেকে রাতের দিকে ট্রেনে চাপলে সকালেই পৌঁছতে পারেন সেখানে। নদী, ঝর্না, পাহাড়, ইতিহাস— এই সব কিছু নিয়েই অপেক্ষা করছে সাহেবগঞ্জ জেলার রাজমহল।

কোথায় কোথায় ঘুরবেন?

সাহেবগঞ্জ শহর জুড়েই রয়েছে ঢেউখেলানো সবুজ পাহাড়। স্টেশনে নামলেই চোখে পড়ে সেই রূপ। শহুরে পরিবেশ বাদ দিলে প্রকৃতি এখানে অমলিন। শহরে গঙ্গা দর্শনের পাশাপাশি ঘুরে নিতে পারেন মোতি ঝর্না, সিংহী দালান, ছড়িয়ে থাকা একাধিক মন্দির, জামা মসজিদ-সহ বিভিন্ন স্থান।

গঙ্গাদর্শন: গঙ্গার পাশেই সাহেবগঞ্জ শহর। নদীকে ছুঁয়ে রয়েছে রাজমহল পাহাড়। গঙ্গা এখন মোটেই সঙ্কীর্ণ নয়, বরং এক পারে দাঁড়িয়ে অন্য পার চোখে পড়ে না। শহর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে এমন ভিউ পয়েন্ট। স্থানীয়দের কথায়, এক সময় এই জায়গায় সাহেবদের আনাগোনা ছিল। সে কারণেই এই নাম।

মোতি ঝর্না

ছবি: সংগৃহীত।

মোতি ঝর্নার রূপ খোলে ভরা বর্ষায়।

গঙ্গার হাওয়া খেয়ে বেরিয়ে পড়ুন ঝর্না দেখতে। পথে সঙ্গ দেবে পাহাড় এবং প্রকৃতি। পাহাড়ের কোলে চাষের ক্ষেত। প্রকৃতি এখানে ভীষণ বর্ণময়। বিশেষত বর্ষাই সেই রূপ উপভোগের জন্য আদর্শ। শহর থেকে মোটামুটি ১৪ কিলোমিটার দূরে উঁচু পাহাড়ের উপর থেকে সশব্দে নেমে আসছে জলরাশি। তার প্রতিটি কণা মুক্তোর মতো। কেউ কেউ বলেন, তা থেকেই নাম মোতি ঝর্না। পাহাড়ের মাথা থেকে ধাপে ধাপে জলধারা নামে এখানে। মোতি ঝর্নার ঠিক নীচে গুহার ভিতরে রয়েছে মোতিনাথ শিবের মন্দির।

কানহাইয়া স্থান: ঝর্না থেকে মোটামুটি ১৭-২০ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে সাদা রঙের শ্রীকৃষ্ণ মন্দির। জায়গাটি কানহাইয়া স্থান নামে পরিচিত। সবুজে ঘেরা মন্দির চত্বর। মন্দিরের উপর থেকে বয়ে যাওয়া নদীর সৌন্দর্য মনোমুগ্ধকর।

সিংহী দালান

সিংহী দালানের খোলা চত্বর থেকে প্রাণ ভরে উপভোগ করতে পারেন গঙ্গার সৌন্দর্য।

সিংহী দালানের খোলা চত্বর থেকে প্রাণ ভরে উপভোগ করতে পারেন গঙ্গার সৌন্দর্য। ছবি: সংগৃহীত।

সাহেবগঞ্জ থেকে মোটমুটি ৪০ কিলোমিটার দূরে রাজমহলে রয়েছে সিংহী দালান। জানা যায়, ১৭ শতকের মধ্যভাগে এটি তৈরি। খিলান দেওয়া বিস্তৃত হল। সেখান থেকেই গঙ্গার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

জামা মসজিদ

সিংহী দালান থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে রয়েছে জামা মসজিদ। প্রশস্ত উন্মুক্ত চত্বর, চারদিক পরিচ্ছন্ন। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ রয়েছে পুরনো মসজিদটি দেখভালের দায়িত্বে। কেউ কেউ একে 'জামি মসজিদ'ও বলেন। মোগল স্থাপত্যের অনুকরণে তৈরি হয়েছিল সুবিশাল মসজিদটি।

বারোদুয়ারি

জামি মসজিদ থেকে চলে আসতে পারেন বারোদুয়ারি। ১২টি দরজা থেকে এই স্থানের নাম বারোদুয়ারি। শোনা যায় ১২টি সুড়ঙ্গপথে একসঙ্গে বেরিয়ে শত্রুদের ঘিরে ফেলতেই এটি তৈরি হয়েছিল। অনেকগুলি সিঁড়ি পেরিয়ে পৌঁছনো যায় উপরের খোলা চত্বরে। চারপাশ নির্জন, পরিচ্ছন্ন। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের অধীনে রয়েছে এই স্থানও।

ফসিল পার্ক

এ ছাড়াও এখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে ঘুরে নিতে পারেন জীবাশ্ম পার্ক, শিবগড়ি ধাম। সাহেবগঞ্জ থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে রাজমহল পাহাড় চত্বর সংলগ্ন স্থানেই তৈরি হয়েছে জীবাশ্ম পার্ক, মিউজ়িয়াম। লক্ষ লক্ষ বছরের পুরনো উদ্ভিদের জীবাশ্ম রয়েছে এখানে।

শিবগড়ি ধাম

সাহেবগঞ্জ থেকে ৩৭ কিলোমিটার দূরে শিবগড়ি ধাম।পাহাড়ের কোলে শিবের মন্দির। স্থানীয় মানুষের কাছে এই মন্দির অত্যন্ত পবিত্র।

এ ছাড়াও আরও বেশ কিছু জায়গা দেখতে নিতে পারেন এখানে।

কী ভাবে যাবেন?

হাওড়া থেকে রাতে জামালপুর এক্সপ্রস ধরলে পরের দিন সকালেই পৌঁছে যাবেন সাহেবগঞ্জ। সেখান থেকে অটো বা গাড়ি ভাড়া করে দ্রষ্টব্য স্থানগুলি ঘুরে নিন। সড়কপথেও যাওয়া যায়। বিমানে গেলে রাঁচি হয়ে যেতে পারেন সেখানে।

কোথায় থাকবেন?

সাহেবগঞ্জে থাকার জন্য একাধিক হোটেল রয়েছে। সেখানে আধুনিক মানের সমস্ত পরিষেবা মিলবে।

Weekend Destination Jharkhand Rajmahal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy