বিদেশ-বিভুঁইয়ে বেড়াতে যাওয়া আনন্দের ঠিকই, তবে ক্ষেত্রবিশেষে তা চিন্তারও হয়ে দাঁড়ায়। বিমানে করে আপনি নতুন দেশে পৌঁছলেন, কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরেও খুঁজে পেলেন না প্রয়োজনীয় জিনিস বোঝাই ট্রলি বা পিঠের ব্যাগটি। তখন শুরু হয় দুশ্চিন্তা। বিদেশে গিয়ে চাইলেই তো প্রয়োজনীয় জিনিস হাতের কাছে মিলবে না। তা ছাড়া জিনিসপত্র কেনার জন্য মোটা টাকা খরচ হতে পারে। বাড়তি টাকার ধাক্কা সামলানো সহজ কথা নয়।
এমন সময় দুর্ভাবনা খানিক কমাতে সহায়ক হতে পারে ভ্রমণ সংক্রান্ত বিমা। তবে তার আগে জানা দরকার, ব্যাগ পৌঁছতে দেরি বা হারানোর মতো সমস্যাগুলি কেন হয়?
যাত্রীদের সঙ্গে সাধারণত দু’ধরনের ব্যাগ থাকে। একটি ক্যারি-অন লাগেজ বা কেবিন ব্যাগেজ, যেটি যাত্রী সঙ্গে নিয়ে উঠতে পারেন। আর একটি ব্যাগ থাকে যেটি বিমানবন্দরে স্ক্যান হওয়ার পর বিমানের পেটের মধ্যে ব্যাগ রাখার নির্দিষ্ট জায়গায় ভরে দেওয়া হয়। সেই ব্যাগটি যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে বিমাবন্দরের নির্দিষ্ট স্থান থেকে সংগ্রহ করতে হয়।
ব্যাগ হারানো বা দেরি হওয়ার কারণ থাকে নানা রকম। কাউকে গন্তব্যে পৌঁছতে দুই বা তার চেয়ে বেশি উড়ান ধরতে হয়। একই বিমান পরিবহণ সংস্থার বিমানের টিকিট কাটলে ব্যাগ স্ক্যান করিয়ে একদম শুরুতেই বিমানে দিয়ে দিলে চলে। সেটি আবার সংগ্রহ করতে হয় গন্তব্যে পৌঁছে। এই ধরনের ক্ষেত্রে যে হেতু যাত্রীর ব্যাগ বিমান পরিবহণ সংস্থাই দায়িত্ব নিয়ে পরের বিমানে তুলে দেয়, ফলে অনেক সময় ভুল হয়। লাগেজের গায়ে ঠিকমতো ট্যাগ বা লেবেল না থাকলেও সমস্যা হয়। এ ছাড়া ভিড়ভাট্টার সময়ে, বিমানে যাত্রীর চাপ বেশি থাকলে, লাগেজের ওজন বেশি হলেও সমস্যা হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, যাত্রী নতুন দেশে পৌঁছনোর ২ থেকে ৩ দিন পরেও ব্যাগ পেলেন না। এমন ক্ষেত্রে প্রচণ্ড সমস্যার সম্মুখীন হন যে কোনও যাত্রী। আর যদি সেই ব্যাগ হারিয়ে যায়, তা হলে তো কথাই নেই।
আরও পড়ুন:
বিমা করা থাকলে কী ভাবে সুবিধা হবে?
বিমা করা থাকলে ব্যাগ না পেলেও ক্ষতিপূরণ মেলা সম্ভব। এতে কিছুটা হলেও আর্থিক ক্ষতি সামাল দেওয়া যায়। এক এক ধরনের বিমায় এক এক রকম সুবিধা মেলে। নিয়মকানুনও ভিন্ন হয়। প্রয়োজনমতো বিমা বেছে নিতে হবে।
১. প্রয়োজনীয় ব্যাগ যাত্রীর কাছে পৌঁছতে নির্দিষ্ট সময়ের বেশি দেরি হলে (সময় বিমায় উল্লেখ থাকে অন্তত ১২ ঘণ্টা) কোনও কোনও বিমায় পোশাক, প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য খরচ দেওয়া হয়।
২. অনেক সময় ব্যাগ হারিয়েও যায়। সে ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দেয় বিমা সংস্থা। তবে সেই অঙ্ক কতটা হবে, কতটা কভারেজ পাওয়া যাবে, নির্ভর করে বিমার শর্তের উপর। সাধারণত পোশাক, বৈদ্যুতিন সামগ্রীর জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।
৩. কোনও কোনও বিমায় আবার লাগেজ পৌঁছতে দেরি হলে সেই ব্যাগ সংগ্রহ করে যাত্রীর হোটেলে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকে।
৪. বিমানে ব্যাগ এবং জিনিসপত্র আনার সময় কোনও দামি জিনিস ভেঙে গেলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে, সেই ক্ষতিপূরণও পাওয়া যায়।
বিমার ধরনও পৃথক হয়। একটি যাত্রার জন্য যেমন কেউ বিমা করাতে পারেন, তেমনই যাঁদের ঘন ঘন বিদেশ যেতে হয়, তাঁদের জন্য বিশেষ বিমা থাকে।
কী ভাবে বিমা পরিষেবা পাবেন?
প্রথমেই বিমান সংস্থায় ব্যাগ না পাওয়ার লিখিত অভিযোগ জানাতে হবে। অভিযোগের ভিত্তিতে একটি নম্বর দেবে তারা। সেই নম্বরের সঙ্গে বিমানের টিকিট, বোর্ডিং পাস-সহ প্রয়োজনীয় নথি এবং জরুরি জিনিস কেনার বিল একত্র করে নির্দিষ্ট স্থানে ইমেল করতে হবে। বিমা সংস্থার হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করতে পারেন। কোনও এজেন্টের মাধ্যমে বিমা করালে তাঁর সহযোগিতা চাইতে পারেন।