Advertisement
E-Paper

কলকাতা থেকে মাত্র ঘণ্টা তিনেক, অপেক্ষা করছে শাল-শিমুলের অরণ্য, এ পথে থমকাতে হয় বার বার

পুজোর ছুটিতে সফরের জন্য ট্রেন, বাস, বিমানের টিকিট কাটা হয়নি? বেড়ানোর সঙ্গী হতে পারে চারচাকাই। আনন্দবাজার ডট কম-এ থাকছে সড়কপথে ভ্রমণের চেনা-অচেনা গন্তব্যের হদিস।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:১১
কলকাতার কাছেই আছে অরণ্য। জেনে নিন কোথায় জায়গাটি?

কলকাতার কাছেই আছে অরণ্য। জেনে নিন কোথায় জায়গাটি? —নিজস্ব চিত্র।

চিরচেনা কলকাতা, উঁচুর বাড়ির ভিড় ছাড়িয়ে ছুটিয়ে দিন গাড়ি। মাত্র তিন ঘণ্টায় পৌঁছে যাবেন এমন এক স্থানে, যেখানে গেলে থমকাতে হবে বার বার। থামিয়ে দেবে ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসা প্রকৃতি। ফিরিয়ে নিয়ে যাবে অতীতে।

বেড়ানো মানেই দূর, বহু দূর— এই কথা বোধ হয় সব সময় ঠিক নয়। ঘরের কাছেও এমন অনেক স্থান রয়েছে, যা নিমেষে মন ভাল করে দিতে পারে, দিতে পারে চোখের আরাম।

এমনই এক জায়গা ভালকি মাচান। নামকরণের ইতিহাস পরে হবে। আগে জেনে নিন, সেই জায়গা কোথায়। কী এমন আছে সেখানে? দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে গাড়ি ছোটাতে হবে পূর্ব বর্ধমানের দিকে। পথের দু’পাশে কখনও চোখে পড়বে সবুজ, কখনও উপস্থিতি জানান দেবে সাদা কাশ। কলকাতা থেকে ডানকুনি, গুড়াপ, জৌগ্রাম হয়ে পথ এগিয়েছে।

জাতীয় সড়ক ছাড়তে হবে পারাজে এসে। ডান দিকে চলে গিয়েছে অভিরামপুরের রাস্তা। এ পথ তেমন মসৃণ নয় বটে, তবে খানিক গেলেই টের পাওয়া যাবে মজা। রাস্তা জুড়ে চাঁদোয়া তৈরি করেছে দুই পাশের বড় বড় গাছ। দুই ধারে বিস্তীর্ণ জমিতে মাথা দোলাচ্ছে কচি ধান।

গাঁ-গঞ্জের এই চেনা ছবিটাই শহুরে মানুষগুলির কাছে যেন ক্যানভাস। ধানের মরাই, মাটির বাড়ি, রাস্তার ধারে মহিলাদের জটলা— মনে করিয়ে দেবে হারিয়ে যেতে বসা গ্রামবাংলার ছবি।

খানিক এগোলে আবার শহুরে বাজার-হাট, দোকান। তা দেখতে দেখতেই পৌঁছে যান যমুনাদিঘি। এখানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মৎস্য দফতরের প্রকল্প। তাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ইকো-রিসর্ট। ভিতরে সারি সারি জলাশয়। প্রাচীরে ঘেরা উন্মুক্ত জায়গাটিতে ২৪টি দিঘি রয়েছে। গাছগাছালি ঘেরা আশপাশ।

এখানেই রয়েছে রেস্তরাঁ। টাটকা মাছের স্বাদ পেতে হলে পাত পেড়ে খেতে বসতে পারেন। ঝোল, ঝাল— যেমন চাইবেন তেমন ভাবেই খেতে দেবে মৃগেল থেকে রুই, কাতলা। এখানে থেকে গেলে দেখতে পাবেন জাল ফেলে মাছ ধরা, মাছেদের খাওয়ানো।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

তবে যদি এক দিনে ঘুরে আসার পরিকল্পনা থাকে, তা হলে এখানে মধ্যাহ্নভোজ সেরে খানিক জিরিয়ে বেরিয়ে পড়ুন ভালকিমাচানের উদ্দেশে। দূরত্ব মোটে ৪ কিলোমিটার। গ্রামের পথঘাটের সৌন্দর্য দেখতে দেখতেই পৌঁছে যাবেন সেখানে।

ভালকির অরণ্য বেশ ঘন। শালপিয়ালের বনের ভিতর দিয়ে গিয়েছে মেঠো পথ। সেই পথে পায়ে হেঁটে ঢুঁ মারতে পারেন। ফোটোশ্যুটের জন্যও দারুণ এই জায়গা।

‘মাচা’ থেকে ‘মাচান’ কথাটি এসেছে। আউশগ্রামের জঙ্গলে বর্ধমানের মহারাজারা একটি উঁচু মাচার মতো স্থাপত্য তৈরি করিয়েছিলেন। দেখতে খানিকটা ‘ওয়াচ টাওয়ার’-এর মতো। অনেকে বলেন, সেখানে গিয়ে ভালুক শিকার করতেন রাজা। তার থেকেই এলাকার নাম হয়েছে ‘ভালকিমাচান’। এখন জঙ্গলটিই ভালকি নামে পরিচিত। জঙ্গলের মধ্যেই রয়েছে সরকারি অতিথি নিবাস।

এই গ্রামের চার-পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যেই আছে ডোকরাপাড়া। গ্রামের প্রায় সব বাসিন্দাই ডোকরার কাজ করেন। পর্যটক দেখলেই পায়ে পায়ে এগিয়ে এসে নিজের কাজ দেখাতে অস্থির হয়ে ওঠেন শিল্পীরা। কী ভাবে ডোকরার কাজ হয়, জানতে চাইলে সাগ্রহে দেখিয়ে দেন এই শিল্পকর্মের প্রতিটি ধাপ। ডোকরাপাড়া থেকে বেরিয়ে পাকা রাস্তা ধরে আরও কিছু দূর পশ্চিমে এগিয়ে যেতেই রাস্তার বাঁ দিকে কেয়া গাছের জঙ্গল। হয়তো এ জন্যই ওই জায়গাটি ‘কেওতলা’ নামে প্রসিদ্ধ। জঙ্গলের মাঝেই শিবমন্দির। এখানেই সাধক জগদানন্দ ব্রহ্মচারীর আশ্রম রয়েছে।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

যমুনাদিঘি বা ভালকি, কোথাও এক রাত থেকে গেলে ঘুরে নিতে পারবেন গড়জঙ্গল।

ভালকি থেকে আদুরিয়া হয়ে রাস্তা গিয়েছে ১১ মাইল হয়ে গড়জঙ্গল।

চওড়া পিচরাস্তার দু’পাশে জঙ্গল। এটি রয়েছে কাঁকসা ব্লকে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও এই জঙ্গলের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে বলে সরকারি ওয়েবসাইটে জানা যায়। ভাগবত ও পুরাণ অনুযায়ী মহামুনি মেধসের নির্দেশে সত্যযুগে রাজা সুরত গড়জঙ্গলের ভিতরে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেছিলে। রাজা সুরতের তৈরি মন্দিরে আধুনিক যুগে ফের পুজো শুরু করেন যোগীরাজ গিরি। টেরাকোটার সুপ্রাচীন মন্দির রয়েছে এখানে। শেষ প্রান্তে রয়েছে ইছাই ঘোষের দেউল, গোলাপের বাগান। জঙ্গলের ভিতরে রয়েছে শ্যামরূপা মন্দির। বর্ধমানের গৌরাঙ্গপুরের অজয় নদের তীরে পুরনো দেউল। স্থানীয়েরা বলেন, রাঢ়বাংলার সামন্ত ছিলেন ইছাই ঘোষ। তিনি এটি তৈরি করেন।

কী ভাবে যাবেন?

কলকাতা থেকে ভালকির দূরত্ব ১৪৪ কিলোমিটার। ৩ থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টার মতো সময় লাগবে। ডানকুনি, গুড়াপ, জৌগ্রাম হয়ে পারাজ গিয়ে ডান দিকে বাঁকতে হবে। মানকর হয়েও যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন?

ভালকি এবং যমুনাদিঘি— দুই জায়গাতেই থাকার বন্দোবস্ত রয়েছে।

Tour and Travels tourism Bhalki Machan Jamuna Dighi Travel Puja Special 2025
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy