Advertisement
E-Paper

এক সফরেই সমুদ্র, পাহাড়, অরণ্য! বাংলার কাছেই রয়েছে ঠিকানা, দিন তিনেকে কী ভাবে ঘুরবেন?

পুজোর ছুটিতে সফরের জন্য ট্রেন, বাস, বিমানের টিকিট কাটা হয়নি? বেড়ানোর সঙ্গী হতে পারে চারচাকাই। আনন্দবাজার ডট কম-এ থাকছে সড়কপথে ভ্রমণের চেনা-অচেনা গন্তব্যের হদিস।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:১১
অরণ্যপথে গেলে পৌঁছনো যাবে দেবকুণ্ড জলপ্রপাতে। উপরে অম্বিকা মন্দির।

অরণ্যপথে গেলে পৌঁছনো যাবে দেবকুণ্ড জলপ্রপাতে। উপরে অম্বিকা মন্দির। ছবি: সংগৃহীত।

চেষ্টা করেও ট্রেনের টিকিট মেলেনি কিংবা পুজোর ছুটি আগে থেকে জানা সম্ভব হয়নি? শেষ মুহূর্তে তা হলে কী হবে? বেড়ানো কি তবে বাদ? সঙ্গী যদি চারচাকা হয়, যাওয়া যায় তেপান্তরেও।

উত্তরবঙ্গ বা দূরের কোনও রাজ্য নয়। কলকাতা থেকে চারচাকাতে সওয়ার হয়েই চলুন সাগর, পাহাড়, ঝর্না, অরণ্য দেখতে। চারচাকা সঙ্গে থাকলে দর্শনীয় স্থান ঘুরতে ঘুরতেই পৌঁছনো যাবে গন্তব্যে। এক রাতে সঙ্গী যদি হয় সমুদ্রের উতল হাওয়া, অন্য রাতে অভিজ্ঞতা হতে পারে গা-ছমছমে বনবাসের।

তিন দিনেকের ছুটি পেলে কী ভাবে সফর সাজাবেন? কাকভোরে যাত্রা শুরু করলে হাতে সময়টা যেমন বেশি পাওয়া যাবে, তেমনই ভোরের মিঠে হাওয়াও উপভোগ্য হবে। কলকাতা থেকে কোলাঘাট, খড়্গপুর হয়ে জলেশ্বর, বালেশ্বর হয়ে প্রথম গন্তব্য দুবলাগড়ি। কোলাঘাটে প্রথম বিরতি নিয়ে চায়ে চুমুক দিয়ে হাত-পা একটু ছাড়িয়ে নিন। তার পর ফের কাশফুল আর শরতের আকাশকে সঙ্গী করে গাড়ি ছুটুক।

ট্রেন যাত্রার যেমন নিজস্ব ছন্দ রয়েছে, গাড়িরও আছে। সেখানে ইচ্ছামতো নিজের গানগুলি চালিয়ে দেওয়া যায়। আড্ডা, গল্প, মজায়— হইহই করে সময় কাটে। কলকাতা থেকে বালেশ্বর সাড়ে চার ঘণ্টার পথ। সেখান থেকেই শুরু হবে ঘোরা। বালেশ্বর থেকে রেমুনা-মিত্রপুরের রাস্তা ধরলে ১০ কিলোমিটার দূরত্বেই পড়বে ইমামি জগন্নাথ মন্দির। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে তৈরি মন্দিরটি ৭৮ ফুট উঁচু। নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করার মতোই। দেওয়াল জুড়ে কারুকাজ। ৩ একর বিস্তৃত জায়গার রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য মন্দির। গাছপালা ঘেরা জায়গাটি বেশ মনোরম। একই রাস্তা ধরে ৭ কিলোমিটার এগোলে ক্ষীরচোরা গোপীনাথ মন্দির। রঙিন কারুকাজ করা মন্দির। গোবিন্দ এবং মদনমোহনের কালো পাথরের মূর্তি রয়েছে এখানে। এখানে পূজিত হন গোপীনাথ। এখানে পাবেন ক্ষীর প্রসাদ।

বালেশ্বর থেকে ঘুরে নিন জগন্নাথ মন্দিরটি। রাতের রূপও নজরকাড়া।

বালেশ্বর থেকে ঘুরে নিন জগন্নাথ মন্দিরটি। রাতের রূপও নজরকাড়া। ছবি: সংগৃহীত।

মন্দির থেকে দুবলাগড়ি সৈকতের দূরত্ব ৩৪ কিলোমিটার। ওড়িশা বললেই পুরী, গোপালপুর, চাঁদিপুর সমুদ্রসৈকতের কথাই সকলে বলেন। তবে গত কয়েক বছর ধরে ঝাউয়ের বনঘেরা সৈকতটি ক্রমশ পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ঢেউয়ের আলতো পরশ। লাল কাঁকড়ার ছুটোছুটি এই সৈকতের বৈশিষ্ট্য।

থাকার জন্য পরিবেশ-বান্ধব ক্যাম্প রয়েছে। সমুদ্রের ধারে মাছ, কাঁকড়া, সবই খেতে পাবেন। শুধু একটু আগে থেকে বলে রাখতে হবে। উন্মুক্ত পরিবেশে তাঁবুতে থাকার অভিজ্ঞতাও সফরে বাড়তি পাওনা হতে পারে।

দুবলাগড়ির সমুদ্রসৈকত। বেশ নির্জন।

দুবলাগড়ির সমুদ্রসৈকত। বেশ নির্জন। ছবি: সংগৃহীত।

পরের দিন প্রাতরাশ সেরে বেরিয়ে পড়ুন অন্য গন্তব্যে। দেখে নিন দেবকুণ্ড। ওড়িশার সিমলিপাল জাতীয় উদ্যানের মধ্যেই তার অবস্থান। দুবলাগড়ি থেকে দেবকুণ্ডের দূরত্ব ৯৮ কিলোমিটার। জঙ্গলে প্রবেশের গেট থেকে ব্যাটারিচালিত গাড়ি পৌঁছে দেয় গন্তব্যে। সকালবেলা সেখানে যাওয়ার পথে ঘুরে নিন নীলগিরি হ্রদ। জলের রং এখানে নীলচে দেখায়। পাহাড় ঘেরা জলাধারটি মনোরম। সেখান থেকে দেবকুণ্ডের রাস্তায় এগোলে সঙ্গী হবে গাছপালা এবং ছোট ছোট পাহাড়। টিলাও বলা চলে অবশ্য। প্রকৃতির রূপ উপভোগ করতে করতেই এসে পড়বে দেবকুণ্ড। তবে সেটি অরণ্যের ভিতরে। দেবকুণ্ড আসলে একটি জলপ্রপাত। তার ঠিক পাশেই অম্বিকা মাতার মন্দির। স্থানীয়দের কাছে এটি পবিত্র তীর্থক্ষেত্র।

দেবকুণ্ডে বছরভর জল না থাকলেও, এই বছর টানা বর্ষায় জলপ্রপাতে জল উপচে পড়ছে। সেপ্টেম্বরেও বৃষ্টির পূর্বাভাস। আশা করা যায়, পুজোর সফরে গেলেও এই ঝর্না হতাশ করবে না। বনপথে সঙ্গ দেবে অজস্র প্রজাপতি। জলপ্রপাতের গা বেয়ে উঠেছে সিঁড়ি। সেখান দিয়ে পৌঁছনো যায় মন্দিরে। সেখান থেকে জলপ্রপাতের আর এক রূপ।

বর্ষায় এমন রূপ থাকে দেবকুণ্ডের। অরণ্যের মধ্যে অম্বিকামন্দির।

বর্ষায় এমন রূপ থাকে দেবকুণ্ডের। অরণ্যের মধ্যে অম্বিকামন্দির। ছবি: সংগৃহীত।

দেবকুণ্ড দেখে সোজা চলুন সিমলিপাল জাতীয় উদ্যানের অন্য অংশে। জঙ্গল থেকে বেরিয়ে মূল রাস্তায় আসতে হবে। সেখান থেকে গাড়ি করে গেলে মোটামুটি ২ ঘণ্টা সময় লাগবে পৌঁছতে। পীথাবাটা প্রবেশদ্বার দিয়ে অরণ্যে প্রবেশের সময় পরিচয়পত্র থাকা বাধ্যতামূলক। এখান থেকে বন দফতরের অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। তবে বর্ষার সময় থেকে জঙ্গলের কোর এরিয়া বন্ধ থাকে। সেটি খুলবে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে। সুতরাং পুজোয় গেলে সিমলিপালের গহীনে প্রবেশের সুযোগ থাকবে না।

যদিও পীথাবাটা দিয়ে লুলুং যেতে কোনও সমস্যা নেই। বছরের যে কোনও সময়ে এখানে আসা যায়। এই পথেও মিলবে অরণ্যশোভা। গাছাগাছালি, নদীর সৌন্দর্য, পাখির আনাগোনার মাঝে একটি দিন কাটাতে হলে লুলুং-এ রাত্রিবাস করতেই পারেন।

পুজোর সময় সিমলিপাল জাতীয় উদ্যান বন্ধ থাকলেও লুলুংয়ের সৌন্দর্য মন ভাল করে দেবে। বয়ে গিয়েছে পলপলা নদী।

পুজোর সময় সিমলিপাল জাতীয় উদ্যান বন্ধ থাকলেও লুলুংয়ের সৌন্দর্য মন ভাল করে দেবে। বয়ে গিয়েছে পলপলা নদী। ছবি: সংগৃহীত।

সিমলিপাল জাতীয় উদ্যান হরিণ, বাঘ, হাতি, চিতল, খরগোশ, বনবিড়াল, সম্বর, কাঠবিড়ালি, বুনো শুয়োর, বাঁদরের আশ্রয়স্থল। ২৭৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে জাতীয় উদ্যান। পীথাবাটা প্রবেশদ্বার গিয়ে ঢুকলে কিছু দূর অন্তর অন্তর থাকার জায়গা রয়েছে। লুলুং-ও খুব কাছেই। শহুরে সমস্ত সুযোগসুবিধাই পাবেন এখানকার কিছু থাকার জায়গায়। সিমলিপালের গহীনে প্রবেশের অনুমতি না মিললেও, লুলুংয়ের কাছ দিয়ে বয়ে যাওয়া লুলুং, পলপলা নদী, পাহাড়, গাছগাছালি মন ভাল করে দেবে। ঘুরে নেওয়া যাবে সীতাকুণ্ড-সহ আশপাশের কয়েকটি জায়গা। কোথাও না গেলেও ক্ষতি নেই। লুলুং-এ বসেই দিব্যি সময় কেটে যাবে।

তবে জাতীয় উদ্যান খোলা থাকলে ঘুরে নেওয়া যায় বরহিপানি এবং জোরান্ডা জলপ্রপাত। নিজেদের গাড়ি নিয়ে জঙ্গলে প্রবেশ করতে হলে গাড়ির ‘গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স’ থাকা জরুরি। অরণ্য ঘোরা যায় কালিয়ানি প্রবেশদ্বার দিয়েও।

কী ভাবে যাবেন?

কলকাতা থেকে দুবলাগড়ির দূরত্ব ২৪০ কিলোমিটার। খড়্গপুর, জলেশ্বর হয়ে বালেশ্বর পৌঁছে সেখান থেকে চলুন দুবলাগড়ি। দুবলাগড়ি থেকে পরের দিন দেবকুণ্ড হয়ে সিমলিপাল জাতীয় উদ্যান। সিমলিপাল জাতীয় উদ্যান থেকে কলকাতার দূরত্ব ৩৪০ কিলোমিটার। টানা গাড়িতে গেলে ঘণ্টা আট-নয় সময় লাগবে।

কোথায় থাকবেন?

দুবলাগড়িতে অসংখ্য বেসরকারি ক্যাম্প রয়েছে। তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থা। ছোট এবং বড়— দু'রকমের তাঁবু, কটেজ, সবই মিলবে। পুজোর সময় গেলে লুলুং-এ থাকতে পারেন। সীতাকুণ্ডের কাছেও বেসরকারি থাকার জায়গা হয়েছে। তবে আগাম বুকিং করে যাওয়া ভাল। সিমলিপালে ওড়িশা সরকারের কয়েকটি নেচার ক্যাম্প রয়েছে। সেটিও অনলাইনে বুকিং করা যায়।

Dublagadi Similipal National Park Offbeat Odisha Devkund Puja Special 2025 Travel
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy