শরীর-স্বাস্থ্য ভাল রাখতে হাওয়া বদলের জন্য পশ্চিমে যাওয়ার চল ছিল এক সময়ে। এখন লোকে যায় ‘ওয়েলনেস রিট্রিট’-এ।
মন এবং সুস্বাস্থ্যের নেপথ্যে আয়ুর্বেদ এবং যোগের অবদান নতুন করে মনে করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। সময়ের সঙ্গে দেশে আয়ুর্বেদ এবং যোগশাস্ত্র প্রশিক্ষণের একাধিক কেন্দ্র বা আশ্রম তৈরি হয়েছে। অনেকে আবার বৌদ্ধ মঠে উপাসনা, ধ্যান অভ্যাস করতে যান। এখন সে সব জায়গার পোশাকি নাম ‘ওয়েলনেস রিট্রিট’। বিদেশিদের কাছে এই ধরনের গন্তব্যের বিশেষ চাহিদা রয়েছে। ব্রিটিশ রক ব্যান্ড ‘বিটল্স’ থেকে অ্যাপ্লের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জোব্স— ভারতীয় যোগের অনুরাগীর সংখ্যাটি দীর্ঘ। আপনিও চাইলে এ রকম পাঁচটি গন্তব্যে কয়েক দিন কাটিয়ে আসতে পারেন। শরীর-স্বাস্থ্য ভাল থাকবে। মনোরম জায়গায় দিন কাটিয়ে মন হবেই ফুরফুরে।
আরও পড়ুন:
ওয়েলনেস রিট্রিট কী?
একঘেয়ে ব্যস্ত জীবনে একাধারে শরীর ও মনকে নতুন করে পুনরুজ্জীবিত করে তোলা এবং ভ্রমণের স্বাদ— এই দুই উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখেই তৈরি হয় ‘ওয়েলনেস রিট্রিট’। সেখানে স্বল্প সময়ে অতিথিদের জীবনধারায় পরিবর্তন আনা হয়, যার আধার হতে পারে আয়ুর্বেদ, যোগ এবং ধ্যান। পুরনো ব্যথা নিরাময়, খাওয়াদাওয়ার পাশাপাশি সার্বিক ভাবে শরীরকে ডিটক্স করার উপরে জোর দেওয়া হয়। পাশাপাশি, দেহের সঙ্গে প্রকৃতির যোগসূত্র স্থাপনও এই ধরনের কেন্দ্রগুলির অন্যতম উদ্দেশ্য। এর সঙ্গেই কেন্দ্রগুলিতে ‘ডিজিটাল ডিটক্স’কে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এখন প্রথাগত ভ্রমণের পাশাপাশি ওয়েলনেস ট্র্যাভেলের প্রবণতা ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
ভারতে এখন অজস্র ওয়েলনেস রিট্রিট তৈরি হয়েছে। সরকারি কেন্দ্রের পাশাপাশি বিলাসবহুল বেসরকারি কেন্দ্রও রয়েছে। বাজেট অনুযায়ী গন্তব্য নির্বাচন করে নেওয়া যায়। বিভিন্ন রাজ্য আর্যুবেদ এবং তাদের স্থানীয় প্রাচীন চিকিৎসাপদ্ধতির সঙ্গেই এই ধরনের কেন্দ্রগুলিকেও প্রচারের আলোয় নিয়ে আসছে।

কেরলে একাধিক আর্য়ুবেদ চিকিৎসাকেন্দ্র রয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।
১) কেরল: গত কয়েক দশকে ওয়েলনেস রিট্রিট হিসাবে সুখ্যাতি অর্জন করেছে দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্যটি। এখানে কোচি এবং আলেপ্পিতে বিভিন্ন বাজেটের প্রচুর আয়ুর্বেদিক রিসর্ট রয়েছে। বেশির ভাগ কেন্দ্রেই পছন্দ অনুযায়ী দিন এবং চিকিৎসাপদ্ধতি নির্বাচনের সুযোগ রয়েছে।

হৃষীকেশে গঙ্গার তীরে পর্যটকেদের ধ্যান শেখানো হয়। ছবি: সংগৃহীত।
২) হৃষীকেশ: উত্তরাখণ্ডের এই শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে গঙ্গা। এখানে নদীতীরে একাধিক জনপ্রিয় ওয়েলনেস রিসর্ট রয়েছে। এখানে মূলত যোগ শেখানোর জন্য একাধিক আশ্রম, স্কুল এবং কোচিং সেন্টার রয়েছে। হৃষীকেশের গঙ্গা আরতিও বিখ্যাত। পাহাড় এবং গঙ্গার প্রেক্ষাপটে কয়েকটি দিন যোগাভ্যাসের মাধ্যমে জীবনকে নতুন করে চেনার সুযোগ করে দেয় হৃষীকেশ।

ধর্মশালায় বৌদ্ধ ধর্মের দর্শনকে পর্যটকদের সামনে তুলে ধরা হয়। ছবি: সংগৃহীত।
৩) ধর্মশালা: হিমাচল প্রদেশের এই ছোট্ট শহরের কাছেই রয়েছে ম্যাকলয়েড গঞ্জ। বৌদ্ধ ধর্মের প্রাণকেন্দ্র দলাই লামার আশ্রম এখানেই। দু’টি শহরেই বৌদ্ধ ধর্মের দর্শন, চিকিৎসাপদ্ধতি এবং ধ্যান শেখানোর জন্য একাধিক কেন্দ্র এবং রিসর্ট রয়েছে। কয়েকটি কেন্দ্রে অল্প দিনে প্রাথমিক পর্যায়ের শেখানোর সুবিধা রয়েছে। আবার কেউ চাইলে কয়েক মাস পর্যন্ত থেকেও বৌদ্ধ ধর্মের রীতিনীতি শিখতে পারেন।

গোয়া দীর্ঘ দিন ধরেই ওয়েলনেস রিট্রিট হিসাবে জনপ্রিয়। ছবি: সংগৃহীত।
৪) গোয়া: দেশের পশ্চিমে এই রাজ্যে ভ্রমণ এবং যোগশাস্ত্রের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছে। পর্যটকদের জন্য এখানকার বিভিন্ন রিসর্ট এবং যোগ শিক্ষাকেন্দ্রে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে বিদেশিদের কথা মাথায় রেখে বেশির ভাগ কেন্দ্রগুলি মূলত শীতকালে পরিষেবা দিয়ে থাকে।

লাদাখে রয়েছে একাধিক ওয়েলনেস রিট্রিট। ছবি: সংগৃহীত।
৫) লেহ্: লাদাখের সৌন্দর্য পর্যটকদের কাছে সব সময়েই আকর্ষণীয়। হিমালয়ের পাদদেশে প্রায় দূষণমুক্ত লেহ্তে একাধিক বৌদ্ধ গুম্ফা রয়েছে। পাশাপাশি, তিব্বতি দর্শন এবং প্রাচীন চিকিৎসাপদ্ধতিকে অবলম্বন করে গড়ে উঠেছে একাধিক ওয়েলনেস রিট্রিট। অল্প দিনের পাশাপাশি বেশি দিনের প্যাকেজের ব্যবস্থাও রয়েছে।