যান্ত্রিক আধুনিকতাকে দূরে সরিয়ে জনঅরণ্য ছেড়ে ইতিহাসে ফিরে যেতে চাইলে কলকাতা থেকে খানিক দূরেই রয়েছে হুগলির ইটাচুনা রাজবাড়ি। ছবি: নিজস্ব চিত্র।
রাত পোহালেই নতুন বছর। একটি বছর শেষ হয়ে নতুন বছর আসছে, অথচ বিরাম নেই নাগরিক জীবনের ব্যস্ততায়। থিকথিকে ভিড়, দমবন্ধকর ইট-কাঠ-পাথর আর কংক্রিটের শহর থেকে পালাতে চায় অনেকের মনই। পাড়ি দিতে চায় অন্য কোথাও। অপেক্ষা শুধু সপ্তাহ শেষে যৎসামান্য ছুটির। কেমন হয় যদি রোজের সাধারণ জীবন আর তুচ্ছতাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে এক দিনের জন্য রাজা বা রানি হওয়া যায়? চলে যাওয়া যায় কোনও রাজবাড়িতে?
যদি যান্ত্রিক আধুনিকতাকে দূরে সরিয়ে জনঅরণ্য ছেড়ে ইতিহাসে ফিরে যেতে চাইলে কলকাতা থেকে খানিক দূরেই রয়েছে হুগলির ইটাচুনা রাজবাড়ি।
শহরের সীমানা ছাড়িয়ে গাছগাছালি মেঠো পথ, মাইলের পর মাইল সবুজে মোড়া চাষের জমি প্রশান্তি দিতে পারে হৃদয়কে। রাজবাড়ির বিশাল ফটক দিয়ে ঢুকে ভিতরে পা দিলেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে ইতিহাস। লোকলস্কর পাইক বরকন্দাজ— কালের নিয়মে অতীত জৌলুসের কিছুই আর অবশিষ্ট নেই এখন। তাও পুরনো দেওয়ালের প্রাচীন গন্ধ, উঁচু কড়িবরগার ছাদ, আল্পনা দেওয়া নাটমন্দির, প্রাঙ্গণ জুড়ে বড় বড় বাতিস্তম্ভ, প্রকাণ্ড ঝাড়বাতি দিয়ে সাজানো ইতিহাসের গন্ধমাখা সুবিশাল বৈঠকখানা মুহূর্তে অন্য এক জগতের দরজা খুলে দেয় চোখের সামনে।
রাজবাড়ির অন্দরমহল, বাহিরমহল সম্পূর্ণ আলাদা। কাছারি বাড়ি, হিসাবের ঘর, বাজার সরকারের ঘর পেরিয়ে তবে অন্দরমহলে পা। সোনাক্ষী সিংহ আর রণবীর সিংহের ‘লুটেরা’ ছবির শুটিং এই বাড়িতেই হয়েছিল। এ বাড়ির বিশাল ছাদও বড় মনোরম।
আর কী দেখবেন?
আশপাশটা একটু ঘুরে দেখতে চাইলে যাওয়া যেতে পারে ১২ কিমি দূরের পাণ্ডুয়ায়। এখানে এক মিনার আর তার পাশেই এক প্রাচীন মসজিদের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে।
গ্রামের মধ্যের রাস্তা ধরে এগোলে ২০০ বছরেরও প্রাচীন কালীবাড়ি। জনশ্রুতি, রানি রাসমণি এখানে নিয়মিত পুজো দিতে আসতেন। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের অনুপ্রেরণা নাকি এই মন্দির থেকেই পান তিনি।
কী ভাবে যাবেন?
কলকাতা থেকে সড়কপথে যেতে চাইলে গাড়ি নিয়ে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে বসিপুর, হালুসাই হয়ে খন্যানের পথ ধরতে হবে। হালুসাই থেকে রাজবাড়ি যেতে সময় লাগে মিনিট দশেক। ট্রেনে আসতে চাইলে বর্ধমান মেন লাইনের যে কোনও ট্রেন অথবা হাওড়া থেকে পাণ্ডুয়া লোকালে আসা যায়। খন্যান স্টেশনে নেমে অটো বা রিকশা ধরে চলে আসা যায় রাজবাড়ি।
কোথায় থাকবেন?
এক দিনেই রাজবাড়ি দেখে ফিরে আসা যায়। তবে চাইলে ইটাচুনা রাজবাড়িতে থাকতেও পারেন। এ ছাড়াও, রাজবাড়ির ঠিক পিছনে রয়েছে কয়েকটি কটেজ। সেখানেও থাকা যায়। তবে যাওয়ার আগে ফোন করে বুক করতে হবে।
রাজবাড়িতে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থাও রাজকীয়। বিভিন্ন বাঙালি পদ পাওয়া যায় এখানে। বনেদি জমিদার বাড়ির মতো ঝকঝকে কাঁসার থালাবাটিতে পরিবেশিত হয় সেই রান্না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy