কথায় আছে নেশা সর্বনাশা। হুঁশ, জ্ঞান, বোধ সব কিছুর উপরই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে নেশা। এমনকি প্রাণসংশয়ের মতো ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দিতে পারে মাদক। তেমনই এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন এক তরুণী। নেশার ঘোরে নিজের চোখ উপড়ে নিতে হাত কাঁপেনি তাঁর। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে নিজের ২০ বছর বয়সের এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে নিয়েছেন কেলি মুথার্ট নামের ওই তরুণী।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে মেথামফেটামিন মাদকের প্রভাবে, একটি গির্জার বাইরে নিজের চোখ উপড়ে ফেলেছিলেন কেলি। একসময় মেধাবী ছাত্রী বলে পরিচিত ছিলেন তিনি। ‘ন্যাশনাল অনার সোসাইটি’র সদস্য ছিলেন। বাইপোলার ডিজ়অর্ডার এবং মানসিক চাপের কারণে তাঁর জীবন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। ১৭ বছর বয়সে অর্থ উপার্জনের জন্য স্কুল ছেড়েছিলেন কেলি। ১৯ বছর বয়সে, অসৎ সঙ্গে মিশে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন তিনি। কেলির মা যখন তাঁকে মাদকের নেশা ছাড়ানোর জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তি করার চেষ্টা করছিলেন, ঠিক তখনই এই ঘটনাটি ঘটে। অতিরিক্ত মাত্রায় মাদক গ্রহণ করে ফেলেন কেলি। মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন। নানা হ্যালুসিনেশনের সম্মুখীন হন। সাক্ষাৎকারে সেই ভয়াবহ মুহূর্তটির কথা বর্ণনা করে তরুণী বলেন, সেই দিন আমার মনে হয়েছিল পৃথিবীকে বাঁচানোর জন্য কাউকে না কাউকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ত্যাগ করতে হবে। সেই ব্যক্তিটি আমি। তাই আমি আমার বৃদ্ধাঙ্গুলি, তর্জনী এবং মধ্যমা দিয়ে চোখ দু’টি ধরেছিলাম। মোচড় দিয়ে চোখটি টেনে বার করেছিলাম যত ক্ষণ না চোখটি বেরিয়ে আসে। মনে হয়েছিল এটিই আমার করা সবচেয়ে কঠিন কাজ।’’
বীভৎস কাজটি করার সময় যন্ত্রণায় প্রচণ্ড চিৎকার করছিলেন কেলি। সেই চিৎকার শুনে ছুটে আসেন গির্জার এক পাদরি। তিনি দেখতে পান চোখ দুটি অক্ষিকোটর থেকে বেরিয়ে এসেছে। সামান্য অংশ লেগে রয়েছে মুখমণ্ডলে। ওই পাদরি পরে জানিয়েছিলেন কেলির দু’হাতে দুটি চোখ ধরা ছিল। তখনও তাঁর মুখের সঙ্গে চোখ দুটি সামান্য সংযুক্ত ছিল। সময় নষ্ট না করে পাদরি কেলিকে সাহায্য করেন। পাদরির হস্তক্ষেপে তাঁর মস্তিষ্কের ক্ষতি হওয়া আটকানো সম্ভব হয়। কেলিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে চিকিৎসকদের একটি দল তাঁর চোখের অবশিষ্ট অংশগুলি অপসারণ এবং সংক্রমণ রোধ করেন। মাদকের প্রভাবে কেলির মানসিক অবস্থার এতটাই অবনতি হয়ে গিয়েছিল যে তাঁকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সাত জনের সাহায্যের প্রয়োজন হয়।
দীর্ঘ চিকিৎসার পর কেলি সুস্থ হন। চোখ হারিয়ে সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে গিয়েছেন তিনি। অতীতের অন্ধকার পর্ব ভুলে গিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করছেন কেলি। তিনি ব্রেল শিখেছেন এবং একটি রেস্তরাঁয় কাজ করছেন। তিনি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘মাঝেমাঝে আমার মনে হয় অন্ধ হওয়া আমার জন্য আশীর্বাদ। যদি আমি দেখতে পেতাম, তাহলে আমি আবার মাদকাসক্ত হয়ে পড়তাম। আমি খুশি যে আমি এখন দেখতে পাচ্ছি না। তা না হলে বেরিয়ে আসা আমার পক্ষে খুব কঠিন হত।’’