Advertisement
E-Paper

অ্যাসিড হামলায় আক্রান্ত মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী, পলাতক পুরনো প্রেমিক

বিষের শিশি হাতে ধরিয়ে দিন কয়েক আগে পুরনো প্রেমিক বলেছিল, ‘‘বিষ খেয়ে মরতে পারিস না!’’ ভয় পেয়ে যায় মেয়েটি। বাড়িতে এসে বলে সব কথা। পঞ্চায়েতের দ্বারস্থ হন মেয়ের বাবা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:২৫

বিষের শিশি হাতে ধরিয়ে দিন কয়েক আগে পুরনো প্রেমিক বলেছিল, ‘‘বিষ খেয়ে মরতে পারিস না!’’ ভয় পেয়ে যায় মেয়েটি। বাড়িতে এসে বলে সব কথা। পঞ্চায়েতের দ্বারস্থ হন মেয়ের বাবা। পঞ্চায়েতের এক সদস্য ছেলেটিকে ডেকে ধমকধামক দেন। অভিযোগ, বুধবার সন্ধ্যায় ওই তরুণই কিশোরীর মুখে অ্যাসিড ছুড়ে পালিয়েছে। জখম হয়েছেন মেয়েটির এক তরুণী প্রতিবেশীও।

ঘটনাটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার উস্তির উত্তর কুসুম পঞ্চায়েতের কেয়াকণা গ্রামের। ওই কিশোরী ও প্রতিবেশীর চিকিৎসা চলছে ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে। মেয়েটির মুখের অনেকটা অংশই অ্যাসিডে পুড়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তবে দৃষ্টিশক্তির কী অবস্থা, তা এখনই বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের সুপার আনোয়ার হোসেন।

হাফিজুল লস্কর নামে ওই তরুণ ও তার বাবা সিরাজুল লস্করের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন মেয়েটির বাবা। দু’জনেই পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ। কী ধরনের অ্যাসিড ছোড়া হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ছেলেটি কোথা থেকে অ্যাসিড জোগাড় করল, তা-ও খুঁজে দেখছেন তদন্তকারীরা। হাফিজুলের এক আত্মীয় থাকেন কয়েক কিলোমিটার দূরে ধামুয়ায়। সেখানে সোনা-রূপো গলানোর কাজ হয় ঘরে ঘরে। হাফিজুল সেখান থেকেই অ্যাসিড জোগাড় করে থাকতে পারে বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান পুলিশের একাংশের।

সম্প্রতি একাধিক অ্যাসিড আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে রাজ্যে। জয়নগর, ক্যানিং, কালনা— অ্যাসিড হানায় জখম হয়েছেন বহু মহিলা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যার পিছনে ব্যর্থ প্রেমের ঘটনাই ইন্ধন জুগিয়েছে।

এমন কাণ্ড কেন ঘটাল হাফিজুল? তদন্তকারী পুলিশ অফিসারেরা জানাচ্ছেন, এ ক্ষেত্রেও কারণ সেই ভাঙতে থাকা সম্পর্ক।

বছর দু’য়েক ধরে পেশায় দর্জি হাফিজুলের সঙ্গে মেলামেশি ছিল বছর পনেরোর ওই কিশোরীর। কিন্তু ইদানীং মেয়েটির জন্য সম্বন্ধ খুঁজছিল পরিবার। ছেলেটির সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে মেয়ের। পুলিশের অনুমান, পুরনো প্রেম ভাঙতে দেখে মাথার ঠিক ছিল না হাফিজুলের। আক্রমণ সেই রাগেই।

মেয়েটির এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা। বুধবার বিকেলে বৌদির সঙ্গে গ্রাম থেকে কিছুটা দূরে জুতো কিনতে বেরিয়েছিল সে। ফেরার পথে সঙ্গী হন বছর কুড়ির প্রতিবেশী এক তরুণীও। সন্ধে তখন প্রায় সাড়ে ৭টা। তিনজন গল্পগুজব করতে করতে আসছিলেন গ্রামের রাস্তা ধরে। উল্টো দিক থেকে সাইকেল নিয়ে হাজির হয় একজন। তার মুখে কাপড় বাঁধা ছিল। তিনজনকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময়ে হঠাৎই সাইকেল থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে সে। অ্যাসিড ছুড়ে পালায়।

ওই কিশোরী ও তার প্রতিবেশী তরুণী রাস্তায় প়ড়ে ছটফট করতে শুরু করে। তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে যায়। বালতি করে এনে দু’জনের চোখেমুখে ছেটান স্থানীয় বাসিন্দারা। তাতে যন্ত্রণার উপশম হয়নি। দু’জনকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় বাণেশ্বরপুর গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখান থেকে পরে পাঠানো হয় ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে। স্থানীয় উত্তরকুসুম পঞ্চায়েতের সদস্য তামান্না বিবি বলেন, ‘‘ছেলেটি মেয়েটিকে বিষের শিশি পাঠিয়ে হুমকি দিয়েছে শুনে আমরা দু’টি পরিবারকে ডেকে পাঠাই। ছেলেটিকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। তারপরেও এমন কাণ্ড ঘটাল।’’ কিন্তু তখনই পুলিশকে জানাননি কেন? তামান্নার দাবি, মেয়ের পরিবার চায়নি থানা-পুলিশ করা হোক। তাদের আশা ছিল, ধমক-ধামকেই কাজ হবে।

মেয়েটির বৌদি বলেন, ‘‘অন্ধকারে ঢাকা রাস্তায় আমি একটু এগিয়ে গিয়েছিলাম। ওরা দু’জনে গলা জড়িয়ে গল্প করতে করতে আসছিল। হঠাৎ হাসির শব্দ বদলে গেল আর্তনাদে।’’

হতাশ গলায় মেয়ের বাবা বলেন, ‘‘যারা মেয়ের এমন অবস্থা করল, তাদের কড়া শাস্তি চাই।’’

Madhyamik Candidate
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy