Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

করোনা নিয়ন্ত্রণে দিশা দেখাচ্ছে গোবরডাঙা

শহরবাসী জানালেন, পুলিশ-পুরসভা সঠিক সময়ে পদক্ষেপ করেছে।

গোবরডাঙা হাসপাতাল। —ফাইল চিত্র

গোবরডাঙা হাসপাতাল। —ফাইল চিত্র

সীমান্ত মৈত্র
গোবরডাঙা  শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২০ ০৪:৪২
Share: Save:

বারাসত মহকুমা জুড়ে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাসের প্রকোপ। নিয়মিত ভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। এরই মধ্যে তুলনায় গোবরডাঙা পুর এলাকা ব্যতিক্রম। এখানে আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। এখনও পর্যন্ত মৃত্যু ঘটেনি। আক্রান্তদের বেশির ভাগই বাড়িতে থেকে সুস্থ হচ্ছেন।

শহরবাসী জানালেন, পুলিশ-পুরসভা সঠিক সময়ে পদক্ষেপ করেছে। মানুষের সচেতনতাও তুলনা বেশি চোখে পড়ছে। গোবরডাঙা পুরসভা সংলগ্ন গাইঘাটা ব্লক ও হাবড়া পুর এলাকায় করোনার প্রকোপ ব্যাপক হারে ছড়িয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গাইঘাটা ব্লকে শনিবার পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ২১০ জন। মারা গিয়েছেন ২ জন। হাবড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার পর্যন্ত এখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৩১৭ জন। মারা গিয়েছেন ৮ জন। সেই তুলনায় গোবরডাঙা পুরসভা এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই কম। গোবরডাঙার পুরপ্রশাসক সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘রবিবার পর্যন্ত পুরসভা এলাকায় করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৫১ জন। ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েছেন ৩৭ জন। এখনও পর্যন্ত কেউ মারা যাননি।” পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, আক্রান্ত ৫১ জনের মধ্যে ৪৫ জনকে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা করে সুস্থ করা হয়েছে বা হচ্ছে। ৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল।

স্বাস্থ্য আধিকারিক, চিকিৎসক নারায়ণচন্দ্র কর বলেন, ‘‘বাড়িতে রেখে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার সময়ে রোজ তাঁদের সঙ্গে ফোনে ২০ বারের বেশি কথা বলে পরামর্শ দিচ্ছি। এ ছাড়া, ভিডিয়ো কলে রোগী দেখে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। রোগীর আত্মীয়ের সঙ্গেও কথা বলা হয়। বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হলে পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মী বা রোগীর দূরসম্পর্কের আত্মীয়েরা ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছেন। রোগীর অবস্থা খারাপ হলে তাঁদের দ্রুত অ্যাম্বুল্যান্স করে কোভিড হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।’’

পুরসভা ও বাসিন্দারা জানান, লকডাউনের শুরু থেকে পুলিশ-পুরসভা কড়া হাতে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। মাস্ক ছাড়া বা অকারণ ঘোরাঘুরি করলে আইনি পদক্ষেপ করা হয়েছে। এক যুবকের কথায়, ‘‘রাত সাড়ে ১১টার সময়ে মাকে স্কুটিতে করে ঘুরতে বেরিয়েছিলাম। ওই রাতেও পুলিশ আমাকে বাড়ি ফেরত পাঠিয়ে দেয়। এতটাই কড়া পুলিশি নজরদারি।’’ পুরপ্রশাসক বলেন, ‘‘সরকারি লকডাউন ছাড়াও পুরসভা থেকে ৯ দিন পূর্ণ লকডাউন করা হয়েছে। প্রায় দু’মাস ধরে কার্ড ব্যবস্থা চলেছে।’’ কী এই ব্যবস্থা? পুরপ্রশাসক জানালেন, প্রত্যেক পরিবারকে পুরসভা থেকে একটি কার্ড দেওয়া হয়েছে। ওই দেখিয়ে একটি পরিবারের একজন সদস্য সপ্তাহে ২ দিন বাজারে বেরোতে পেরেছেন। ওই সময়ে দুপুর ২টোর পর ওষুধের দোকান ছাড়া সব বন্ধ ছিল। রবিবার দোকানপাট বন্ধ ছিল। বাসিন্দারা জানান, গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে রোগী ভর্তির ব্যবস্থা নেই। বিকেলের পর হাসপাতালে বহির্বিভাগে ডাক্তার থাকেন না। চিকিৎসার এ হেন পরিকাঠামো নিয়ে মানুষ করোনা নিয়ে আরও বেশি সচেতন। তা ছাড়া, বাইরে থেকে লোকজন আসা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকেরা এলাকায় ফিরলে নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা হয়েছে। করোনা আক্রান্তদের পরিবারের কেউ যাতে বাইরে বের হতে না পারেন, তার উপরে পুলিশ কড়া নজর রাখে।

শহরবাসীর একাংশ অবশ্য মনে করেন, লালারস পরীক্ষা কম হওয়ার কারণেও এখানে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হয়নি। শহরের বাসিন্দা সমাজকর্মী পবিত্র মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুরসভার সঠিক পদক্ষেপ, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের ভূমিকা এবং মানুষের সচেতনতা বাড়ার কারণে এখানে করোনা পরিস্থিতি তুলনায় ভাল।’’

শিক্ষাকর্মী মানিক ঘোষ বলেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসনের পদক্ষেপের কারণে মানুষ সচেতন হয়েছেন। মাস্ক ছাড়া বা অকারণ কেউ বের হলেই পুলিশ ধরপাকড় করছে। এর ফলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in West Bengal Gobardanga
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE