প্রতীকী ছবি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন প্রান্তে তৃণমূলের আভ্যন্তরীণ কোন্দল নতুন কিছু নয়। তবে দীর্ঘদিন পর্যন্ত ব্যতিক্রম ছিল গোসাবা। এখানকার বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর বছরের পর বছর নিজের সাংগঠনিক ক্ষমতার জেরে এককাট্টা রেখেছিলেন দলকে।
কিন্তু তাঁর মৃত্যুর কয়েক মাসের মধ্যেই সংগঠনে ভাঙন দেখা দেয়। বর্তমানে গোসাবা ব্লক তৃণমূল কার্যত আড়াআড়ি ভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। যে কোনও সময়ে বড়সড় অশান্তির আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন পুলিশ-প্রশাসনের একাংশ।
গত বিধানসভা ভোটের পরপরই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় জয়ন্তের। কে ধরবেন স্থানীয় রাজনীতির হাল, তা নিয়ে শুরু হয় নানা জল্পনা। জয়ন্তের ছেলে, কলকাতা পুলিশের কর্মী বাপ্পাদিত্যের আনাগোনা বাড়ে এলাকায়। আরও কয়েকজন স্থানীয় নেতাকেও সক্রিয় হয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছিল।
এরই মধ্যে উপনির্বাচনের টিকিট পান সুব্রত মণ্ডল। জয়ন্ত নস্কর ২৩ হাজার ভোটে জিতেছিলেন আগে। সুব্রত জেতেন ১ লক্ষ ৪৩ হাজার ভোটে।
এ পর্যন্ত সব ঠিকই চলছিল। কিন্তু গন্ডগোল শুরু হয় ভোটের পর থেকে। গোসাবার তৃণমূল নেতৃত্বের বড় অংশের দাবি, ভোটে জেতার পর থেকে সুব্রত নিজের খামখেয়ালিপনায় কাজ করছেন। সংগঠনকে নিজের ইচ্ছে মতো ভাঙছেন। বেশিরভাগ অঞ্চলেই সংগঠনের দায়িত্ব থেকে পুরনো নেতাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সদ্য বিজেপি ছেড়ে আসা অনেককে সংগঠনের দায়িত্ব দিচ্ছেন সুব্রত। অভিযোগ, এ সবের প্রতিবাদ করলে বিধায়কের কোপের মুখে পড়তে হচ্ছে ব্লক তৃণমূল নেতৃত্বকে।
মাস দু’য়েক হল তিক্ততা আরও বেড়েছে। বিধায়কের সঙ্গে বালি ১, বালি ২, শম্ভুনগর, কুমিরমারি, বিপ্রদাসপুরের মতো পঞ্চায়েতের অঞ্চল নেতৃত্ব থাকলেও বাকি ১১টি পঞ্চায়েতের অঞ্চল নেতৃত্ব কার্যত তাঁর বিরোধিতা শুরু করেছেন। এই ১১টি পঞ্চায়েত এলাকাতেই কার্যত পুরনো নেতৃত্বকে সরিয়ে নতুন কাউকে অথবা বিজেপি থেকে সদ্য আসা কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
গত সোমবার চার-পাঁচটি অঞ্চলের তৃণমূল নেতাদের নিয়ে গোসাবা ব্লক তৃণমূল কার্যালয়ে বৈঠক করেন সুব্রত। তারই পাল্টা হিসাবে মঙ্গলবার বাকি ১১টি অঞ্চলের তৃণমূল নেতৃত্ব একত্রিত হয়ে বৈঠক করেন। যার নেতৃত্ব ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সদস্য অনিমেষ মণ্ডল, গোসাবা ব্লকের তৃণমূল নেতা শ্যামাপদ চক্রবর্তী, সুবিদ আলি ঢালি, অচিন পাইক, কৈলাস বিশ্বাসের মতো ব্লক তৃণমূল নেতারা।
সুব্রত বলেন, ‘‘আমি বিধায়ক হওয়ার পরে চেষ্টা করেছি দলের সব কর্মীকে এক সঙ্গে নিয়ে চলার। যেখানে কর্মীরা নতুন মুখের দাবি জানিয়েছিলেন, সেখানেই অঞ্চল নেতৃত্ব পরিবর্তন করা হয় এবং তা দলের স্বার্থে।” তিনি আরও দাবি করেন, গত সোমবারের বৈঠকে সমস্ত অঞ্চলের নেতৃত্বকেই ডাকা হয়েছিল। কিন্তু অনেকে আসেননি।
অন্য দিকে, অনিমেষ, কৈলাস, অচিনদের মতে, ভোটে জেতার পর থেকে একনায়কতন্ত্র কায়েম করার চেষ্টা করছেন বিধায়ক। দলের কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই একের পর এক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। মানুষের পাশে থাকার পরিবর্তে এলাকার মানুষকে পথে বসিয়েছেন। অনিমেষের কথায়, ‘‘বছরের পর বছর যে সংগঠন জয়ন্ত নস্কর এই বিধানসভায় করেছিলেন, সেই সংগঠনকে ভেঙে ফেলে বিজেপির লোকের হাতে দলটাকে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।’’ সমস্ত ঘটনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও জানানো হয়েছে বলে দাবি দলের এই অংশের। এ বিষয়ে তৃণমূলের সুন্দরবন সাংগঠনিক জেলার সভাপতি জয়দেব হালদার অবশ্য বলেন, ‘‘গোসাবায় দলের অন্দরে সমস্যার কথা জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy