E-Paper

কিশোরদের বইমুখী করছে গাছতলার গ্রন্থাগার

পেশায় কৃষক হলেও সপ্তাহে দু’দিন কলকাতার কাপড়ের হাটে বিক্রেতার কাজ করেন দুর্গাচরণ।

প্রসেনজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৪৯
গাছতলায় বই পড়ছে পড়ুয়ারা।

গাছতলায় বই পড়ছে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র।

যুগ পরিবর্তনের সঙ্গেই বেড়ে চলছে শিশু ও কিশোরদের মোবাইল নির্ভরতা। কমছে বই পড়ার আগ্রহ। এই পরিস্থিতিতে গ্রামে বসেই সমাধানে উদ্যোগী হলেন বাসন্তীর আমঝাড়া গ্রামের বাসিন্দা দুর্গাচরণ রায়। খোলা আকাশের তলায় বটগাছের নীচে তিনি শুরু করেছেন একটি পাঠাগার। নাম ‘বর্ণ পরিচয় কেন্দ্র।’ গত কালীপুজোর সময় থেকে শুরু হয়েছে এই গ্রন্থাগার। দুর্গাচরণকে সহযোগিতা করছেন তাঁর বন্ধু জয়দেব মাঝি ও স্ত্রী চঞ্চলা রায়।

পেশায় কৃষক হলেও সপ্তাহে দু’দিন কলকাতার কাপড়ের হাটে বিক্রেতার কাজ করেন দুর্গাচরণ। তবে দীর্ঘদিন ধরেই গ্রামের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়ানোই তাঁর নেশা। ১৯৯৬ সাল থেকে গ্রামের ক্লাবঘরে চলত তাঁর পাঠশালা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই ক্লাসে পড়ুয়াদের সংখ্যা কমতে শুরু করে। অভিযোগ, অধিকাংশ শিশু ও কিশোর মোবাইল গেম, ভিডিয়ো ও সামাজ মাধ্যমে আসক্ত হয়ে পড়ায় পড়াশোনার আগ্রহ কমতে থাকে।

এর পরই ক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে মাসখানেক আগে গ্রামের মাঠে বটগাছের নীচে নতুন করে লাইব্রেরি তৈরির কাজ শুরু করেন তিনি। এখানে স্কুল-কলেজের বই ছাড়াও গল্পের বই, মনীষীদের জীবনী এবং ধর্মগ্রন্থ রয়েছে। পাশাপাশি রাখা আছে দেশ-বিদেশের মানচিত্রও। তবে নিয়ম, বই বাড়িতে নিয়ে যাওয়া যাবে না, সেখানে বসেই পড়তে হবে।

শুরুতে শিশু কিশোরদের ধরে বেঁধে আনতে হলেও কয়েক দিনের মধ্যেই বদলে যায় চিত্রটা। বইয়ে আগ্রহ বাড়তেই ভিড় জমতে শুরু করে গাছতলায়। এখন শুধু পড়ুয়ারাই নয়, গ্রামের কিশোর-কিশোরী ও বয়স্করাও নিয়মিত বই পড়তে আসছেন। দুর্গাচরণের দাবি, প্রতিদিন এখন অন্তত একশো পাঠক আসন এই পাঠাগারে।

খোলা জায়গায় লাইব্রেরি হওয়ায় বৃষ্টি বা ঝড়ের সময় বই নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ঠিকই। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও ক্লাবের সদস্য ও পড়ুয়ারাই দ্রুত বই গুছিযে রাখেন।

দুর্গাচরণ বলেন, “মোবাইলে আসক্তির কারণে পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। তাই গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনা করে এই পদক্ষেপ করেছি।” তাঁর দাবি, “এখন বহু পড়ুয়া বই পড়ায় আগ্রহী হচ্ছে।”

জয়দেব মাঝি বলেন, “ক্লাবে পড়ুয়ার সংখ্যা কমতে দেখে দুর্গাচরণ এই পাঠাগারের পরিকল্পনা করেন। এখন প্রতিদিন পাঠকের সংখ্যা বেড়ে চলেছে।” এই উদ্যোগে খুশি গ্রামবাসীরা। তাঁরা জানান, পাঠাগার চালু হওয়ার পরে এলাকায় পড়াশোনার পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

basanti

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy