উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরে যুবকের মুন্ডুহীন দেহ উদ্ধারের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত জলিলকে গ্রেফতার করল বারাসত থানার পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে উত্তর ভারতের জম্মু থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার তাঁকে সেখানকার আদালতে হাজির করানোর পর হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। শুরু হয়ে গিয়েছে অভিযুক্তকে জম্মু থেকে বারাসতে ফেরানোর প্রস্তুতি।
আরও পড়ুন:
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ফেরার জলিলের খোঁজে বিভিন্ন স্টেশনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। তখনই জানা যায়, গত ৩ ফেব্রুয়ারি তাঁকে বামনগাছি থেকে শিয়ালদহগামী ট্রেনে উঠতে দেখা গিয়েছে। জলিল রাজ্যের বাইরে পালিয়ে গিয়েছেন, এই সন্দেহে এর পর শিয়ালদহ-সহ বড় স্টেশনগুলির সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখতে শুরু করে পুলিশ। শেষমেশ কলকাতা স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজে জলিলের দেখা মেলে! জানা যায়, কলকাতা স্টেশন থেকে জম্মু-তাওয়াই এক্সপ্রেসে উঠেছেন জলিল। স্থানীয় সূত্রে আগেই জানা গিয়েছিল, জম্মুতে মাঝেমাঝে যাওয়া-আসা ছিল জলিলের। তাই জম্মুতে শুরু হয় অভিযুক্তের খোঁজ। বুধবার সেখান থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি দত্তপুকুর থানার ছোট জাগুলিয়ার মালিয়াকুর বাজিতপুর এলাকার একটি ফাঁকা জমিতে এক যুবকের মুন্ডুহীন দেহ দেখতে পান কৃষকেরা। জমির পাশে পড়ে ছিল দেহটি। গোটা শরীরে ক্ষতচিহ্ন। উপড়ে নেওয়া হয়েছিল যৌনাঙ্গ। মৃতের হাত-পা বাঁধা ছিল। এ ছাড়া, ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা মদের গ্লাস, চিপ্সের প্যাকেটও খুঁজে পায় পুলিশ। শুরু হয় কাটা মুন্ডুর খোঁজ। তার জন্য বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি করা হয়। খালে ডুবুরিও নামানো হয়। তবে মৃতের বাম হাতে দুটো উল্কি ছিল। একটি ‘লভ সাইন’ এবং আর একটিতে ইংরেজি হরফে লেখা ‘বি’। শেষ পর্যন্ত ওই উল্কির সূত্র ধরেই যুবকের নাম-পরিচয় জানা যায়। পুলিশ জানায়, নিহত যুবকের নাম হজরত লস্কর। তিনি আদতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার লক্ষ্মীকান্তপুরের বাসিন্দা। গত বৃহস্পতিবার হজরতের পরিবারের লোকেরা বারাসাত মেডিক্যাল কলেজের মর্গে এসে দেহ শনাক্ত করেন।
আরও পড়ুন:
পরে উদ্ধার হয় খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রটিও। ওই ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের মধ্যে ছিলেন জলিলের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন। সুফিয়া যেখানে ভাড়া থাকতেন, সেই বাড়ি থেকেই গত শুক্রবার খুনের অস্ত্রটি উদ্ধার করে পুলিশ। বামনগাছি পশ্চিম মুরালির পরিত্যক্ত ওই বাড়ি থেকে খেজুর গাছ কাটার হেসো-সহ বঁটি ও কাস্তেও উদ্ধার হয়। পাশাপাশি, মেলে পোড়া গেঞ্জি এবং মাথার চুল। হজরতের দেহ চিহ্নিত হওয়ার পর তাঁর মামাতো ভাই ওবায়দুল গাজিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় গাজির স্ত্রী পূজা দাসকেও। এ বার ধরা পড়লেন মূল অভিযুক্ত জলিল।