Advertisement
E-Paper

জেলে থাকুক নেশাড়ু ছেলে, চাইছেন মা

মা সুপ্রিয়া মণ্ডল। বড় ছেলে সোমনাথকে বাঁচাতে চাইছেন। কিন্তু মারণ নেশা থেকে সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনে কী ভাবে ফিরবে ছেলে, জানা নেই তাঁর!

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৮ ০০:০০
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ছেলের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন মা। প্রতিবেদকের হাত ধরে বললেন, ‘‘আমার ছেলেটা ভাল হতে চাইছে। কিন্তু পারছে না। ওকে বাঁচার একটু ব্যবস্থা করে দিন।’’

মা সুপ্রিয়া মণ্ডল। বড় ছেলে সোমনাথকে বাঁচাতে চাইছেন। কিন্তু মারণ নেশা থেকে সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনে কী ভাবে ফিরবে ছেলে, জানা নেই তাঁর!

সুপ্রিয়াদেবীর বাড়ি বনগাঁর সীমান্ত-লাগোয়া গ্রাম নরহরিপুরে। বছরখানেক আগে পুলিশের হাতে মাদক নিয়ে ধরা পড়া ছেলে এখন দমদম সেন্ট্রাল জেলে। ছেলের এই পরিণতি মানতে পারছেন না মা। ছেলে জেলে যাওয়ার পর থেকে রাতে ঘুম হয় না মায়ের। কাঁদেন। রান্না করে মুখে কিছু তুলতেও ইচ্ছে হয় না তাঁর।

এত দুঃখের মধ্যেও কিন্তু সুপ্রিয়াদেবী চাইছেন না ছেলে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরুক। কারণ, তিনি মনে করেন, বাড়ি ফিরলে ছেলে আবার নেশাসক্ত হবে। তাই ছেলেকে জেল থেকে ছাড়ানোর জন্য কোনও পদক্ষেপ করেননি। আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেননি। তা ছাড়া আইনজীবী রাখবার মতো আর্থিক অবস্থাও তাঁর নেই! বিনা পয়সার আইনজীবী মিলতে পারে, সে ধারণাও তাঁর নেই। ইতিমধ্যে তিনি শুনেছেন, জেলের মধ্যেও নাকি ছেলে নেশা করছে! এটা শোনার পর থেকে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছেন। হাতের কাছে যাঁকে পাচ্ছেন তাঁকেই অনুরোধ করছেন, ছেলেকে নেশার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য।হেরোইন-আসক্ত ছেলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে একটা সময়ে সুপ্রিয়াদেবীই অবশ্য চেয়েছিলেন ছেলেকে পুলিশ গ্রেফতার করুক। স্থানীয় পেট্রাপোল থানার সিভিক ভলান্টিয়ার্সদের সঙ্গে যোগাযোগও করেছিলেন তিনি। পরিবার সূত্রে জানা গেল, বছর পঁচিশের সোমনাথ ছোটবেলায় লেখাপড়ায় ভালই ছিল। অভাবের কারণে সুপ্রিয়াদেবী তাকে লেখাপড়া করাতে পারেননি। স্বামী ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল ১৯ বছর আগে মারা গিয়েছিলেন। তখন বড় ছেলে সোমনাথের বয়স ছিল ৬ বছর! ছোট ছেলেটি তখনও দুগ্ধপোষ্য। লোকের বাড়ি কাজ করে সুপ্রিয়াদেবী চেয়েছিলেন ছেলেদের মানুষ করতে। কিন্তু কয়েক বছর আগে বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশার সূত্রে সোমনাথ হেরোইনের নেশা শুরু করে। প্রথম দিকে বন্ধুরা তাকে বিনা পয়সায় নেশা করতে দিত। পরে সে নেশায় আসক্ত হয়। ছেলের শরীরের উপর সেই নেশার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার খুঁটিনাটি মায়ের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। কিন্তু নিশ্চয় ছেলের কিছু ঘটেছে। মা ভেবেছিলেন ছেলের নার্ভ-সংক্রান্ত কোনও রোগ হয়েছে। পরে তিনি জানতে পারেন, ছেলে মারণ নেশার কবলে পড়েছে। নেশা থেকে ছেলেকে ফিরিয়ে আনার কোনও উপায় ছিল না তাঁর কাছে। এ দিকে, নেশার টাকা সংগ্রহ করতে দিনে-দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল সোমনাথ। সুপ্রিয়াদেবী জানান, ছেলে বাড়ি থেকে চাল, শাড়ি, বাসন ইত্যাদি চুরি করে বিক্রি করে দিচ্ছিল। এলাকাতেও সাইকেল বা ছোটখাটো জিনিস চুরি করতে শুরু করে। বিয়ে করেছিল সোমনাথ। স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যায়। তারপর থেকে সে পুরোপুরি নেশাসক্ত। পেট্রাপোলে কুলির কাজ করে সামান্য যা আয় করত, সবই নেশায় ওড়াত। সুপ্রিয়াদেবীর কথায়, ‘‘চাইছিলাম পুলিশ ওকে ধরুক। জেলের মধ্যে থাকলে নেশা করতে পারবে না। ছেলেটা অন্তত প্রাণে বেঁচে যাবে।’’ সোমনাথের ঘটনা অবশ্য ব্যতিক্রম নয়। নেশাসক্তির বিষয়টি কোনও পারিবারিক সঙ্কটও নয়, বরং এক সামাজিক সমস্যা। এবং এ সমস্যা শুধু উত্তর-দক্ষিণ শহরতলিরও নয়। কলকাতারও। কলকাতাতেই রবিবার মিলেছে নতুন ধাঁচের মাদকের নেশা ‘ম্যাজিক মাশরুমে’র খবর। ম্যাজিক মাশরুম নয়, কিন্তু গত কুড়ি বছরে সীমান্তবর্তী পেট্রাপোল, নরহরিপুর, পিরোজপুর, জয়পুর ইত্যাদি এলাকায় হেরোইনের নেশায় আসক্ত হয়ে এবং রোগে ভুগে মারা গিয়েছেন বহু তরুণ। স্থানীয় মানুষের হিসাব অনুযায়ী, মৃত্যুর সংখ্যাটা কুড়ি জন তো হবেই! কী ভাবে সীমান্ত এলাকায় ছড়াচ্ছে এই কারবার?

(চলবে)

Crime Dum Dum Cenral Jail Drug দমদম সেন্ট্রাল জেল
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy