ভিন্ রাজ্যের খামার থেকে এই মুরগিদের আনতে গিয়েই চলে প্রতিযোগিতা। নিজস্ব চিত্র
কম দামে মুরগি কিনে বেশি মুনাফা করতে গিয়ে প্রবল বেগে ছোটে গাড়ি। অভিযোগ, এরই জেরে প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মৃত্যু ঘটছে মানুষের।
শুক্রবার মুরগি কিনতে বেরিয়ে ওড়িশায় পথ দুর্ঘটনা মৃত্যু হয়েছে বসিরহাটের মাটিয়ার ৭ শ্রমিকের। রাজ্য সরকারের পক্ষে আর্থিক সাহায্য নিয়ে বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক রবিবার নেহালপুর গ্রামে গিয়েছিলেন। তিনিও এ বিষয়টি জানতে পেরেছেন। দুর্ঘটনার জন্য মুরগি বিক্রি সংস্থাকেই কার্যত দায়ী করেন তিনি। মন্ত্রী জানতে পারেন বাঁকুড়া, আরামবাগ, ওড়িশা, পুরুলিয়া থেকে কে আগে মুরগি এনে কলকাতার নিউ মার্কেটে পৌঁছে দিতে পারবে— তা নিয়েই সংস্থাগুলির প্রতিযোগিতা চলে।
স্থানীয় মুরগি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ওড়িশা, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডে মুরগি উৎপাদন বেশি হলেও চাহিদা কম। ওই সমস্ত এলাকা থেকে কলকাতায় মুরগি আনা হয়। স্থানীয় বাজারে পাইকারি দরের থেকে বাইরে থেকে মুরগি আনলে প্রতি কেজিতে দাম প্রায় ২০ টাকা কম পড়ে। ফলে ব্যবসায়ীরা বাইরে থেকেই মুরগি কিনতে উৎসাহী। ব্যবসা-সংক্রান্ত রেষারেষির ফলেই দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ে বলে অভিযোগ অনেকের।
দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার চেয়ারম্যান তথা বসিরহাটের বাসিন্দা এটিএম আবদুল্লাহ রনি মন্ত্রীকে জানান, প্রায় ১০টি সংস্থা আছে, যারা শ্রমিকদের দিনে চারশো টাকা মজুরি দিয়ে মুরগি কেনাবেচার কাজে লাগায়। ভিন্ রাজ্য থেকে মুরগি আনলে প্রতি দিন ৬০০ টাকা মজুরি মেলে। সেই মুরগি চলে যায় কলকাতার নিউ মার্কেটের বাজারে। বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা মুনাফা হয় মালিকের। রনির দাবি, গত ৫-৭ বছরে মুরগি আনা-নেওয়ার কাজে গিয়ে একাধিক দুর্ঘটনায় উত্তর ২৪ পরগনার শ’খানেক মানুষ মারা গিয়েছেন।
অতিরিক্ত জেলাশাসক প্রীতি গোয়েল, বসিরহাটের মহকুমাশাসক মৌসম মুখোপাধ্যায়, পুলিশ সুপার জবি থমাস কে-কে নিয়ে কমিটি গড়ে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বনমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবে দিনের পর দিন মৃত্যু ঘটতে দেওয়া যায় না। প্রশাসনকে বলা হয়েছে, সব দিক খতিয়ে দেখে সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে।’’
স্থানীয় বাসিন্দা মিহির ঘোষ বলেন, ‘‘এই এলাকার অনেকে মুরগির কারবারে যুক্ত। যে গতিতে গাড়িগুলি ছোটে, তাতে সামান্য ভুলে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’’ ভিন্ রাজ্য থেকে মুরগি কিনে কে আগে কলকাতার বাজারে পৌঁছবে— তা নিয়ে রেষারেষি চলে।’’
বেপরোয়া মুরগি-বোঝাই গাড়িকে পথে দেখলে ভয়ে ভয়ে থাকেন অন্য গাড়ির চালকেরাও। মাটিয়ার এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘প্রাণ হাতে রেখেই এখানকার মানুষ রোজগারের আশায় এই কাজ করেন। মালিক পক্ষকে দুর্ঘটনার দায় নিতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy