E-Paper

পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইছেন আমডোবের বহু মানুষ

ভোটকে কেন্দ্র করে রক্তারক্তি এ বাংলায় পুরনো ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতি’। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটও ব্যতিক্রম নয়। সে বার যে সব অঞ্চলে হানা দিয়েছিল সন্ত্রাস, এ বার ভোট নিয়ে কী বলছেন সেখানকার মানুষ? খোঁজ নিল আনন্দবাজার

সীমান্ত মৈত্র  

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:২৬
Panchayat

ঘটনাস্থল: এখানেই গত পঞ্চায়েত ভোটে ছড়িয়েছিল উত্তেজনা। —নিজস্ব চিত্র

২০১৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটের দিনটির কথা মনে পড়লে এখনও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বাগদা ব্লকের আমডোব এলাকার মানুষ।

গ্রামের মানুষ জানালেন, ১৪ মে, পঞ্চায়েত ভোটের দিন ভোর থেকেই গোটা ব্লক জুড়ে শুরু হয় সন্ত্রাস। বুথ জ্যাম, ছাপ্পা, ব্যালট বাক্স লুট, ব্যালট ছিনতাই করে পুড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। প্রিসাইডিং অফিসারের মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকানো, বোমাবাজি, গুলি, মারধর— কিছুই বাদ যায়নি।

কয়েকটি বুথে ফের ভোট করাতে হয়েছিল। বাসিন্দারা অনেকেই জানাচ্ছেন, অতীতে কোনও ভোটে এমন সন্ত্রাস তাঁরা দেখেননি। দিনভর বাইক বাহিনী ও বহিরাগতেরা দাপিয়ে বেড়ায় এলাকায়।

বড় ঘটনাটি ঘটে আমডোব উচ্চ বিদ্যালয়ে। গুলি, বোমাবাজি, মারপিট, রক্তপাত হয়েছিল সে দিন। অভিযোগ, প্রিসাইডিং অফিসারের মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে ব্যালট লুট করা হয়। অনেকে ঘর থেকে সে দিন বেরোননি। ফের ভোটগ্রহণ হয়েছিল।

সে দিনের আতঙ্কের স্মৃতি এখনও আমডোবের মানুষের মনে টাটকা। সামনে আবারও পঞ্চায়েত ভোট। অনেকেরই আশঙ্কা, সেই আতঙ্কের স্মৃতি ফিরে আসবে না তো!

কথা হচ্ছিল আমডোব উচ্চ বিদ্যালয়-সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা শুভেন্দু দাসের সঙ্গে। জানালেন, ভোর থেকে গোলমাল শুরু হয়েছিল গত পঞ্চায়েত ভোটের দিন। বহিরাগতেরা ভোট লুটের চেষ্টা করে। গ্রামের মানুষ প্রতিরোধ করেন। আমডোবের এই স্কুল মাঠে বোমা পড়েছিল। শুভেন্দুর পরিবারে ১৬ জন ভোটার। কেউ ঘর থেকে বের হননি সে দিন বলে জানালেন শুভেন্দু।

শুভেন্দুর মতো অনেকেই সে দিন ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের দিকে এগোননি সাহস করে। এক যুবক জানালেন, সকালে গোলমাল মিটে গেলে তিনি ভোট দিতে স্কুলে যাচ্ছিলেন। ঢোকার মুখে কয়েক জন বলে, ‘তোর ভোট হয়ে গিয়েছে। বাড়ি ফিরে যা।’ অনেকেই জানালেন, সামনের পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হোক। তা হলে অশান্তি এড়ানো যাবে।

সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন এক বৃদ্ধ। জানতে চাওয়া হল, এ বার ভোট দিতে যাবেন? তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘নিজের ভোট কি নিজে দিতে পারব?’’ কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলে যাবেন ভোট দিতে? বৃদ্ধ বলেন, ‘‘এটা ঠিক, আমরাও চাই ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকুক। কারণ, লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে আমরা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পেরেছিলাম। সেটা সম্ভব হয়েছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতির জন্যই।’’ এক বৃদ্ধের কথায়, ‘‘সন্ত্রাসের বহু ঘটনা ঘটলেও সে দিন পুলিশ ছিল নেহাতই দর্শকের ভূমিকায়।’’

সে বার গোটা ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছিল তৃণমূলের দিকে। বাগদার বিজেপি নেতা অমৃতলাল বিশ্বাস বলেন, ‘‘২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে আমডোব-সহ বাগদা ব্লকে সন্ত্রাস করেছিল তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। ভোটের দিনই শুধু নয়, গণনার দিনও গণনাকেন্দ্রে সন্ত্রাস চালিয়েছিল ওরা।’’ অমৃতের দাবি, আগামী পঞ্চায়েত ভোটে তাঁরা চান, ১৪৪ ধারা জারি করে, কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট হোক।

সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির সদস্য মতিয়ার রহমান বলেন, ‘‘গত পঞ্চায়েত ভোটে বাগদায় পুলিশ-প্রশাসন ছিল সম্পূর্ণ নীরব। গোলমালের পিছনে প্রশাসনের একাংশের মদতও ছিল।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইবে না। আমরা চাই প্রশাসন ভোটে নিরপেক্ষতা বজায় রাখুক। মানুষের নিরাপত্তা দিক।’’

বিরোধীদের অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘গত পঞ্চায়েত ভোটে বাগদায় তৃণমূল কোনও সন্ত্রাস করেনি। কিছু মানুষ ব্যক্তিস্বার্থে সন্ত্রাস করেছিল। তৃণমূল এ সব সমর্থন করে না।’’ বিশ্বজিতের দাবি, ‘‘আগামী পঞ্চায়েত ভোটে বাগদায় উৎসবের পরিবেশে মানুষ শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট দেবেন। সেই ব্যবস্থা আমরা করব।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Panchayat Election Violence

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy