Advertisement
০৪ মে ২০২৪

দোল খেতে গিয়ে থাম ভেঙে মৃত্যু দুই শিশুর

শাড়ির একদিক বাঁধা হয় জানলার রডের সঙ্গে। অন্য দিক বাঁধা হয় বারান্দার সিঁড়ির পাশে থাকা থামের সঙ্গে। শাড়ির মাঝখানে বসে পায়েল, অর্জুন ও প্রথমা দোল খাচ্ছিল। হঠাৎ থাম ভেঙে পড়ে।

শোকার্ত: পায়েলের মা। ডান দিকে, পায়েল ও অর্জুন। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

শোকার্ত: পায়েলের মা। ডান দিকে, পায়েল ও অর্জুন। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
বনগাঁ শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৯ ০০:২৮
Share: Save:

শাড়ি দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল দোলনা। তাতেই দোল খেতে গিয়ে থাম ভেঙে চাপা পড়ল তিন শিশু। মারা গিয়েছে দু’জন। সোমবার রাত ১০টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে বাগদা থানার কুড়ুলিয়া এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম পায়েল ঘোষ (৮), অর্জুন ঘোষ (৩)। জখম শিশুর নাম প্রথমা বিশ্বাস। চার বয়স বছর চারেক।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কুড়ুলিয়া এলাকার বাসিন্দা সুকুমার ঘোষ খেতমজুরির কাজ করেন। কুড়ুলিয়ায় তাঁর ইটের দেওয়াল, টিনের ছাউনি দেওয়া বাড়ি। সোমবার রাতে সুকুমারের ছোট মেয়ে পায়েল মায়ের শাড়ি দিয়ে বারান্দায় দোলনা তৈরি করে। শাড়ির একদিক বাঁধা হয় জানলার রডের সঙ্গে। অন্য দিক বাঁধা হয় বারান্দার সিঁড়ির পাশে থাকা থামের সঙ্গে। শাড়ির মাঝখানে বসে পায়েল, অর্জুন ও প্রথমা দোল খাচ্ছিল। হঠাৎ থাম ভেঙে পড়ে। তিনজনই বারান্দায় ছিটকে পড়ে। পায়েল ও অর্জুন থামের নীচে চাপা পড়ে যায়। বাড়ির লোকজন ও প্রতিবেশীরা এসে সকলকে উদ্ধার করেন। এলাকার লোকজন গাড়ি করে তিনজনকে বাগদা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সকলকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। বনগাঁ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসকেরা পায়েল ও অর্জুনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। প্রথমাকে অবশ্য প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।

পায়েল সুকুমারের ছোট মেয়ে। অর্জুন ও প্রথমা তাঁর নাতি-নাতনি। মঙ্গলবার সকালে এলাকার লোক ভেঙে পড়ে ওই বাড়িতে। এমন ঘটনা কেউ মেনে নিতে পারছেন না। অনেকেরই চোখে জল। পায়েলের মা পার্বতী বারান্দায় শুয়ে কেঁদে চলেছিলেন। প্রতিবেশীরা তাঁকে সামলে রাখছিলেন। ভাঙা থামটি উঠোনের একপাশে ফেলে রাখা। চুপচাপ বসে ছিলেন সুকুমার। বললেন, ‘‘দিন কয়েক আগে টালি সরিয়ে টিনের ছাউনি দিয়েছিলাম ঘরে। সে কারণেই থামটি দুর্বল হয়ে পড়ে। সেটাই সব শেষ করে দিল।’’

সুকুমারের তিন মেয়ে। বড় মেয়ে সুদীপ্তার একমাত্র সন্তান প্রথমা। কুড়ুলিয়াতেই তাঁর বিয়ে হয়েছে। মেজো মেয়ে ঝুমার একমাত্র ছেলে অর্জুন। ঝুমার বিয়ে হয়েছে স্থানীয় রানিনগর এলাকায়। দিন কয়েক আগে সুদীপ্তা মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়িতে এসেছিলেন। সোমবার বিকেলে পার্বতী মেজো মেয়ে ও নাতিকে বাপের বাড়ি নিয়ে আসেন। ঘটনার সময়ে ঝুমা ঘরে গিয়েছিলেন, ছেলে অর্জুনের জন্য দুধ আনতে। সুদীপ্তা বলেন, ‘‘রাতে মায়ের সঙ্গে আমি বারান্দার সিঁড়িতে বসে কথা বলছিলাম। পায়েল, অর্জুন ও প্রথমা পাশেই দোলনা চড়ছিল। চোখের সামনেই দুর্ঘটনাটা ঘটে গেল। অর্জুনের কান মুখ দিয়ে গল গল করে রক্ত বের হচ্ছিল। কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।’’ গ্রামবাংলায় শাড়ি, ওড়না দিয়ে দোলনা বানিয়ে হামেশাই কেলা করে ছোটরা। কখনও গাছের ডালে দড়ি, শাড়ি বাঁধা হয়। কখনও থামের সঙ্গেও দড়ি-শাড়ি বেঁধেও দোলনা তৈরির চল আছে। দোলনা থেকে পড়ে গিয়ে চোটও পায় কেউ কেউ। তবে এমন মৃত্যুর ঘটনা আগে শোনা যায়নি।

প্রথমার চোখে মুখে এখনও আতঙ্ক। মাঝে মধ্যে কেঁদে উঠে মাকে জড়িয়ে ধরছে। মাথায় চোট পেয়েছে সে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Child
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE