Advertisement
E-Paper

নবদ্বীপে দাহের প্রথা বন্ধ হোক, চাইছেন অনেকে

রবিবার রাতভোর চোখের পাতা এক করেননি বাগদা থানা এলাকার সীমান্ত-লাগোয়া গ্রাম মুস্তাফাপুরের বাসিন্দারা। রাত যত বেড়েছে, আতঙ্ক আর উত্‌কন্ঠাও তত বেশি করে চেপে ধরেছিল তাঁদের। গ্রামে কারও মোবাইল ফোন বেজে উঠলেই আতঙ্কটা চাগাড় দিচ্ছিল এই বুঝি কারও মৃত্যুসংবাদ এল! রবিবার রাত ১২টায় গ্রামের মানুষ মোবাইলে জানতে পারেন, কিছু ক্ষণ আগে সন্ধ্যায় গ্রামেরই প্রৌঢ়া দুলিবালা মণ্ডলকে দাহ করতে যে মিনি ট্রাকটি নবদ্বীপের দিকে রওনা দিয়েছিল, সেটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। একটি দশ চাকার ট্রাকের ধাক্কায় মিনি ট্রাকটি সড়কের পাশে জলায় উল্টে পড়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৫২
শোকার্ত পরিবার। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

শোকার্ত পরিবার। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

রবিবার রাতভোর চোখের পাতা এক করেননি বাগদা থানা এলাকার সীমান্ত-লাগোয়া গ্রাম মুস্তাফাপুরের বাসিন্দারা। রাত যত বেড়েছে, আতঙ্ক আর উত্‌কন্ঠাও তত বেশি করে চেপে ধরেছিল তাঁদের। গ্রামে কারও মোবাইল ফোন বেজে উঠলেই আতঙ্কটা চাগাড় দিচ্ছিল এই বুঝি কারও মৃত্যুসংবাদ এল!

রবিবার রাত ১২টায় গ্রামের মানুষ মোবাইলে জানতে পারেন, কিছু ক্ষণ আগে সন্ধ্যায় গ্রামেরই প্রৌঢ়া দুলিবালা মণ্ডলকে দাহ করতে যে মিনি ট্রাকটি নবদ্বীপের দিকে রওনা দিয়েছিল, সেটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। একটি দশ চাকার ট্রাকের ধাক্কায় মিনি ট্রাকটি সড়কের পাশে জলায় উল্টে পড়ে। জনা চল্লিশ গ্রামবাসী ছিলেন সেখানে। সকলেই কমবেশি জখম হন। এই খবর পেয়ে গ্রামের বহু মানুষ গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থলের দিকে রওনা দেন। সঙ্গে যান বাগদা ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতি তুলসী বিশ্বাস। রাত যত গভীর হয়েছে, ফোনে একের পর এক মৃত্যুসংবাদ এসে পৌঁছয় গ্রামে। কান্নায় ভেঙে পড়তে থাকে একের পর এক পরিবার। সোমবার রাত পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৫। জখম হয়েছেন ৩০ জন। হাঁড়ি চড়েনি গ্রামে কোনও বাড়িতে। মোড়ে মোড়ে জটলা, শোকার্ত মানুষের হাহাকার।

এ দিন গ্রামে গিয়ে কথা হল মিনি ট্রাকে থাকা আহত যুবক তরুণ মণ্ডলের সঙ্গে। তিনি বললেন, “হঠাত্‌ একটা শব্দ হল। তারপরেই দেখি, সামনে জল। কোমর সমান জল থেকে কোনও রকমে উঠে আসতে পেরেছিলাম। আমরা যারা নিজেরাই পাড়ে উঠি, তারাই প্রথমে উদ্ধার কাজে হাত লাগাই। ওই এলাকার মানুষজনও সহযোগিতা করেছেন।” তরুণবাবুর থুতনি কেটে গিয়েছে। বললেন, “বেঁচে ফিরতে পেরেছি, প্রথমটায় যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না।”

গ্রামের মানুষ জানালেন, এখানকার বেশিরভাগ মানুষ মারা যাওয়ার পরে নিয়ে যাওয়া হয় নবদ্বীপের শ্মশানে। ইদানীং এই প্রথা বন্ধের দাবিও উঠছে। তাঁদেরই একজন রামপ্রসাদ মণ্ডল বলেন, “পাশে গঙ্গা ও তীর্থস্থান হওয়ায় সকলে ওখানেই যান। আমি চাই রবিবারের দুর্ঘটনাকে মাথায় রেখে দিয়ে সত্‌কারের কাজে নবদ্বীপে যাওয়া বন্ধ হোক। এতগুলো প্রাণ চলে গেল, কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।”

গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ খেতে কাজ করেন। এখন ধান কাটার কাজ চলছে। কিন্তু সোমবার কেউ কাজে যাননি। প্রিয়জনদের গ্রামে ফেরার অপেক্ষায় সময় গুনছিলেন সকলে। দুর্ঘটনায় মৃত দিনমজুর উজ্জ্বল মণ্ডলের সাত বছরের মেয়ে লাবণী চোখে জল নিয়ে ঘুরছিল। বাবার কথা জানতে চাইলেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। উজ্জ্বলের স্ত্রী বাসন্তীদেবীও বারে বারে জ্ঞান হারাচ্ছিলেন। মৃত কমল রায়ের স্ত্রী মীনুদেবী দুই ছেলে-মেয়েকে বুকে জড়িয়ে কাঁদছিলেন।

সন্ধ্যার কিছু পরে মৃতদেহগুলি একে একে গ্রামে এসে পৌঁছয়। বনগাঁর খয়রামারি শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের। এ বার আর সত্‌কারের জন্য নবদ্বীপমুখী হয়নি ঘরপোড়া পরিবারগুলি।

road accident nabadwip bagda southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy