Advertisement
E-Paper

তদন্তের পরে অপমৃত্যু বদলাল খুনে

রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকা এক প্রৌঢ়কে তুলে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করাতে সাহায্য করেছিলেন দুই ‘সঙ্গী’। পরে তদন্তে উঠে আসে, ওই দুই ‘সঙ্গী’ই নাকি ফোন করে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করেছিলেন বর্ধমান শহরের বিজয়রামের হরিনারায়ণপুরের অশোক দাসকে।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৩২
অশোকবাবুর ছবি হাতে স্ত্রী। ছবি ;উদিত সিংহ।

অশোকবাবুর ছবি হাতে স্ত্রী। ছবি ;উদিত সিংহ।

রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকা এক প্রৌঢ়কে তুলে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করাতে সাহায্য করেছিলেন দুই ‘সঙ্গী’। পরে তদন্তে উঠে আসে, ওই দুই ‘সঙ্গী’ই নাকি ফোন করে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করেছিলেন বর্ধমান শহরের বিজয়রামের হরিনারায়ণপুরের অশোক দাসকে। ঘটনার কয়েক দিনের মাথায় ওই দুই সঙ্গীকে গ্রেফতারও করে পুলিশ।

২০১৪ সালের ১২ মে ঘটনাটি ঘটে। অশোকবাবুর পরিবারের দাবি, ওই দিন সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ একটি ফোন পেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান বছর পঞ্চাশের অশোকবাবু। আর বাড়ি ফেরেননি। খোঁজ করতে গিয়ে পরের দিন সকালে পরিজনেরা জানতে পারেন, দেহের তিন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন নিয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একটি মৃতদেহ রয়েছে। ওই দেহটিই অশোকবাবুর বলে সনাক্ত করেন পরিজনেরা। পুলিশের কাছে ঘটনার কথা লিখে জানান অশোকবাবুর জামাই, বর্ধমান শহরের বাবুরবাগের বাসিন্দা রাজা ভৌমিক। পরে গ্রেফচার হন সুমন রায় ও বিল্বমঙ্গল পুরকায়েত নামে দুই যুবক।

প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা ছিল, গাড়ির ধাক্কায় অশোকবাবু মারা গিয়েছেন। কিন্তু ময়না-তদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরেই ঘটনার মোড় বদলে যায়। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেন্সিক বিভাগ জানিয়ে দেয়, গাড়ির ধাক্কায় নয়, ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে খুন করা হয়েছে অশোকবাবুকে। তারপরে দেহটিকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলে দেওয়া হয়েছে। বর্ধমান থানার তৎকালীন আইসি আব্দুল গফফর তদন্তের দায়িত্ব দেন এসআই সঞ্জয় রায়কে। নাদরার কাছ থেকে দেহটি মিললেও আসল ঘটনাস্থল খুঁজে পাওয়ার জন্য তদন্ত শুরু করেন ওই এসআই। একাধিক লোকের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানতে পারেন, অশোকবাবুকে কোরিয়া-অষ্টগোড়িয়া রোডে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়।

কারা খুন করল?

পুলিশের দাবি, পরিবারের তরফ থেকে সন্দেহজনক কোনও নাম পাওয়া যায়নি। তবে অশোকবাবুর মোবাইল নম্বর-পরীক্ষা করে দেখা যায়, নিখোঁজের দিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে পৌনে সাতটা নাগাদ একই নম্বর থেকে চারটে ফোন এসেছিল তাঁর। পুলিশ ওই নম্বর পরীক্ষা করে দেখেন সেটি কাঁদরসোনা গ্রামের এক মহিলার। কিন্তু ফোনটি ধরেছেন এক যুবক। পুলিশ জানতে পারে, মায়ের নামে নেওয়া সিমটি বাড়ির ছোট ছেলে সুমন রায় ব্যবহার করেন। ঘটনার দিন সকাল থেকে সুমনের সঙ্গে অন্তত ১০-১২ বার নেড়োদিঘির বিল্বমঙ্গল পুরকায়েতের কথা হয়েছে বলেও পুলিশ জানতে পারে। তদন্তকারী অফিসার ওই দু’জনকেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। পুলিশের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদের সময়েই তাঁরা খুনের ঘটনা স্বীকার করে নেন।

• ২০১৪ সালের ১২ মে বর্ধমান শহরের বিজয়রামে রক্তাক্ত দেহ মেলে অশোক দাসের। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা হয়।

• ময়না-তদন্তের পরে জানা যায় ঘটনাটি খুনের।

• পুলিশ তদন্তে জানতে পারে জমির দালালি ও টাকার ভাগের বখরা নিয়ে গোলমালের জেরে দুই সঙ্গীই খুন করেছে তাঁকে। ধরা হয় তাদের।

• চার্জশিট জমা পড়ে। মামলা শুরু হয়। তবে বিচার হয়নি এখনও।

তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, সন্ধ্যা ৬টা ২৫ নাগাদ সুমনের মোবাইল থেকে অশোকবাবুকে ফোন করে বিল্বমঙ্গল। অশোকবাবুকে নাদরাগ্রামের কাছে আসতে বলে তারা। বিল্বমঙ্গল ও সুমনও মোটরবাইকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। তারপর রাস্তার ধারে একটি ঝোপের আড়ালে দু’জনে মিলে অশোকবাবুর হাত-পা ও মুখ, গলায় ধারালো অস্ত্রের কোপ বসায়। পরে মোটরবাইকে এসে সুমনের বাড়ির কাছে পুকুরে অশোকবাবুর মোবাইল ও ধারালো অস্ত্রটি ফেলে দেয়। ফের ঘটনাস্থলে গিয়ে দেহটিকে হাসপাতালে পাঠানোর জন্য স্থানীয়দের সাহায্যও করেছিল। মামলা শুরু হতে তিন প্রত্যক্ষদর্শী-সহ ১৫ জনকে সাক্ষী করে আদালতে চার্জশিট পেশ করে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, অশোকবাবু ও বিল্বমঙ্গল জমির দালালি করত। নবাবহাটের কাছে একটি জমি বিক্রি করে কমিশন বাবদ দু’লক্ষ টাকা পেয়েছিল তাঁরা। সেই টাকার ভাগ নিয়ে গোলমালের জেরেই ওই খুন। পুলিশের দাবি, জেরায় সুমন জানায় মাত্র দশ হাজার টাকার লোভে এই কাজে জড়িয়ে পড়েছিল সে। আপাতত দু’জনেই জামিনে রয়েছেন। অশোকবাবুর স্ত্রী আরতি দাস ও ছোট ছেলে ঝুলন দাসের ক্ষোভ, ‘‘দু’বছর পার হয়ে গেল এখনও সুবিচার পেলাম না।’’

accident murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy