গরু পাচারকারীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ বিধায়ক পুত্রের বিরুদ্ধে। প্রতীকী চিত্র।
গরু পাচার কাণ্ডে জেলে তৃণমূলের বীরভূম জেলার সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। যার তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা (সিবিআই) এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এ বার গরু পাচারকারীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ উঠল বিজেপি বিধায়কের ছেলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানায় গরু পাচারে যুক্ত কারবারিদের একাংশের সঙ্গে ওঠাবসা রয়েছে কুলটির বিজেপি বিধায়ক তথা চিকিৎসক অজয় পোদ্দারের ছেলে তথা বিজেপি নেতা কেশব পোদ্দারের। সম্প্রতি টেলিফোনে দু’জনের কথোপকথনের অডিয়ো ভাইরাল হয়েছে (যদিও সেই অডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)। সেই সূত্রেই উঠছে এই অভিযোগ। আর এ নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিজেপি বিধায়ক। কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠক করে এই অডিয়ো ক্লিপের বিষয়টি প্রকাশ্যে এনেছে তৃণমূল। পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক করে আইনি পদক্ষেপ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিজেপি।
ওই কথোপকথন বিজেপির কুলটি তিন নম্বর মণ্ডলের প্রাক্তন সভাপতি কাঞ্চন সিন্হা এবং মণ্ডলের ইনচার্জ বিভাস সিংহের মধ্যে। তাঁরা স্বীকারও করেছেন ওই কথোপকথনের বিষয়টি। প্রায় সাড়ে চার মিনিটের কথোপকথনে উঠে এসেছে নানা তথ্য। বিভাসের অভিযোগ, বরাকর-সহ কুলটি এলাকায় গরু পাচার হচ্ছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, বিজেপির টিকিটে পুরভোটে লড়াই করেছিলেন রাজু নামে এক ব্যক্তি। ওই রাজুর নাম করে গরু পাচার হচ্ছে বলেও বিভাসের অভিযোগ। কথোপকথনে বিভাসকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘গরুর পয়সা তো ওঠায় রাজু বলে যে গরুর কারবার করে সে। রাজুর কাঁধে হাত রেখে বিধায়ক অজয় পোদ্দার কথা বলে অনেক সময়। যদি অজয় পোদ্দার মিলে নেই (যুক্ত নয়) তা হলে কাঁধে হাত রেখে কী ভাবে কথা বলে?’’
বিভাস আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘এই খবরটি আমি আমাদের বিধায়ক অজয় পোদ্দারকে দিই। ওঁকে বলি, ‘‘যদি আপনি গরু পাচারের বিরুদ্ধে সরব না হন, তা হলে আমি নিজে গিয়ে গাড়ি আটকাব, ঝামেলা করব। সে জন্য আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে হবে।’’ অজয় পোদ্দার বলেন যে, তিনি বিষয়টি জানেন না। কিন্তু আমি যখন বললাম তখন তো উনি জেনে গেলেন। তার পরেও সে ভাবে গরু পাচারের বিরুদ্ধে তাকে কোনও উদ্যোগ নিতে দেখা গেল না। গত তিন মাস ধরে আমি গরু পাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। বিজেপির কোনও নেতা-কর্মীও এটা আটকানোর জন্য এগিয়ে আসছেন না। লাখ লাখ টাকার লেনদেন হয় প্রতি দিন। তবে বিধায়ককে সরাসরি যুক্ত থাকতে আমি দেখিনি। যাঁকে দেখিনি তাঁর কথা বলব না।’’
ওই কথোপকথনের আর এক চরিত্র কাঞ্চনের বক্তব্য, ‘‘বরাকরে ব্যাপক ভাবে গরু পাচার হচ্ছে। এ কথা আমাকে বার বার ফোন করে জানাচ্ছিল বিভাস। আমি সেটা রেকর্ড করি। এর পর আমি আমার উচ্চনেতৃত্বকে পাঠাই। তার কারণ সকলে মিলে এর বিরুদ্ধে সরব হতে হবে। আমি একা পারছি না। আমি রেকর্ডিংটা জেলায় পাঠিয়ে দিয়েছি সেই অভিযোগটা কতটা সত্য তা জানার জন্য। আমরা গরু পাচার নিয়ে সারা বছর লড়াই করি। আমার কাছে যখন খবর এল যে, আমাদের বিধায়কের ছেলে গরু পাচারের সঙ্গে যুক্ত। যে এ কথা বলছে, সে এখানকার বিজেপির দায়িত্বে রয়েছে। সে তো মিথ্যা বলতে পারে না। তাই তদন্ত হওয়া দরকার।’’
এ নিয়ে বিজেপির জেলা সভাপতি দিলীপ দে বলেন, ‘‘এই অডিয়োটা আমার কাছে এসেছে তিন দিন আগে। এর মধ্যে যাঁদের গলা পাওয়া যাচ্ছে তাঁদের এক জন প্রাক্তন মণ্ডল সভাপতি কাঞ্চন সিন্হা তাকে ১৬.০৩.২৩ এ সভাপতি পদ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। এবং আর এক জন হলেন বিভাস সিংহ। তিনি জেলা কমিটির সদস্যও। তাঁদের দু’জনকে শোকজ করা হয়েছে। জেলা কমিটির তরফে তাঁদের ২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছে। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে সেই কেশব পোদ্দার এবং রাজু যাদবের বিরুদ্ধে দল তদন্ত করছে। দল বিশ্বাস করে তাঁরা এই ধরনের কাজে কোনও ভাবেই যুক্ত নেই। তা হলেও আমরা তদন্ত করছি। যদি কিছু আমরা পাই তা হলে দলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
বিজেপি বিধায়ক অজয়ের অবশ্য দাবি, ‘‘গো মাতার কোনও ক্ষতি হলে আমরা রক্ত দিয়ে আটকাব। আমার চরিত্র হনন করার চেষ্টা হচ্ছে। আমি চাই সত্য উদ্ঘাটিত হোক। তদন্ত হোক। কুলটির মানুষ বিশ্বাস করেন তাঁদের বিধায়ককে।’’
এ নিয়ে ময়দানে নেমেছে তৃণমূল। কুলটির তৃণমূল নেত্রী ইন্দ্রাণী মিশ্রর বলেন, ‘‘এই অডিয়োটা আমরাও শুনেছি। এর তদন্ত হওয়া দরকার। কারণ এই অভিযোগটা বিজেপির নেতারাই করেছেন, যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ পদে দলে রয়েছেন। তার মানে অভিযোগটা সত্যি। আমরা চাইছি এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy