E-Paper

নির্বাচনের কাজে গিয়েছে বাস, ক্ষতির অভিযোগ মালিকদের

বাস মালিকেরা জানান, ৬ জুলাই বাসগুলি ভোটের কাজে নেওয়া হয়। ফলে, সে দিন থেকেই বিভিন্ন রুটে বাস পরিষেবা, বিশেষ করে মিনিবাস পরিষেবা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।

সুব্রত সীট

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৩ ০৯:৩১
ভোটকর্মীদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষায় বাস। পশ্চিম বর্ধমানের সালানপুরে। ফাইল চিত্র

ভোটকর্মীদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষায় বাস। পশ্চিম বর্ধমানের সালানপুরে। ফাইল চিত্র

পঞ্চায়েত ভোট শেষ। তবে রবিবারেও বিভিন্ন রুটে মিনিবাস ও বড় বাস খুবই কম চলেছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের বড় অংশেরই। এ দিকে, নির্বাচনের কাজে বাস ও মিনিবাস দিয়ে ব্যাপক লোকসানের সম্মুখীন হতে হয় বলে অভিযোগ জেলার বিভিন্ন বাস মালিক সংগঠনের।

বাস মালিকেরা জানান, ৬ জুলাই বাসগুলি ভোটের কাজে নেওয়া হয়। ফলে, সে দিন থেকেই বিভিন্ন রুটে বাস পরিষেবা, বিশেষ করে মিনিবাস পরিষেবা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। নির্বাচনের কাজ সেরে বাসগুলি ফিরতে-ফিরতে রবিবার ভোর হয়ে যায়। ফলে, এ দিনও অধিকাংশ রুটে বাস পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি বলে অভিযোগ যাত্রীদের। বাস মালিকদের অভিযোগ, প্রায় চার দিন ধরে মিনিবাস নির্বাচনের কাজে আটকে থাকায় দৈনন্দিন আয় ছিল শূন্য।

এ দিকে, নির্বাচনের কাজে বাসগুলি নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের বরাদ্দ অর্থ অপর্যাপ্ত বলে অভিযোগ বাস মালিকদের। বিভিন্ন বাস মালিক সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার বড় বাস পিছু ২,৩০০ টাকা এবং মিনিবাস পিছু ১,৯০০ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বড় বাসের এক মালিক বলেন, “ওই টাকায় চালক ও খালাসিদের মজুরিই ঠিক মতো মেটানো যাবে না। অন্য খরচ তো দূরের কথা!” ‘দুর্গাপুর প্যাসেঞ্জার ক্যারিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের’ সম্পাদক কাজল দে জানান, মিনিবাসে প্রতিদিন চালককে গড়ে ৪০০ টাকা এবং খালাসিকে ৩০০ টাকা করে মজুরি দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে তিন দিনে গড়ে ২,১০০ টাকা খরচ। তা ছাড়া, বাস দেওয়ার আগে ‘চেকিং’ করতেও গড়ে প্রায় ৩০০ টাকা খরচ হয়। তিনি বলেন, “এ ছাড়া বিমা, ফিটনেস প্রভৃতি বাবদ দৈনিক গড়ে ৩০০-৪০০ টাকা খরচ হয়। সেটাও হিসাবের মধ্যে ধরতে হবে।” ‘দুর্গাপুর মহকুমা মিনিবাস অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের’ সম্পাদক অলোক চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কি-ই বা বলব! বিল জমা দিয়ে শেষ পর্যন্ত টাকা কবে পাব, তা-ও জানি না।”

মিনিবাস মালিকেরা জানিয়েছেন, এ বার দুর্গাপুরের দু’টি মালিক সংগঠনের কাছ থেকে ৯০টি ও ৩৫টি এবং অন্ডালের মালিক সংগঠনের কাছ থেকে ৬৫টি মিনিবাস নির্বাচনের কাজে নেওয়া হয়েছিল। আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, মহকুমার বিভিন্ন রুটে ৩৫০টি মিনিবাস চলে। ভোটের কাজে ২৬৪টি মিনিবাস নেওয়া হয়েছিল।

কাজলের ক্ষোভ, পরিস্থিতি যাতে মোটামুটি আয়ত্তের মধ্যে থাকে, সে জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে অন্তত তিন হাজার টাকা করে দেওয়ার জন্য আর্জি জানিয়েছিল ‘অল বেঙ্গল মিনিবাস সমন্বয় কমিটি’। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। জানা গিয়েছে, দুর্গাপুর স্টেশন থেকে বেনাচিতি ভায়া এ-জ়োন (এ-জ়োন রুট) রুটের একটি মিনিবাসে সারা দিনে গড়ে প্রায় ৩,২০০ টাকার টিকিট বিক্রি হয়। পরিষেবা বন্ধ থাকায় তিন-চার দিন ধরে তা বন্ধ। কাজল বলেন, “তেলের দাম মেটানোর সময়েও অনেক বিধিনিষেধ রাখা হয়। গ্যারাজ থেকে ‘স্টার্টিং পয়েন্টে’ যাওয়া-আসার ফলে তেলের খরচ মালিককে দিতে হবে।”

অভিযোগ রয়েছে পরিবহণ কর্মীদেরও। তাঁরা জানিয়েছেন, আগের বার পর্যন্ত দিনে খাওয়ার খরচ হিসাবে ১৭০ টাকা দেওয়া হত। এ বার ৩০ টাকা বাড়ানো হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তা যথেষ্ট নয় বলে দাবি তাঁদের। তাঁদের বক্তব্য, “বহু বুথের আশপাশে খাবার ও জল পাওয়া যায় না। বহু জায়গায় ভোটের সময়ে বেশি দাম দিয়ে খাবার কিনতে হয়। ফলে দু’শো টাকায় দিন চালাতে সমস্যা হয়।”

বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়ার জন্য যোগাযোগ করা হলেও জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) এস অরুণ প্রসাদ ফোন ধরেননি। রবিবার রাত পর্যন্ত জবাব মেলেনি মেসেজেরও। তবে, জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। প্রশাসন শুধু সেই নির্দেশিকা কার্যকর করে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Bengal Panchayat Election 2023 Durgapur Bus Owners

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy