E-Paper

তাপে শুকোচ্ছে আনাজ, ফাঁকা পাইকারি বাজার

গত দেড় মাসে বেশির ভাগ আনাজের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। বর্ষায় ইলিশের ঝোল থেকে রোজের সুক্তো, পাঁচমিশেলি তরকারিতে যে বেগুন বাঙালির বছরভরের সঙ্গী, সেই বেগুন প্রায় অমিল।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৪ ০৮:৩৫

—প্রতীকী চিত্র।

বছরের এই সময় প্রতিদিন পাঁচ কুইন্টাল কাঁকরোল বিক্রি হয় পূর্বস্থলীর কালেখাঁতলার পাইকারি বাজারে। এ বার এক কুইন্টালও বিকোচ্ছে না। আড়তদারদের দাবি, আনাজের জোগানই নেই, বিক্রি কোথাথেকে হবে!

গত দেড় মাসে বেশির ভাগ আনাজের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। বর্ষায় ইলিশের ঝোল থেকে রোজের সুক্তো, পাঁচমিশেলি তরকারিতে যে বেগুন বাঙালির বছরভরের সঙ্গী, সেই বেগুন প্রায় অমিল। কেজি প্রতি ৫০ টাকা থেকে বেড়ে ১০০-১১৫ টাকা কেজিতে খুচরো বাজারে বিকোচ্ছে বেগুন। টোম্যাটো, ডাঁটা, পেঁপের দামও লাফ দিয়েছে মধ্যবিত্তের থলির বাইরে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দশ দিনের মধ্যে আনাজের দামে নিয়ন্ত্রণ আনার নির্দেশ দিয়েছেন। নানা বাজারে অভিযান শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, আনাজ এত দামি হল কেন।

পূর্ব বর্ধমানের ‘আনাজ ভান্ডার’ হিসাবে পরিচিত পূর্বস্থলীর দু’টি ব্লক। এলাকার চাহিদা মিটিয়ে ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশায় আনাজ যায় এখান থেকে। ফড়েরা পূর্বস্থলীর বিভিন্ন পাইকারি বাজারে এসে ট্রাকে নিয়ে যান আনাজ। আড়তদারদের দাবি, মাস খানেকের বেশি সময় ধরে আনাজের জোগান তলানিতে। এলাকার চাহিদাই মিটছে না। বাইরে পাঠানোও একপ্রকার বন্ধ। সমুদ্রগড়, নিমতলা, কালেখাঁতলা, জামালপুরের পাইকারি আনাজ বাজারে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কেনা-বেচা চলে। বুধবার বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুব কম চাষি এসেছেন। তাঁদের আনা আনাজের পরিমাণও কম। আড়তদারদের দাবি, কোথাও জোগান ৭৫ শতাংশ কম, কোথাও ৬০ শতাংশ।

কালেখাঁতলা বাজারের এক আড়তদার প্রসূন ঘোষ বলেন, ‘‘পটল ছাড়া বাকি আনাজের জোগান একেবারে তলানিতে। এই সময় প্রতিদিন পাঁচ কুইন্টাল করে কাঁকরোল বিক্রি হয়। এ বার সেখানে এক কুইন্টালও হচ্ছে না। ঝিঙে, করলা, ঢ্যাঁড়শ, পেঁপের মতো আনাজও কম আসছে।’’ আর এক আড়তদার ক্ষুদিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘মাস দেড়েক ধরে আড়তে আসা চাষির সংখ্যা কমেছে। আনাজও কম আসছে। আনাজ বিক্রি করে কমিশনও মিলছে কম। ফলে আড়ত চালাতে সমস্যা হচ্ছে।’’ তাঁদের দাবি, পরিস্থিতি যা, দ্রুত আনাজের জোগান বাড়বে বলে মনে হচ্ছে না।

কালেখাঁতলা থেকে কিছুটা দূরে জামালপুরের পাইকারি বাজার। ৭০টির বেশি আড়ত রয়েছে সেখানে। স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তথা আড়তদার দীপঙ্কর দাস জানান, এই সময় যথেষ্ট আনাজের জোগান থাকে। এ বার নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় লাগবে।

পূর্বস্থলী ২ ব্লকে এসটিকেকে রোডের পাশে বিস্তীর্ণ এলাকায় আনাজ চাষ হয়। দেখা গিয়েছে, মাচায় থাকা বহু আনাজ গাছ শুকিয়েছে। হলুদ হয়ে গিয়েছে ঝিঙে, বরবটি, করলা, লাফার পাতা। ফুলকপির মতো আনাজ গাছও ঝিমিয়ে রয়েছে। বিশ্বরম্ভা এলাকার এক আনাজ চাষি নির্মল দাস নিজের বিঘা খানেক ফুলকপির জমির ঘাস পরিষ্কার করতে করতে বলেন, ‘‘সাত হাজার ফুলকপির চারা জমিতে বসিয়েছি। প্রচুর সার, অনুখাদ্য দিয়েছি। ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। তবু ফুলকপির চারার বৃদ্ধি নেই।’’ পাশে বিঘে দেড়েক জমিতে ঝিঙে, উচ্ছে, কাঁকরোল এবং লাফার চাষ করলেও ফলন তেমন নেই। চাঁপাতলা এলাকার চাষি কৃষ্ণ মণ্ডল জানান, বিঘে খানেক জমিতে মাসে কুইন্টাল খানেক ঝিঙে হয়। এ বার এক কুইন্টালও হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘‘দু বিঘে জমিতে কপির চাষ করেছিলাম। গাছের বৃদ্ধি না হওয়ায় ওই জমির ১০ কাঠায় ধান চাষ করেছি। চাষের খরচ উঠছে না।’’

বর্ষাকালীন আনাজের এমন বিপর্যয়ের কারণ হিসাবে চাষিরা টানা চড়া রোদকে দায়ী করছেন। তাঁদের দাবি, তাপে গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। ছোট অবস্থায় ফসল ঝরে পড়ছে জমিতে। সেচ, সার দিলেও চাহিদামতো গাছের বৃদ্ধি হচ্ছে না। উল্টে বেগুনের মতো বেশ কিছু আনাজে পোকারউপদ্রব বাড়ে।

জেলার এক কৃষি আধিকারিকের কথায়, ‘‘প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে আনাজের ফলন কমেছে। গরমে আনাজ খেতেই ঝরে যাচ্ছে। পরাগ মিলনেরও সমস্যা হয়। তবে কয়েকদিন হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি শুধরে যাবে।’’

রাজ্যের এক উদ্যান পালন বিভাগের কর্তা পলাশ সাঁতরার পরামর্শ, ‘‘এই সময় জলে দ্রবণীয় জৈব তরল সার আনাজের জমিতে স্প্রে করলে চাষিরা উপকৃত হবেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Vegetables Heatwave Wholesale market Wholesale Price

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy