Advertisement
১৯ মে ২০২৪

মিছিল যেন ‘যেমন খুশি চলো’

সোমবার জাতীয় নাগরিক পঞ্জী (এনআরসি), নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরোধিতা করে তৃণমূলের মিছিল দেখাল এমন কিছু টুকরো ছবি।

বাঁ দিকে, বর্ধমান স্টেশন চত্বরে চলছে সভা। ডান দিকে, শহরে যানজট। নিজস্ব চিত্র

বাঁ দিকে, বর্ধমান স্টেশন চত্বরে চলছে সভা। ডান দিকে, শহরে যানজট। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:৫৭
Share: Save:

এক দল জড়ো হয়ে মিছিল শুরুর অপেক্ষা করছেন। আর এক নেতা ততক্ষণে নিজের মতো করে শুরু করে দিয়েছেন পথ চলা। এ দিকে, মিছিলের গতিবিধি বুঝতে না পেরে সিগন্যাল দিতে গিয়ে থমকে যাচ্ছেন ট্র্যাফিক পুলিশের কর্মীরা। পথচারী, বাস-গাড়িতে অপেক্ষমান সাধারণ মানুষের হাল আরও খারাপ।

সোমবার জাতীয় নাগরিক পঞ্জী (এনআরসি), নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরোধিতা করে তৃণমূলের মিছিল দেখাল এমন কিছু টুকরো ছবি। যানজট দেখা গেল স্টেশন চত্বর, বীরহাটা, পারবীরহাটা এলাকায়। মিছিল শেষ দলের কর্মীদের অনেকেই বললেন, ‘আরও সংগঠিত হওয়া উচিত ছিল।’

যদিও মিছিলে দলের কর্মীদের বিশৃঙ্খলার বিষয়টি এড়িয়ে কাটোয়া যাওয়ার পথে জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘আমরা সবাই মিলে এনআরসি ও সিএএ-র বিরোধীতায় পথে নেমেছি। প্রচুর মানুষ আমাদের সঙ্গে স্বেচ্ছায় এসেছেন, এটাই বড় কথা।’’

এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ বর্ধমানের দুই মহকুমার বিভিন্ন ব্লক ও পুরসভা এলাকার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মিছিল হওয়ার কথা ছিল। পৌনে এক ঘন্টা পার হয়ে যাওয়ার পরেও মিছিল শুরু হচ্ছে না দেখে সভাপতি নিজেই মিছিলটি সঙ্ঘবদ্ধ করতে শুরু করেন। মহিলাদের সামনে রেখে মিছিল শুরু করার পরামর্শ দেন তিনি। কিন্তু দেখা যায়, শহরের এক ‘প্রভাবশালী’ নেতা ও দলের শ্রমিক সংগঠনের এক পদাধিকারী মিছিল শুরু করে দিয়েছেন আর এক দিকে। হতচকিত হয়ে পড়েকার্জন গেটের ট্র্যাফিক পুলিশ কর্মীরা। গাড়ি যাতায়াত বন্ধ করে ওই মিছিলকে পার করানো হয়। কিন্তু তারপরে বেশ কিছুক্ষণ মিছিল ছিল না। এ দিকে সিগন্যাল বন্ধ থাকায় ধৈর্য্য হারাচ্ছিলেন আটকে থাকা পথচারী, মোটরবাইক আরোহী, বাস-গাড়ির যাত্রীরা। শেষে মিছিল আটকে পুলিশ যাত্রীদের ছেড়ে দেয়। ততক্ষণে স্টেশন সংলগ্ন এলাকা, বীরহাটা, পারবীরহাটা-সহ বেশ কিছু জায়গা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। যাত্রীদের একাংশের দাবি, বীরহাটা সেতুর উপর বাসের লাইন থাকলেও পুলিশের তৎপরতায় বেশি ভোগান্তি হয়নি।

দুপুর ১টা নাগাদ টাউন হল থেকে মূল মিছিল শুরু হয়ে স্টেশনে গিয়ে শেষ হয়। স্বপন দেবনাথ, ভাতারের বিধায়ক সুভাষ মণ্ডল, খণ্ডঘোষের বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগ, মেমারির বিধায়ক নার্গিস বেগম, জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়ারা মিছিলে হাঁটার সময় চরম ‘বিশৃঙ্খলা’ দেখা যায়। কখন, কোথায় মিছিল দাঁড়িয়ে পড়ছে, তার কোনও হদিশ পুলিশ পাচ্ছিল না। তৃণমূলের একাংশেরই দাবি, যে যার মতো করে মিছিলে হাঁটছিলেন। সারিবদ্ধ না হওয়ায় সমস্যা হয়েছে। স্টেশনের অনুসন্ধান কেন্দ্রের সামনে সভা হওয়ার জন্য রেল যাত্রীরাও চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন। সভার শেষে এক বিধায়ক বলে ফেলেন, “মিছিল তো নয়, যেমন খুশি চলোর প্রতিযোগিতা হচ্ছিল। এ ধরণের মিছিল করতে হলে শুধু লোক আনা নয়, সংগঠিত করার দায়িত্ব নিতে হবে।’’

সভায় স্বপনবাবু বলেন, ‘‘এ মাটির সবার। এ মাটিকে আমরা ভাগ হতে দেব না। সেই জন্যই আন্দোলন।’’ বর্ধমান শহরে যে সভা-মিছিল হল, সেটাই পাড়ায় পাড়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেন তিনি। দলের মহিলাদের উদ্দেশে তাঁর মন্তব্য, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্লোগানকে সামনে রেখে আপনাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এনআরসি, সিএএ নিয়ে বোঝাতে হবে। বলতে হবে, মায়ের মতো মাটিরও কোনও ধর্ম হয় না। মাটিকে ভাঙার চক্রান্ত রুখে দিতে হবে।’’

জেলা তৃণমূলের মহিলা সভানেত্রী শিখা দত্ত সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘বিভিন্ন মহকুমায় বৈঠক করে স্বপনদার পরামর্শকে কী ভাবে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যায়, তার রূপরেখা তৈরি করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC CAA Citizenship Amendment Act
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE