Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
football

lady referee: মাঠে সীমার বাঁশিতে থমকে যান খেলোয়াড়েরা

‘২৬ তম উইমেন্স ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ’-এর দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। তাঁর ভূমিকায় গর্বিত জেলার ফুটবল প্রেমীরাও।

সীমা বৈরাগী।

সীমা বৈরাগী। নিজস্ব চিত্র।

প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
গুসকরা শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:২২
Share: Save:

মাঠ ভর্তি দর্শকের মাঝে ফুটবল পায়ে দৌড়চ্ছেন খেলোয়াড়েরা। মুখে বাঁশি নিয়ে সে খেলা পরিচালনা করছেন বছর তিরিশের সীমা বৈরাগী। তাঁর বাশির আওয়াজে থমকাচ্ছেন তাবড় ফুটবল খেলোয়াড়েরা। পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রথম মহিলা রেফারি হিসাবে গত ২৮ নভেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত কেরলের কোঝিকোড়ে অনুষ্ঠিত ‘২৬ তম উইমেন্স ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ’-এর দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। তাঁর ভূমিকায় গর্বিত জেলার ফুটবল প্রেমীরাও।

ভাতারের রায় রামচন্দ্রপুর কলোনির বাসিন্দা সীমার উড়ানের পথ অবশ্য সহজ ছিল না। তাঁর বাবা মহেন্দ্র বৈরাগী কলের মিস্ত্রি। তিন ভাই-বোনের পড়াশোনা, সংসার চালানোর খরচ সামলাতে বিড়ি বাঁধেন মা অঞ্জলি। তবে ছোট থেকেই ফুটবল সীমার নেশা। মাহাতা হাইস্কুলে পড়ার সময় ফুটবল খেলা শুরু। পাড়ার দাদাদের সঙ্গে জঙ্গল ঘেরা মাঠে অনুশীলনে যেতেন। পরে, গ্রাম থেকে গুসকরা কলেজ মাঠে খেলতে আসা। সেখানেই রেফারি বিনয় রায়ের নজরে পড়েন তিনি।

সীমার কথায়, ‘‘বিনয়দা আমাকে প্রথম রেফারি হতে উৎসাহ দেন। তিনিই ২০১৫ সালে রেফারির প্রশিক্ষণের জন্য বর্ধমান রেফারি অ্যাসোসিয়েশনে যোগাযোগ করিয়ে দেন।’’ বছর দু’য়েক পরে সীমা যোগ দেন ‘কলকাতা রেফারি অ্যাসোসিয়েশন’-এ।

লড়াই আরও কঠিন হয়। সীমার দাবি, গুসকরার মত মফস্‌সল শহর থেকে আরও প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরের এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে কলকাতায় যাতায়াত করে প্রশিক্ষণ নেওয়া খুব সহজ ছিল না। বহু দিন হাওড়া, বর্ধমানের প্ল্যাটফর্মেই রাত কাটাতে হয়েছে তাঁকে। আবার কোনও কোনও দিন গভীর রাতে ট্রেনে গুসকরায় নেমে সাইকেলে করে বাড়ি ফিরেছেন তিনি। তবে লড়াইয়ের দিনগুলোয় বন্ধু, ব্যান্ডেলের বাসিন্দা সোনালি বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহায্য তাঁকে সাহস জুগিয়েছে। সীমা বলেন, ‘‘ফুটবল নিয়ে আমি আলাদা কিছু করতে চেয়েছিলাম। তাই যে সময় গ্রামের মাঠে কোনও মেয়েকে ফুটবল পায়ে দেখা যেত না, তখন আমি ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল মাঠে গিয়েছি। রেফারি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ তাঁর মনে পড়ে, ‘‘অনেক কটূক্তি শুনতে হয়েছে। তবে বাবা-মা সব সময় আমার পাশে থেকেছেন।’’

জেলা এবং কলকাতার মাঠে খেলার পাশাপাশি, ২০২০ সালে ওড়িশার ভুবনেশ্বরে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের ‘খেলো ইন্ডিয়া’ প্রতিযোগিতায় ফুটবলের ‘টেকনিক্যাল অফিশিয়াল’ হিসাবে দায়িত্ব সামলান তিনি। আগামী দিনে ফিফার হয়ে খেলা পরিচালনার স্বপ্ন দেখেন ভাতারের মেয়ে। এখনও নিয়মিত প্রশিক্ষণ চলছে তাঁর। সীমার মা বলেন, ‘‘মেয়ের ছোট থেকেই ফুটবল খেলার ঝোঁক। ও স্বপ্ন দেখে দেশের হয়ে বড় মাঠে খেলা পরিচালনা করবে। পড়শিরা অনেকে অনেক কথা বলেছে। আমরা মেয়ের উপরেই ভরসা রেখেছি। ও নিশ্চয় আরও বড় হবে।’’

‘বর্ধমান জেলা রেফারি অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক প্রভাতকুমার রাউত, কার্যকরী কমিটির সদস্য শিবু রুদ্ররা বলেন, ‘‘অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে জেলার প্রথম মহিলা রেফারি হিসাবে জাতীয় দলে খেলা পরিচালনা করছেন সীমা। ওঁর এই সাফল্যে আমরা গর্বিত। আর্থিক ভাবে বিরাট কিছু লাভ নেই জেনেও ফুটবলের জন্য সীমার এই আত্মত্যাগ ওঁকে এতটা পথ নিয়ে এসেছে। এখন সীমা ন্যাশনাল ক্যাটিগরি ২-এ রয়েছেন।’’ ‘কলকাতা রেফারি অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক উদয়ন হালদারও বলেন, ‘‘সীমা ফিফা-র আন্তর্জাতিক মঞ্চে খেলা পরিচালনার স্বপ্ন দেখে। আমরা আশাবাদী ও পারবে। প্রতিকূলতা আছে। আমরা যতটা পারি, সাহায্য করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

football referee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE