Advertisement
E-Paper

চকদিঘির বাগানবাটী জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে সৌমিত্রর ‘ঘরে বাইরে’ ছবির স্মৃতি

চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে চকদিঘির জমিদারদের বাগানবাটীতে টানা বেশ কয়েক দিন ‘ঘরে বাইরে’ ছবির শ্যুটিং করেছিলেন সৌমিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২০ ১২:৫২
চকদিঘির বাগানবাটী।নিজস্ব চিত্র।

চকদিঘির বাগানবাটী।নিজস্ব চিত্র।

চিকিৎসকরা সব রকম ভাবে চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত জীবন যুদ্ধে হার মানলেন বাংলা চলচ্চিত্র ও নাট্য জগৎতের নক্ষত্র ফেলুদা তথা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।তাঁর প্রয়াণে শোকাতুর গোটা বাংলা। শোকে বিহ্বল পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের চকদিঘির বাসিন্দারাও। চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে চকদিঘির জমিদারদের বাগানবাটীতে টানা বেশ কয়েক দিন ‘ঘরে বাইরে’ ছবির শ্যুটিং করেছিলেন সৌমিত্র। সেই সময়ে প্রিয় শিল্পীকে এক বার কাছ থেকে দেখতে নাওয়া-খাওয়া ভুলে চকদিঘির বহু মানুষ পড়ে থাকতেন ওই বাগানবাটীতে। সে সময় চকদিঘির কয়েক জন যুবক সত্যজিৎ রায়ের অনুরোধে ‘ঘরে বাইরে’ ছবিতে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ও করেছিলেন। আজ আর সৌমিত্র নেই। তবে তাঁর স্মৃতি জড়িয়ে আছে চকদিঘির বাসিন্দাদের মনে।

ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্বকালে এই বাংলায় জমিদারি ব্যবস্থার পত্তন হয়। সেই সমসাময়িক কালের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে জামালপুরের চকদিঘির জমিদারদের নামও। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জমিদারি প্রথা বিলীন হয়ে গেলেও ১০০ বিঘা জমি জুড়ে থাকা চকদিঘির বাগানবাটী আজও সেই জমিদারি ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। যার কোণায় কোণায় ছড়িয়ে রয়েছে জমিদারি রাজত্বের নানা নিদর্শন ।

পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন চকদিঘির জমিদার পরিবারের সবচেয়ে কাছের মানুষ। এই জমিবার বংশের খ্যাতি শীর্ষে পৌঁছেছিল জমিদার সারদাপ্রসাদ সিংহরায়ের হাত ধরে। চকদিঘি বাগানবাটীর পরিবেশ মুগ্ধ করেছিল খ্যাতনামা চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়কে। আশির দশকে তাঁর পরিচালিত ‘ঘরে বাইরে’ ছবির প্রায় পুরো শ্যুটিংই হয়ছিল এই বাগানবাটীতে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়,ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত-সহ বেশ কয়েকজন শিল্পী ‘ঘরে বাইরে’ ছবির শ্যুটিংয়ের জন্য চকদিঘির বাগানবাটীতে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন। সেই ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর চকদিঘি জমিদার বাড়ির পরিচিতি দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

সত্যজিৎ রায়কে চেয়ারে বসিয়ে বৈঠকখানা থেকে উপরের তলায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ফাইল চিত্র।

সত্যজিৎ রায়ের অনুরোধে ‘ঘরে বাইরে’ ছবিতে পালকিবাহকের চরিত্রে চকদিঘি এলাকার যে চার জন অভিনয় করেছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন হলেন সত্যজিৎ সেন। সে দিনের যুবক সত্যজিৎ সেন এখন সত্তরোর্ধ্ব। বয়সের ভারে তিনিও ভারাক্রান্ত। রবিবার বিকেলে চকদিঘির বাগানবাটীতে দাঁড়িয়ে সত্যজিৎ বলেন, “সৌমিত্রবাবু আর বেঁচে নেই এ কথাটা ভাবতেই আমার কষ্ট হচ্ছে। শ্যুটিংয়ের স্মৃতি রোমন্থন করে সত্যজিৎ বলেন, “টানা এক সপ্তাহেরও বেশি দিন বাগানবাটীতে শ্যুটিং হয়েছিল। সেই সময়ে প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়, তাঁর স্ত্রী বিজয়া রায় এবং পুত্র সন্দীপ রায় বাগানবাটীতেই থাকছিলেন। তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় , স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত , ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অন্য শিল্পীরা।

সত্যজিৎ আরও বলেন, “চকদিঘির জমিদারদের একটি বাড়ি তিনি দেখাশোনা করতাম। সেই সুবাদে শ্যুটিং চলাকালীন বাগানবাটীর বৈঠকখানার ঘরের কাছে যেতে পারতাম। এক দিন সৌমিত্রবাবু এবং সত্যজিৎ রায় বৈঠকখানা ঘরের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখন হঠাৎই সত্যজিৎ রায় আমাকে ডেকে বলেন পালকি বাহকের চরিত্রে আমার কয়েক জন যুবককে প্রয়োজন। তুমি জোগাড় করে দিতে পারবে?” তাঁর সেই আপ্লুত হয়ে তিনি ও গ্রামের আরও তিনজন পালকি বাহকের পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন বলে জানান সত্যজিৎ। এছাড়াও সত্যজিৎ রায় এক দিন তাঁদের অনুরোধ করেছিলেন চেয়ারে বসিয়ে তাঁকে বৈঠকখানা ঘরের নিচ তলা থেকে উপরের তলায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। সেই অনুরোধও তাঁরা পূরণ করেছিলেন বলে জানান সত্যজিৎ।

বাগানগাটীর লাগোয়া একটি বাড়িতে বসবাস করেন কাঞ্চন ঘোষ। তিনি বলেন, “ঘরে বাইরে সিনেমার শ্যুটিং চলাকালীন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে এক বার কাছ থেকে দেখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সেই সৌভাগ্য হয়নি। তবে কিছুটা দূর থেকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে দেখতে পেয়েছিলাম। ওই দৃশ্যে ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোড়ায় চেপেছিলেন আর কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন সৌমিত্রবাবু। পরে বাগানবাটীর অদূরে হয়েছিল একটি চালাঘর পোড়ানোর দৃশ্যের শ্যুটিং। কাঞ্চন আরও বলেন , সৌমিত্রবাবু মারা গিয়েছেন শুনে চকদিঘি এলাকার বাসিন্দারা মর্মাহত। তবে তাঁকে আজীবন মনে রাখবেন চকদিঘির বাসিন্দারা।”

Soumitra Chatterjee Chakdighi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy