E-Paper

প্রতিবন্ধকতায় হার না মানাই লক্ষ্য মঞ্জুর

মঞ্জু জানান, তাঁর স্বামী দীপক দে মিষ্টির দোকানে কারিগরের কাজ করতেন। ২০২১ সালে এক দিন দীপকের জ্বর আসে।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:৫২
কাজে ব্যস্ত মঞ্জু।

কাজে ব্যস্ত মঞ্জু। নিজস্ব চিত্র ।

বছর চারেক আগেও কখনও ভাবেননি, সংসারের হাল ধরতে হবে তাঁকেই। করোনা-কালে স্বামীর মৃত্যুর পরে, পরিচারিকার কাজ করবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু তাঁর একটি হাতের দু’টি আঙুল না থাকায়, সে কাজে রাখতে চাননি কেউ। কিন্তু তিনি দমে যাননি। প্রথমে হোটেলে রুটি তৈরির কাজ, তার পরে সেলাইয়ের কাজ, ছেলেমেয়েকে মানুষ করতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন পাণ্ডবেশ্বরের নামোপাড়ার মঞ্জু দে।

মঞ্জু জানান, তাঁর স্বামী দীপক দে মিষ্টির দোকানে কারিগরের কাজ করতেন। ২০২১ সালে এক দিন দীপকের জ্বর আসে। ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফেরার পরে, মঞ্জুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়েন তিনি। সেখানেই মৃত্যু হয়। মঞ্জু জানান, তখন বছর বারোর মেয়ে ও বছর চারেকের ছেলেকে নিয়ে তাঁর দিশাহারা অবস্থা। ঝাড়খণ্ডে বাপের বাড়ি চলে যান। তাঁর কথায়, ‘‘স্বামীই ছেলেমেয়েদের স্কুল-সহ সব ব্যবস্থা করত। ছেলেমেয়েও বাবার কাছে সব কিছুতে অভ্যস্ত ছিল। বাপের বাড়ি যাওয়ার পরে, আমার বাবা সেখানেই থেকে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল, শ্বশুরবাড়ি ফিরে গিয়ে ছেলেমেয়েকে মানুষ করাই ভাল।’’

মঞ্জু জানান, ফিরে আসার পরে শ্বশুরবাড়ির লোকজন মানসিক ভাবে সব রকম সহযোগিতা করেছেন। তবে তিনি পরিচারিকির কাজ করার কথা ভাবলেও, একটি হাতের দু’টি আঙুল না থাকায়, কেউ কাজে রাখেননি। এর পরে তিনি একটি হোটেলে দৈনিক ৩০ চাকার বিনিময়ে রুটি তৈরির কাজ শুরু করেন। পরে মজুরি ৫০ টাকা হয়। এরই মধ্যে একটি সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সেলাইয়ের কাজ শেখেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেলাইয়ের বরাত নিয়ে কাজ শুরু করেন।

মঞ্জু বলেন, ‘‘যাঁদের হোটেলে রুটি বানাতাম তাঁরাই আমাকে বিনা পয়সায় একটি সেলাইয়ের যন্ত্র ব্যবহার করতে দিয়ে সহায়তা করেন। ছেলেমেয়েদের নিখরচায় পড়িয়েছেন পাড়ার তিন গৃহশিক্ষক। ছেলে পেটের জটিল সমস্যায় ভুগছিল। প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় তাকে চেন্নাইয়ে চিকিৎসা করানো হয়েছে।’’ তিনি আরও জানান, মেজো ভাসুর ও পাড়ার ছেলেরা চাইল্ড হেল্পলাইন থেকে মাসিক অনুদানের ব্যবস্থা করেন।‌ একটি সোনার বালা বিক্রি করে এখন একটি সেলাইয়ের যন্ত্র কিনেছেন। বছরখানেক আগে পাড়ার লোকেরাই পাশে দাঁড়িয়ে একটি দোকান করে দিয়েছেন। দর্জি হিসাবে পরিচিতি বাড়ছে তাঁর।

মঞ্জু বলেন, ‘‘স্বামী বেঁচে থাকতে বাড়ির কাজ ছাড়া কিছু করতে হয়নি। কিন্তু ছেলেমেয়েরা এখন আমার দিকে তাকিয়ে।‌ শ্বশুরবাড়ি ও পড়শিদের সাহায্যে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। মেয়ে একাদশ শ্রেণিতে ও ছেলে‌ দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। ওরা মানুষ হলেই ওদের বাবার স্বপ্ন পূরণ হবে।‌’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Pandaveshwar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy