Advertisement
E-Paper

‘বিনা চিকিৎসায় মরতে দেব না’, ভ্যান ছোটান রবিউল

সুপ্রকাশ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২১ ০৫:২৩
শেখ রবিউল হক।

শেখ রবিউল হক। নিজস্ব চিত্র।

করোনা কেড়েছে মা-কে। চোখের সামনে দেখেছেন রোগী নিয়ে যাওয়ার গাড়ি ভাড়া নিয়ে ‘কালোবাজারি’। প্রতিবাদে নিজের রিকশা ভেঙে ভ্যান তৈরি করেছেন তিনি। তাতেই বিনামূল্যে করোনা রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছে দিচ্ছেন সত্তর বছরের রবিউল।

শেখ রবিউল হক বর্ধমান শহরের বাবুরবাগের বাসিন্দা। মাসখানেক আগে তাঁর বাড়ির পাশে এক বৃদ্ধা করোনা আক্রান্ত হন। অভিযোগ, তাঁকে ফেলে পালিয়ে যান বাড়ির অন্যরা। বিনা চিকিৎসায় বাড়িতেই মারা যান একাকী মহিলা। রমজান মাসে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৮৮ বছরের তাঁর নিজের মা-ও। ওই বৃদ্ধের দাবি, ‘‘মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য টোটো ভাড়া করেছিলাম। তিন হাজার টাকা নিয়েছিল। অভাবের সংসারে অনেক কষ্টে মাকে হাসপাতালে নিয়েও গেলেও বাড়ি ফেরাতে পারিনি। তার পরেই ঠিক করি, আর কাউকে যেন বাড়িতে মরতে না হয়।’’

ইচ্ছে থাকলেও সাধ্য ছিল না। একমাত্র সম্বল রিকশাটাই ভেঙে ফেলেন তিনি। আরও তিন হাজার টাকা খরচ করে সেটিকে ভ্যানে পরিণত করেন। ভ্যানের গায়ে ‘অসহায় করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাসপাতাল পরিষেবা দেওয়া হবে’ পোস্টার সাঁটিয়ে শুরু হয় পথচলা। নিখরচায়। বর্ধমান শহরের নার্স কোয়ার্টার মোড়ে সারা দিন ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। ডাক পড়লেই ছুটে চলেন রোগী পৌঁছতে।

যে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন, তা ভেঙে ফেলায় এখন ভাত জোগাড় হয় না রোজ। রবিউল জানান, একে বিধিনিষেধের কড়াকড়ি। তার উপরে স্ত্রী, ছেলে নিয়ে তিন জনের সংসার। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাহায্যেই কোনও রকমে চলছে। বার্ধক্য ভাতা নেই। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। তবুও সঙ্কল্পে অটল তিনি। রবিউলের অভিযোগ, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্স চালক, টোটো চালকেরা অনেকেই বেশি ভাড়া চাইছেন। এটা কি ব্যবসার সময়? বিনা চিকিৎসায় কাউকে মরতে দেব না। যত দিন প্রাণ থাকবে এই কাজ করব।’’

এখনও পর্যন্ত হটুদেওয়ান, পীরবাহারাম, দুবরাজদিঘি থেকে বেশ কয়েকজন করোনা রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। আর নিজের সুরক্ষা? বৃদ্ধ জানান, পরিচিতেরা একটি পিপিই কিট দিয়েছেন। কিছু মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ারও পেয়েছেন। সে সব দিয়েই সাবধান থাকার চেষ্টা করছেন।

রবিউলের স্ত্রী রেহেবা বিবিও স্বামীর পাশে আছেন। তাঁর কথায়, ‘‘উনি আমাদের পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। ছেলে ছোট। বাড়িতে পদে পদে অভাব। তবু ওঁর কাজে আমরা খুশি। তবে সরকারের তরফে কোনও সাহায্য পেলে উপকার হত।’’

স্থানীয় বাসিন্দা কিশোর মাকড় বলেন, ‘‘উনি এই বয়সে যে কাজ করছেন, তা কুর্নিশযোগ্য। প্রশাসনের উচিত এই সব মানুষের পাশে দাঁড়ানো।’’ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক সন্তু ঘোষও বলেন, ‘‘ওঁকে অনেক দিন ধরে চিনি। কঠিন পরিস্থিতিতে ওঁরাই দৃষ্টান্ত।’’ বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস বলেন, ‘‘খুবই ভাল কাজ। কী ভাবে ওঁকে সাহায্য করা যায়, দেখছি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy