Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

শহরের রাস্তায় প্রকাশ্যে ছিনতাই, পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা

গলার হারটি সোনার ছিল না। তবু মোটরবাইকে চড়ে আসা দুষ্কৃতীরা টান মারলে তিনি রুখে দাঁড়াতে দ্বিধা করেননি। কলার চেপে পাকড়ে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন এক জনকে। গুলি চালিয়ে কোনও মতে ওই দুষ্কৃতীরা পালিয়ে গেলেও শুক্রবার সকালে প্রকাশ্য দিবালোকে রাস্তায় এই ঘটনা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে বর্ধমান শহরের নিরাপত্তা নিয়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৪ ০০:৪৪
Share: Save:

গলার হারটি সোনার ছিল না। তবু মোটরবাইকে চড়ে আসা দুষ্কৃতীরা টান মারলে তিনি রুখে দাঁড়াতে দ্বিধা করেননি। কলার চেপে পাকড়ে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন এক জনকে। গুলি চালিয়ে কোনও মতে ওই দুষ্কৃতীরা পালিয়ে গেলেও শুক্রবার সকালে প্রকাশ্য দিবালোকে রাস্তায় এই ঘটনা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে বর্ধমান শহরের নিরাপত্তা নিয়ে।

এলাকায় পরপর ছিনতাইয়ের ঘটনা সত্ত্বেও পুলিশ নিষ্ক্রিয়, অভিযোগ তুলেছেন ভাতছালা, শাঁকারিপুকুর এলাকার বাসিন্দারা। পুলিশকে জানানো হলেও কোনও লাভ হয় না, উল্টে এই নিষ্ক্রিয়তায় দুষ্কৃতীদের সাহস আরও বাড়ছে বলে তাঁদের অভিযোগ। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।

ভাতছালার বাসিন্দা তারা চক্রবর্তী জানান, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ তিনি বর্ধমানের পুলিশ লাইনে এক আত্মীয়ের বাড়িতে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরোন। রিকশা ধরার জন্য যখন রাধারানি স্টেডিয়ামের কাছে একটি গলি হেঁটে পেরোচ্ছিলেন, তখনই তাঁর গলার হার ধরে টান মারে দুষ্কৃতীরা। তিনি মোটরবাইকে থাকা দুই দুষ্কৃতীর সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু করে দেন। তাতে তাদের মোটরবাইকটি গড়িয়ে পড়ে রাস্তায়। হার ছেড়ে তখন দুষ্কৃতীরা পালানোর চেষ্টা করলে এক কলার ধরে ফেলেন তারাদেবী। অন্য জন তখন আগ্নেয়াস্ত্র বের করে দু’বার গুলি ছোড়ে বলে অভিযোগ তারাদেবীর। তখন তিনি কলার ছেড়ে দিলে মোটরবাইক নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা।

তারাদেবী এই ঘটনা নিয়ে পুলিশের কাছে একটি জেনারেল ডায়েরি করেছেন। পুলিশ সুপার মিরাজ খালিদ তাঁর সঙ্গে গোটা ব্যাপারটি নিয়ে দীর্ঘক্ষণ কথাও বলেছেন। তবে পুলিশ এখনও ওই দুষ্কৃতীদের খুঁজে বের করতে পারেনি। আর তাতে ক্ষোভ আরও বেড়েছে এলাকাবাসীর। তাঁদের অভিযোগ, বর্ধমান-আরামবাগ রোড থেকে শাঁকারিপুকুরের পুরনো ডিআইবি অফিসের কাছ থেকে যে রাস্তা সর্বমঙ্গলা রোডের দিকে গিয়েছে, সেখানে ও তার আশপাশের গলিতে মাঝেমধ্যেই ছিনতাই হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মানিক দত্তের অভিযোগ, “এ ভাবে দিনের বেলা এলাকায় পরপর ছিনতাই সত্ত্বেও পুলিশ নিষ্ক্রিয়। ছিনতাইয়ের সঙ্গে যুক্ত এক জনকেও গ্রেফতার করা হয়েছে বলে তো শুনিনি।” অপর বাসিন্দা তপন মণ্ডলের দাবি, “পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় ছিনতাইকতারীরা কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, শুক্রবার সকালের ঘটনাই তার প্রমাণ।” এলাকারই এক বধু জানান, “আমি পারতপক্ষে ওই রাস্তা ব্যবহার করি না। এক বার আমার গলার হার এই রকম ভাবেই ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। তাতে আমি গলায় আঘাতও পেয়েছিলাম।”

গলার হার সোনার না হওয়া সত্ত্বেও ঝুঁকি নিয়ে বাধা দিতে গেলেন কেন? তারাদেবী বলেন, “রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে পারব না না কি! এ কী মগের মুলুক? গলায় হার ধরে টানবে কেন ওরা? আচমকা পিস্তল দেখে ও গুলির শব্দে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। না হলে ওদের ছাড়তাম না!” বর্ধমান থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়ে পুলিশের কাছেও তিনি প্রশ্ন তোলেন, “রাস্তাঘাটে কি নিরাপদে হাঁটতে পারব না?” তারাদেবী বলেন, “পুলিশ সুপার আমাকে বলেছেন, তাঁরা ঘটনার তদন্ত করবেন। শহরের মধে দিনদুপুরে এমন ঘটনা ঘটা উচিত নয়।”

পুলিশ সুপার বলেন, “ওই মহিলা যথেষ্ট সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। সাহসিকতার জন্য আমরা তাঁকে পুরষ্কার দেব। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের পরেই তা দেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

burdwan snatching
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE