Advertisement
E-Paper

সামনের লড়াই জিততে হলে প্রতি ব্লকে কেষ্ট চাই, প্রতি পঞ্চায়েতে আরাবুল

সহজ যুক্তিতে মনে হয়, যাবে। রাজ্যস্তরে এবং পঞ্চায়েত স্তরে যদি একই দল থাকে, তাতে দুটো সুবিধা হওয়ার কথা।

অমিতাভ গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৮ ২১:১১
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

রাস্তা জুড়ে খড়্গ হাতে দাঁড়়িয়ে থাকা উন্নয়নের সঙ্গে মোলাকাত হচ্ছে মাসখানেক ধরেই। প্রশ্ন হল, বাংলার রাজনীতি অনুব্রত মণ্ডলের সাক্ষাৎ পাওয়ার আগে মানুষ ‘উন্নয়ন’ বলতে যা বুঝত— এখনও দুনিয়ার কিছু প্রান্তে মানুষ ‘উন্নয়ন’ বলতে যা বোঝে— অর্থাৎ রাস্তা, আলো, জল, সেচ, বাঁধ ইত্যাদি, তৃণমূল কংগ্রেস যদি দিদির কথা অনুযায়ী ১০০ শতাংশ আসনই দখল করে নেয়, এগুলোর কি দেখা পাওয়া যাবে?

সহজ যুক্তিতে মনে হয়, যাবে। রাজ্যস্তরে এবং পঞ্চায়েত স্তরে যদি একই দল থাকে, তাতে দুটো সুবিধা হওয়ার কথা। এক, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় বিভিন্ন খাতে টাকা আদায় করার জন্য অপেক্ষাকৃত কম প্রশাসনিক বাধার মুখোমুখি হতে হবে। দুই, যেহেতু পঞ্চায়েতে কাজ হলেও তার রাজনৈতিক লাভ দলের খাতাতেই যাবে, ফলে রাজ্য সরকারেরও আগ্রহ থাকবে পঞ্চায়েতকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়ার। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বিশেষ কিছু উন্নয়নমূলক কাজের ক্ষেত্রে একেবারে নিচুস্তরেই কাজ হয় সবচেয়ে ভাল। অর্থাৎ, রাজ্য সরকারের চেয়ে কিছু কাজের ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত স্তরের কর্মকর্তারা বেশি কার্যকর হবেন। তা হলে কি ধরে নেওয়া যায়, মানুষের ভোটেই হোক বা গায়ের জোরে, তৃণমূল কংগ্রেস যদি সত্যিই গোটা রাজ্যের সব পঞ্চায়েত দখল করে নিতে পারে, তা হলে উন্নয়নের ঢল নামবে?

এই ধরে নেওয়ার পথে মস্ত বাধা আর এক গবেষণার ফল। অধ্যাপক দিলীপ মু‌খোপাধ্যায় ও অধ্যাপক সন্দীপ মিত্ররা বেশ বড় নমুনা নিয়ে গবেষণা করে জানিয়েছেন, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে উন্নয়নের সম্পর্ক প্রত্যক্ষ, এবং জোরদার। অর্থাৎ, যে পঞ্চায়েতে শাসক ও বিরোধী পক্ষের অনুপাত কাছাকাছি, অথবা যে অঞ্চলে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা জোরালো, সেখানে উন্নয়নের কাজও দ্রুততর এবং অধিকতর হয়। কেন, তার একটা কারণ অনুমান করা চলে। ক্ষমতাসীন দল যদি জানে যে বিরোধীরা ঘাড়ের ওপর নিশ্বাস ফেলছে, তবে নিজেদের ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করার জন্যই তারা কাজে মন দেবে। অতএব, ‘উন্নয়ন’-এর গুঁতোয় বিরোধীদের তালুকছাড়া করে দিলে শাসক দলের রাজনৈতিক লাভ হতে পারে, কিন্তু সাধারণ মানুষের ক্ষতি।

অনুব্রত যতই ‘উন্নয়ন’ কথাটাকে ছ্যাবলামোর জায়গায় নামিয়ে আনুন, উন্নয়ন বস্তুটা জরুরি। প্রশ্ন হল, কার কাছে জরুরি? নেতাদের কাছেও? কব্জির জোরেই যদি ভোটে জেতা যায়, তবে আর উন্নয়নের গুরুত্ব থাকে কি নেতাদের কাছে? উত্তরটা রাজ্যবাসী জানেন। কাজেই, পঞ্চায়েতের ফলাফলের সঙ্গে উন্নয়নের সম্পর্ক খুঁজলে ইতিবাচক কথা বলা মুশকিল। তার চেয়ে বরং খোঁজ করা যাক, সব আসন দখল করতে তৃণমূল কংগ্রেস মরিয়া কেন? একাধিপত্যের বাসনা? না কি, গূঢ়তর কারণ আছে?

আরও পড়ুন- ওই বালিশ মাথায় দিয়েই ঘুমোত দিলদার! ওর গোটা শরীরটাও তৃণমূলের: কেষ্ট​

আরও পড়ুন- কবি তো জানি রবীন্দ্রনাথ-নজরুল, এ আবার নতুন কোন কবি: কেষ্ট​

এই প্রশ্নের উত্তরে কিছু জল্পনা-কল্পনার বেশি এগোনো মুশকিল। তবে, যুক্তিগ্রাহ্য অনুমানের মার নেই। রাজনৈতিক ভাবে, সব আসন দখল করতে না পারলেও তৃণমূল কংগ্রেসের চলবে। কিছু পঞ্চায়েত হাতছাড়া হলেও ক্ষতি নেই। কিন্তু, সেই হারের ক্ষতি অন্যত্র। পঞ্চায়েতের হাতে এখন অনেক টাকা। এবং, যে দল যেখানে জিতবে, টাকায় অধিকারও তার। সরকারি বরাদ্দের সব টাকা মানুষেরই কাজে লাগে, এমন দাবি করলে অনুব্রত মণ্ডলও সম্ভবত এক হাত জিভ কাটবেন। বস্তুত, দুর্জনে বলে থাকে, তৃণমূল কংগ্রেসের মতো দলে, যে দলের কোনও শক্তপোক্ত আদর্শগত ভিত্তি নেই, সেখানে মানুষ যোগ দেয় মূলত অর্থনৈতিক কারণেই। অর্থাৎ, শাসক দলের খাতায় থাকলে হয় সিন্ডিকেটে বখরা জুটবে, নয়তো পঞ্চায়েতের টাকায় ভাগ পাওয়া যাবে, এই সব। কথাগুলো সব দুর্জনের, আবারও মনে করিয়ে দেওয়া ভাল। কোনও পঞ্চায়েত হাতছাড়া হলে সেখানকার টাকাও হাতছাড়া। ফলে, যাঁরা এত দিন টাকার আকর্ষণে তৃণমূল কংগ্রেসের ঝাণ্ডা উঁচু রাখতেন, টাকা না থাকলে তাঁদের সিংহভাগও থাকবেন না বলেই অনুমান করা চলে। এবং, তাঁদের অনেকেই সম্ভবত বিজয়ী পক্ষে নাম লেখানোর চেষ্টা করবেন। তাতে দুর্বল হবে তৃণমূলের স্থানীয় সংগঠন। যেখানে পঞ্চায়েতে হার, সেখানে সাংগঠনিক দুর্বলতা। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচন আসছে। তার পর, একুশে বিধানসভা। কঠিন লড়াই। তাতে জিততে হলে প্রতি ব্লকে কেষ্ট চাই, প্রতি পঞ্চায়েতে আরাবুল। হেরো পঞ্চায়েতে তারা যদি দল পাল্টে ফেলে, ওই নির্বাচনগুলোয় দেখবে কে?

কাজেই, পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ‘উন্নয়ন’ আসলে পরের নির্বাচনগুলোর স্বার্থে।

দূরদৃষ্টি তো একেই বলে!

Anubrata Mondal অনুব্রত মণ্ডল
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy