কলকাতা পুরসভার পর এ বার বিধাননগর পুরনিগমও একই পথে হাঁটল। বিধাননগর এলাকার সকল ‘রুফটপ’ রেস্তরাঁ আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পুরসভায় ওয়ার্ডভিত্তিক কতগুলি ‘রুফটপ’ রেস্তরাঁ আছে, তার তালিকা তৈরি করছে বিধাননগর পুরনিগম। সেই তালিকা তুলে দেওয়া হবে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের হাতে। তার পরেই ‘রুফটপ’ রেস্তরাঁগুলি বন্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন, বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী।
‘রুফটপ’ রেস্তরাঁগুলি নিয়ে শুক্রবারই পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে কথা হয় কৃষ্ণার। তাঁর কথায়, ‘‘পুরমন্ত্রী জানিয়েছেন, কলকাতায় রুফটপ রেস্তরাঁগুলি বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা। একই সঙ্গে বিধাননগরেও ছাদের উপর থাকা রেস্তরাঁগুলি বন্ধের কথা বলেন তিনি।’’ পুরমন্ত্রীর নির্দেশের পরেই কাউন্সিলরদের নিয়ে বোর্ড মিটিং করেন বিধাননগরের মেয়র। সেই বৈঠকেই বিধাননগরের ‘রুফটপ’ রেস্তরাঁগুলি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, প্রত্যেক কাউন্সিলরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের ওয়ার্ডে থাকা ‘রুফটপ’ রেস্তরাঁগুলির তালিকা প্রস্তুত করার জন্য। সেই তালিকা পরে বিধাননগর পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে। সেই ভিত্তিতেই ‘রুফটপ’ রেস্তরাঁগুলি বন্ধ করা হবে বিধাননগরে। এ ব্যাপারে বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার মুকেশের সঙ্গেও কথা বলেন মেয়র। পুলিশকে তাদের মতো করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে বিধাননগরের মেয়র বলেন, ‘‘আমরা কোনও ব্যবসারই বিপক্ষে নই। তবে আমাদের কাছে মানুষের জীবনই প্রধান। সেই জীবন বাঁচাতে রাজ্য সরকার এবং আমাদের পুরসভা অঙ্গীকারবদ্ধ। মেছুয়াবাজারের ঘটনা আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে ‘রুফটপ’ রেস্তরাঁ থেকে কী ঘটতে পারে! সেই কারণে পুরমন্ত্রীর নির্দেশে সেই সব রেস্তরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।’’ শুধু ‘রুফটপ’ রেস্তরাঁ বন্ধ নয়, বিধাননগরের অন্য রেস্তরাঁগুলির পরিস্থিতিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান কৃষ্ণা। তিনি আরও জানান, রেস্তরাঁগুলিতে উপযুক্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রয়েছে কি না, সেখানে ঢোকা-বেরোনো বা আপৎকালীন দরজার কী ব্যবস্থা— সব কিছুই পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে দেখা হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার রাতে কলকাতার বড়বাজার এলাকার মেছুয়াবাজারের ঋতুরাজ হোটেলে অগ্নিকাণ্ডে ১৪ জনের মৃত্যুর পর থেকেই নড়েচড়ে বসেছে পুরসভা। কী ভাবে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে যেমন তদন্ত চলছে, তেমনই একাধিক পদক্ষেপও করা হচ্ছে। ঋতুরাজ হোটেলের অগ্নিকাণ্ডের পরই বিভিন্ন ছাদনির্ভর রেস্তরাঁগুলির নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। তার পরই কলকাতা পুরসভা ‘রুফটপ’ রেস্তরাঁ বন্ধের নির্দেশ দেয়। শুক্রবার কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানান, ছাদ কারও ব্যক্তিগত এলাকা নয়। সেই কারণে ছাদে কোনও কিছু বিক্রি করা যায় না! অবিলম্বে সব ‘রুফটপ’ রেস্তরাঁ সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশও দেন কলকাতার মেয়র।
আরও পড়ুন:
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর আগাম সতর্কতা হিসাবেই এই সিদ্ধান্ত নেওযা হয়েছে বলে জানান মেয়র। তাঁর কথায়, ‘‘যে সব রেস্তরাঁ ছাদে চালু রয়েছে, সেগুলি বন্ধ করতে হবে। নীচে আগুন লাগলে মানুষ যাতে ছাদে গিয়ে আশ্রয় নিতে পারেন, সেই পথ খোলা রাখতেই এই সিদ্ধান্ত।” ইতিমধ্যেই শহরের পরিচিত ম্যাগমা হাউসের উপরের রেস্তরাঁকে নোটিস পাঠানো হয়েছে। মেয়র জানিয়েছেন, বরোভিত্তিক রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে, কোন কোন এলাকায় কতগুলি রুফটপ রেস্তরাঁ রয়েছে, তা খতিয়ে দেখে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে। সেই আবহেই এ বার বিধাননগরের সব ‘রুফটপ’ রেস্তরাঁ বন্ধের নির্দেশ দিল পুরসভা।
বড়বাজারের হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই এলাকা পরিদর্শন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু, কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মাও। ওই হোটেলের আশপাশের বেশ কিছু বাড়ির অবস্থা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু তা-ই নয়, শহরের অন্য ‘বিপজ্জনক’ বাড়ি বা বহুতল নিয়েও চিন্তিত তিনি। বড়বাজারের ওই অগ্নিকাণ্ডের পর শহরের বাকি এলাকায় ভবনগুলি খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই কলকাতা পুরসভাকেও অভ্যন্তরীণ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এর জন্য পুরসভাকে কেন্দ্রীয় ভাবে একটি তদন্তকারী দলও গঠনের নির্দেশ দেন মমতা। সেখানে মেয়র, পুর কমিশনার, কলকাতা পুলিশের কমিশনার এবং কলকাতা এলাকার সব ডিসি এবং দমকলের প্রতিনিধি থাকবেন। শুধু কলকাতাতেই নয়, জেলাস্তরেও এই অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সেখানে ওই তদন্তকারী দলে পুলিশের তরফে জেলার পুলিশ সুপার থাকবেন বলে জানান মমতা।
শুধু বড়বাজার নয়, গত কয়েক দিনে শহরের বেশ কয়েকটি জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নিউ টাউন এবং সল্টলেকের মতো জায়গাতেও একই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। কোথাও কারখানা তো কোথাও আবার রেস্তরাঁ— আগুনের গ্রাসে পুড়ছে। কেন বার বার এমন অগ্নিকাণ্ড ঘটছে, তা নিয়েও চিন্তিত পুলিশ-প্রশাসন। তারই পদক্ষেপ হিসাবে ‘রুফটপ’ রেস্তরাঁ বন্ধের নির্দেশ দিচ্ছে পুরসভাগুলি।