Advertisement
২১ মে ২০২৪
Abhishek Banerjee

নেতার পাশাপাশি ‘প্রশাসক’ হিসাবে অভিষেককে মান্যতা দিয়ে দিল বিজেপিই! পাল্টা কর্মসূচিতে নিশানায় তিনিই

সোমবার নয়াদিল্লির রাজঘাটে তৃণমূলের কর্মসূচি শুরু হয় দুপুর ১টা থেকে। বিজেপি তার পাল্টা কর্মসূচি নেয়। সুকান্ত মজুমদার-সহ বাংলার বিজেপি নেতারা ঠিক এক ঘণ্টা আগে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন। দিল্লিতেই।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৩ ১৪:৫৭
Share: Save:

তৃণমূলের অন্দরে এবং বাইরে তাঁকে বলা হয় দলের ‘নম্বর টু’ অর্থাৎ গুরুত্বের বিচারে ‘দ্বিতীয়’ প্রধান। খাতায়কলমে অর্থাৎ দলীয় পদাধিকার বলেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ‘দ্বিতীয় প্রধান’ই বটে। কারণ, তিনি বাংলার শাসকদল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তাঁর উপরে রয়েছেন একজনই। তিনি দলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রীও। অর্থাৎ প্রশাসনিক প্রধান। যদিও বিজেপি এখন তা মনে করছে না। বরং বিজেপির মতে, বাংলার সরকারও চালান অভিষেকই। তিনিই আসলে শাসকদলের মুখ্য ‘প্রশাসক’।

অভিষেক নিজে অবশ্য সরকারের কোনও কাজকর্মে থাকেন না। তিনি এমনকি, সরকারি কোনও কর্মসূচিতেও হাজির থাকেন না। দল এবং প্রশাসনের মধ্যে সুস্পষ্ট বিভাজনরেখা তৈরি করাই তাঁর লক্ষ্য। সেই কারণেই তিনি কোনও দলীয় সাংগঠনিক কাজে মনোনিবেশ করেন। সরকারি কোনও বিষয়েই তাঁকে দেখা যায় না। কিন্তু রাজ্যের প্রধান বিরোধীদল বিজেপি মনে করছে, মমতা নন, তখন দলের সঙ্গে প্রশাসনও চালান অভিষেকই। তবে অনেকে মনে করছেন, এই কথাটি বলে বিজেপি তৃণমূলের মধ্যেই ক্ষমতার ভরকেন্দ্র পাল্টে দেওয়ার এবং ‘বিভ্রান্তি’ তৈরি করার সূক্ষ্ণ চাল চেলেছে। তারা বলতে চেয়েছে, অভিষেকই এখন দল এবং প্রশাসনে সর্বেসর্বা।

সোমবার গান্ধীজয়ন্তীর দুপুরে রাজধানী নয়াদিল্লিতে অভিষেকের নেতৃত্বে ধর্না কর্মসূচিতে বসেছে তৃণমূল। তার আগেই বঙ্গ বিজেপির সভাপতি তথা বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার অভিষেককে কার্যত বাংলার প্রশাসকের মর্যাদা দিয়ে বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার তো নামেই। পিছন থেকে তো সরকার চালান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই!’’

নয়াদিল্লিতে তৃণমূলের কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা ছিল সোমবার দুপুর ১টা থেকে। বিজেপি তার আগেই ‘পাল্টা কর্মসূচি’ নেয়। সুকান্ত-সহ বাংলার বিজেপি নেতারা একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন দিল্লিতে। উপস্থিত ছিলেন হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং বাঁকুড়ার সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকারও। অভিষেকের নেতৃত্বে তৃণমূলের ‘মিশন দিল্লি’ কর্মসূচি কেন ‘অযৌক্তিক’ এবং ‘লোকদেখানো’ তা জানাতেই সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছিলেন সুকান্তেরা। তথ্য-সহ তার ব্যাখ্যাও দিচ্ছিলেন সুকান্ত। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থ সাহায্য বন্ধ করার কারণ হিসাবে বাংলার সরকারের ‘দুর্নীতি’কেই দায়ী করছিলেন তাঁরা। সেই দোষারোপের ফাঁকেই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে বকলমে সরকার চালানোর প্রশাসকের ‘মর্যাদা’ দিয়ে ফেলেন সুকান্তরা। তৃণমূল সরকারকে নিশানা করতে গিয়ে মমতার কথা সুকান্ত বলেন কেবল একবার। অথচ ঘুরেফিরে বার বার উঠে আসে অভিষেকের প্রসঙ্গ। গত কয়েকদিনে অভিষেকের এক একটি মন্তব্য টেনে এনে তার জবাব দেন বাংলার বিজেপি নেতারা।

কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বরাদ্দ নিয়ে রবিবার রাতেই অভিষেক বলেছিলেন, ‘‘বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে বাড়ির মাটির দেওয়াল ধসে তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তার দায় কার? কেন এরা পাকাবাড়ি পায়নি? ওই তিন শিশুর পরিবার তার জবাব চাইতে আসবে দিল্লিতে।’’ সোমবারে দিল্লির সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূলকে দুর্নীতি প্রসঙ্গে আক্রমণ করতে গিয়ে প্রথমেই সুকান্ত টেনে আনেন ওই মন্তব্যের কথা। বলেন, ‘‘রাজনীতি করবেন বলে অভিষেক এসব বলেছেন। তিন শিশুর মৃত্যুর জন্য আবাস যোজনার টাকা বন্ধ করার সিদ্ধান্তকে দায়ী করছেন তিনি। কিন্তু গ্রামে গ্রামে ক্যামেরা নিয়ে ঘুরলেই স্থানীয় বাসিন্দারা বলে দেবেন, কেন ওঁরা বাড়ি পাননি! কোন তৃণমূল নেতা নিজের বাড়ি থাকা সত্ত্বেও আবাস যোজনায় তিন-তিনটি বাড়ি নিয়ে বসে আছেন। আমার লোকসভা কেন্দ্রে গিয়ে দেখেছি, আবাস যোজনার টাকায় মন্দির বানানো হয়েছে। অথচ হিসাব বলছে ইউপিএ আমলে যে টাকা আবাস যোজনার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল, এনডিএ আমলে তার ছ’গুণেরও বেশি টাকা পেয়েছে বাংলা। তার পরেও সেই টাকা এই পরিবারগুলি পায়নি কেন?’’

উল্লেখ্য, আবাস যোজনার টাকা যে নয়ছয় হয়েছে, সে কথা মেনে নিয়ে তৃণমূলও বলেছে দুর্নীতিগ্রস্তদের রেয়াত করা হবে না। বস্তুত, পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূলের ‘দিদির দূত’ কর্মসূচিতে আবাস যোজনা নিয়ে একের পর এক অভিযোগ জমাও পড়েছিল। তার পরেই দুর্নীতিবাজেরা যাতে ভোটে দাঁড়াতে না পারে, সে জন্য আলাদা করে পঞ্চায়েত প্রার্থীদের মনোনয়নের জন্য গণভোট করান অভিষেক। তাঁর ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ যাত্রার সময় সেই ভোট করানো হয়। তৃণমূলের যে নেত্রী আবাস যোজনার টাকা না পেয়ে মাটির বাড়িতে থাকেন, তাঁকে পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট দেয় তৃণমূল। সুকান্ত অবশ্য সোমবার বলেন, ‘‘আবাস যোজনার টাকা ঠিকমতো বণ্টন হয়েছে কি না, তা জানার জন্য বিশেষ দল গিয়েছিল। তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করা হয়নি। যাঁরা দুর্নীতি করেছেন, তাঁদের শাস্তিও দেওয়া হয়নি। তা ছাড়া শাস্তি দেবে কে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে তো অভিষেকই পিছন থেকে সরকার চালাচ্ছেন!’’

তবে সোমবার তৃণমূলের ‘দিল্লি চলো’ কর্মসূচির জন্য ট্রেন না পাওয়া প্রসঙ্গেও মন্তব্য করেছেন সুকান্ত। সেখানেও আক্রমণ করেছেন অভিষেককেই। সুকান্ত বলেছেন, ‘‘ঠিক করে আবেদন করেননি। তাই ট্রেন পাননি। আর এখন ওঁরা নরেন্দ্র মোদীকে দুষছেন।’’ উল্লেখ্য, গত শুক্রবার তৃণমূলের দিল্লিযাত্রার ট্রেনের অনুমোদন পাওয়া যাবে না জানিয়ে রেল চিঠি দেওয়ার পরেই অভিষেক বলেছিলেন, মোদী সরকার প্রতিহিংসাপরায়ণ। তাঁর সরকার ভয় পেয়েছে বলেই ট্রেন দেওয়া হয়নি তৃণমূলকে। সুকান্ত ট্রেন প্রসঙ্গে বলতে গিয়েও টেনে আনলেন অভিষেকের মন্তব্যকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Abhishek Banerjee TMC BJP Sukanta Majumdar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE