Advertisement
E-Paper

বোমা-গুলি-তাণ্ডব, অবাধে ভোট লুঠ শাসকের

পুর নির্বাচন ঘিরে সকাল থেকেই অশান্তি। বুথ জ্যাম, ছাপ্পা, বিরোধী এজেন্টদের বার করে দেওয়া, বোমাবাজি— বাদ গেল না কোনও কিছুই। গোটা বিধাননগর জুড়ে বহিরাগতরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বলে বাম, কংগ্রেস এবং বিজেপি’র অভিযোগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৫ ০৯:০৯
 হাতিয়াড়ায় বুথ জ্যাম। ঢুকতে পারছেন না ভোটাররা। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

হাতিয়াড়ায় বুথ জ্যাম। ঢুকতে পারছেন না ভোটাররা। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

পুর নির্বাচন ঘিরে সকাল থেকেই শুরু হয়ে গেল অশান্তি। বুথ জ্যাম, ছাপ্পা, বিরোধী এজেন্টদের বার করে দেওয়া, প্রার্থীকে মারধর, বোমাবাজি— বাদ গেল না কোনও কিছুই। গোটা বিধাননগর জুড়ে দিনভর বহিরাগতরা দাপিয়ে বেড়িয়েছে বলে বাম, কংগ্রেস এবং বিজেপি’র অভিযোগ। পুলিশ কোথাও নীরব দর্শক, কোথাও দুষ্কৃতীদের সহায়ক, দাবি বিরোধীদের। শাসকের বিরুদ্ধে বল্গাহীন সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে সোমবার রাজারহাট-সল্টলেকে ১২ ঘণ্টার বন্‌ধের ডাক দিল সিপিএম। ভোটকে প্রহসন আখ্যা দিয়ে কংগ্রেস নেতা অরুণাভ ঘোষের মন্তব্য, পুলিশ কমিশনার নপুংসক। নজিরবিহীন রিগিং-এর প্রতিবাদে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরের সামনে ধর্নায় বসেছেন রাজ্য বিজেপি’র সভাপতি রাহুল সিংহ।

বিধাননগর ও আসানসোল পৌর নিগম এবং শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদে শনিবার পূর্ণাঙ্গ নির্বাচনের জন্য ভোট গ্রহণ হল। বালিতে এবং মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকায় চলছে উপনির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণ। ভোট শুরুর ঘণ্টা খানেক কাটতে না কাটতেই প্রায় সব জায়গায় রিগিং-এর অভিযোগ উঠতে শুরু করে শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

বিধাননগর পৌর নিগমের বিভিন্ন এলাকা থেকে গোলমালের খবর আসছে। বিধাননগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের হাতিয়াড়ায় একটি বুথ সকাল থেকে জ্যাম করে রেখেছে শাসক দল, অভিযোগ বিরোধীদের। সিপিএমের অভিযোগ, ভোট শুরুর আগে থেকেই ১ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ছাপ্পা ভোট দেওয়া শুরু করেছে তৃণমূল আশ্রিত বহিরাগত দুষ্কৃতীরা। একাধিক বুথ থেকে বাম এজেন্টদের বার করে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। ১ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএমের এজেন্ট দীপক পাল দুষ্কৃতীদের মারে গুরুতর জখম বলে খবর এসেছে। বামেদের মেয়র পদপ্রার্থী অসীম দাশগুপ্তর অভিযোগ, তাঁর ওয়ার্ডে করুণাময়ী এলাকার বুথে দুষ্কৃতীরা তাণ্ডব চালাচ্ছে। অসীমবাবুর নির্বাচনী এজেন্ট অমিত গোস্বামীও আক্রান্ত হয়েছেন। এপিসি ভবনে ১৮০ নম্বর বুথে তাঁকে শাসক দলের কর্মীরা মারধর করে বলে অভিযোগ। অসীমবাবুর কেন্দ্রেই ইই ব্লকের বুথেও ব্যাপক গোলমাল হয়েছে। সিপিএমের মহিলা কর্মীদেরও সেখানে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়েই অসীম দাশগুপ্ত সংশ্লিষ্ট বুথে ছুটে যান। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের কর্মী ইভিএম-এর পাশে দাঁড়িয়ে থেকে সকলকে জোড়াফুলের বোতাম টিপতে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডেও আক্রান্ত বামেরা। দুষ্কৃতীদের হাতে মার খেয়েছেন সেখানকার সিপিএম প্রার্থী মণিকা দেবনাথ। সল্টলেকের বিবি ব্লক কমিউনিটি সেন্টারের ভোট কেন্দ্র সাত সকালেই দখল হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। অবাধে সেখানে ছাপ্পা চলছে বলে সবক’টি বিরোধী দলের দাবি।

এই সংক্রান্ত আরও খবর
ভোট-যুদ্ধের দিননামচা
শাসকদলের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় নির্বাচন কমিশনে
বন্ধ ঘরে অপেক্ষায়, ওঁরা এসেছেন ভোট করাতে
প্রস্তুতির অন্দরমহল ‘আলো’ করে বহিরাগতেরা
ভোটে অশান্তি, ট্র্যাডিশন বজায় রাখল বালি

প্রার্থী না প্রতীক, কাকে বাছলেন তাপস ঘরণী গোপা?
অচেনা যুবক দেখিয়ে দিল কোথায় ভোট দিতে হবে
এ কেমন ভোট! এরা কারা সল্টলেকে?
সাংবাদিকদের বেধড়ক পেটাল তৃণমূলের গুন্ডারা

পূর্বাচল এবং পল্লীশ্রী এলাকার বুথগুলিতে কোনও ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলে সকাল থেকেই অভিযোগ করছে সিপিএম। পুলিশকে সেভাবে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে বুথের দরজায় দাঁড়িয়েই তৃণমূল কর্মীরা ভোটার স্লিপ বিলি করছেন বলে অভিযোগ। পুলিশকে সব জানানো সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে বাম প্রার্থী জানিয়েছেন। বিধাননগরের বিভিন্ন এলাকায় আক্রান্ত কংগ্রেসও। ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে তাণ্ডব শুরু করেছে দুষ্কৃতীরা। সেখানে কংগ্রেস এজেন্টকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ৭ নম্বর ওয়ার্ডেও পরিস্থিতি উত্তপ্ত। কংগ্রেস প্রার্থী দেবরাজ চক্রবর্তী বললেন, “এখনও পর্যন্ত গণ্ডগোল আমরা হতে দিইনি। কিন্তু, তৃণমূল প্রচুর বাইরের লোক এনেছে। কৈখালির কাছে একটা সিন্ডিকেটের অফিসে বহু লোক জড়ো হয়েছে। নেতৃত্বে দক্ষিণ দমদম পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর সত্যব্রত সাঁতরা।” শনিবার বেলা যত বেড়েছে, ততই তাণ্ডব বেড়েছে দুষ্কৃতীদের। ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী অনুপম দত্তর উপরও এ দিন চড়াও হয় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। তাঁকে ব্যাপক মারধর করা হয়। কংগ্রেস নেতা অরুণাভ ঘোষ তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, “সল্টলেকের সব বুথ দখল হয়ে গিয়েছে। সাধারণ ভোটদাতা তো বটেই, একটি ওয়ার্ডে আমাদের প্রার্থীকেও ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। ভোটের নামে প্রহস হচ্ছে।” ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে মাত্রাহীন সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে অরুণাভবাবু ওই ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেন। বিধাননগরের পুলিশ কমিশনারের তীব্র নিন্দা করে অরুণাভ ঘোষ এ দিন বলেন, “এমন মেরুদণ্ডহীন, নপুংসক পুলিশ অফিসার জীবনে দেখিনি।” তবে, আশ্চর্যজনকভাবে তৃণমূলের তরফ থেকেও এ দিন অভিযোগ করা হয়েছে যে ৪১ নম্বর-সহ বেশ কিছু ওয়ার্ডে দলেক কর্মী-সমর্থকদের ভোট দিতে দেওয়া হচ্ছে না।

‘‘বেলেঘাটায় থাকি। কমলদা পাঠিয়েছে। কমলদা আমাদের ওখানকার নেতা। বলেছেন ভোট দিতে পারলে ৫০০টাকা দেবেন। তাই এখানে এসেছি।’’-শিবম সানু (সল্টলেকে বাসিন্দাদের হাতে পাকড়াও হওয়া বহিরাগত)

আসানসোলের জামুড়িয়ায় সকাল থেকে বোমাবাজি চলছে বলে জানা গিয়েছে। সেখানে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএমের হেভিওয়েট প্রার্থী তাপস কবির এজেন্টদের বুথ থেকে বার করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সবক’টি বুথ দখল হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন সিপিএম নেতারা। ভোটাররা বুথ দখলের প্রতিবাদ করতে গেলে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে তাদের গোলমাল শুরু হয়। এক পুলিশ আধিকারিক বৈধ ভোটারদেরই ভোট কেন্দ্র থেকে ধাক্কা মেরে তাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ।

মুর্শিদাবাদে আক্রান্ত কংগ্রেস। পঞ্চায়েতের উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা সেখানে শুক্রবার রাত থেকই বোমাবাজি শুরু করে বলে অভিযোগ। বোমার আগাতে ২ কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। হরিহরপাড়ায় পরিস্থিতি রীতিমতো অগ্নিগর্ভ। কংগ্রেসের দাবি, তৃণমূলই এই ঘটনায় দায়ী। তৃণমূলের তরফে অবশ্য বলা হয়েছে, বোমা বাঁধতে গিয়ে বিস্ফোরণ হওয়ায় ওই দুই কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।

booth jam massive rigging miscreants dominating asansole vote saltlake vote howrah vote saltlake corporation election howrah corporation election asansole corporation election asansole election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy