অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি)-র তালিকা পুনর্বিবেচনা করতে রাজ্য সরকার যে সমীক্ষা শুরু করেছে, তাকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা চলছে কলকাতা হাই কোর্টে। ওই মামলায় এ বার রাজ্যের করা ওবিসি সমীক্ষা নিয়েই প্রশ্ন তুলল উচ্চ আদালত। অভিযোগ, কোনও রকম বিজ্ঞাপন বা প্রচার ছাড়া সমীক্ষা করা হচ্ছে। আদালতের আরও প্রশ্ন, কোর্টের নির্দেশে বাতিল হওয়া ১১৩টি সম্প্রদায়কে নিয়েই ফের সমীক্ষা করা হচ্ছে, অথচ নিজেদের ওবিসি বলে দাবি করে, এমন সম্প্রদায়কে কেন সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না? কেনই বা ওই সমীক্ষা নিয়ে কেউ জানতে পারছেন না? মঙ্গলবার আদালতে এমনই নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হল রাজ্যকে।
আদালতে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, কোনও সম্প্রদায় ওবিসি হিসাবে যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও যদি তারা এই সমীক্ষার কথা জানতেই না পারে, তা হলে তারা নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। তাই সকলকে সমীক্ষার বিষয়ে জানাতে হবে। সকলকে আবেদন করার সুযোগ দিতে হবে।
আরও পড়ুন:
এর পরেই হাই কোর্টের নির্দেশ, রাজ্যের সর্বস্তরে বিজ্ঞাপন দিয়ে তার পরেই সমীক্ষা করা যাবে। এ বিষয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত বিজ্ঞাপন দিতে হবে, যাতে সকলে সমীক্ষা সম্পর্কে জানতে পারেন। রাজ্য এবং স্থানীয় সংবাদপত্রেও বিজ্ঞাপন দিতে হবে রাজ্যকে। বিজ্ঞাপন দেখে নতুন যাঁরা ওবিসি শংসাপত্রের জন্য আবেদন করবেন, তাঁদের সহযোগিতা করতে হবে বিডিও এবং তাঁর অধীনস্থ অফিসারদের। দুই বিচারপতির বেঞ্চ এ-ও জানিয়েছে, রাজ্যের করা সমীক্ষায় এখনই হস্তক্ষেপ করা হবে না। তারা হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে সমীক্ষা চালিয়ে যেতে পারে। তবে আদালতের নির্দেশ কার্যকর হয়েছে, এই মর্মে আগামী ১৫ জুন হলফনামা জমা দিতে হবে রাজ্য এবং অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ কমিশনকে।
উল্লেখ্য, গত বছর ২২ মে কলকাতা হাই কোর্টে রাজ্যের প্রায় ১২ লক্ষ ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করে দিয়েছিল বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ। উচ্চ আদালতের নির্দেশ ছিল, ২০১০ সালের পর থেকে তৈরি সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করতে হবে। ওই সব সার্টিফিকেট ভবিষ্যতে কোথাও ব্যবহার করা যাবে না। হাই কোর্টের সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। তবে হাই কোর্টের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়নি শীর্ষ আদালত। সেখানে রাজ্যের মামলাটি বিচারপতি বিআর গবই এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মসিহের বেঞ্চে বিচারাধীন। তবে ওই মামলার রায় আসার আগে রাজ্যই আবার সুপ্রিম কোর্টকে জানায় যে, ওবিসি তালিকা নতুন করে যাচাই করতে রাজ্য সরকার ফের সমীক্ষা শুরু করছে। সেই সমীক্ষার জন্য রাজ্য তিন মাস সময় চায়। শীর্ষ আদালত সে সময় দিয়েছে।
অন্য দিকে, নতুন করে রাজ্যে সমীক্ষা শুরুর সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাই কোর্টে মামলাও দায়ের হয়। মামলাকারীর বক্তব্য, ২০১০ সালের পরে তৈরি রাজ্যের সব ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করেছে হাই কোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট ওই নির্দেশের উপর কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি। এই অবস্থায় নতুন করে ওবিসি চিহ্নিত করতে রাজ্য নতুন সমীক্ষা শুরু করতে পারে না।