Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Titagarh

গণধর্ষণের ঘটনা ঘিরে দিনভর উত্তপ্ত টিটাগড়

এ দিন দুপুরে টিটাগড়ে ওই তরুণীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে তাঁর দাদা ও ঠাকুরদা ছাড়া আর কেউ নেই। বাড়ির কাছেই বসেছে পুলিশ-পিকেট।

উত্তপ্ত টিটাগড়।

উত্তপ্ত টিটাগড়। প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:০২
Share: Save:

পথ অবরোধ, লাঠিচার্জ থেকে তৃণমূল-বিজেপি পারস্পরিক দোষারোপ— টিটাগড়ে এক তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘিরে শুক্রবার জলঘোলা হল দিনভর। এ দিন সন্ধ্যায় রাজ্য সরকারের তরফে মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, বিধায়ক রাজ চক্রবর্তী ও সাংসদ অর্জুন সিংহ নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করে আশ্বাস দেন, দোষীরা ধরা পড়বে ও দৃষ্টান্তমূলক সাজা হবে। ওই তরুণীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও আশ্বাস দেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘চার জনের মধ্যে তিন জনই ধরা পড়েছে। পুলিশকে বলেছি, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে। প্রশাসন সক্রিয় আছে।’’

এ দিন দুপুরে টিটাগড়ে ওই তরুণীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে তাঁর দাদা ও ঠাকুরদা ছাড়া আর কেউ নেই। বাড়ির কাছেই বসেছে পুলিশ-পিকেট। তরুণীর দাদা জানান, বুধবার রাত ১১টা নাগাদ তাঁর বোন ঘরের সামনেই শিবমন্দিরের চাতালে বসে মোবাইলে কিছু দেখছিলেন। কাছেই খাটিয়ায় শুয়ে ছিলেন ঠাকুরদা। সেই রাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন বৃদ্ধ। বলেন, ‘‘নাতনি মোবাইলে কিছু একটা দেখছিল। কয়েক জন যুবক এসে ওর সামনে দাঁড়িয়ে হাসাহাসি শুরু করল। তার পরে ওর ফোনটা ছিনিয়ে নিল। নাতনি ওদের পিছনে ছুটল মোবাইলটা ছাড়িয়ে আনতে। এর পরে ওকে অন্ধকারে একা পেয়ে ছেলেগুলো অত্যাচার চালাল। আমরা চাই, ওদের কঠোরতম শাস্তি হোক।’’

এ দিন দুপুরে নির্যাতিতার বাড়িতে যান বিজেপির রাজ্য সম্পাদক ফাল্গুনী পাত্র ও অন্য নেতা-নেত্রীরা। ফাল্গুনী বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার রাত থেকেই নির্যাতিতা ও তাঁর বাবা-মা গায়েব। কোথায় আছেন, বলতে পারছে না পরিবারের কেউ বা প্রশাসন। মেয়েটির ঠাকুরমা টিটাগড় থানার দ্বারস্থ হলেও সদুত্তর মেলেনি। নির্যাতিতা যাতে সুবিচার পান, তাই আমরা পথে নেমেছি।’’ ওই তরুণীর ঠাকুরমাকে নিয়ে এ দিন টিটাগড় থানার সামনে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন বৃদ্ধা। পুলিশকে তিনি বলেন, ‘‘আমার নাতনি, ছেলে, বৌমা কোথায়, কিছুই জানতে পারছি না। আমাদের জানানো হোক।’’ বিজেপি কর্মীরাও একই দাবিতে চিৎকার করতে থাকেন। এর পরেই বিটি রোড অবরোধ করেন তাঁরা। অবরোধ চলাকালীন পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে পুলিশকর্মীদের আক্রমণ করা হয় বলে অভিযোগ।

অন্য দিকে, বিজেপির অভিযোগ, ‘তৃণমূলের আশ্রিত’ বহিরাগত দুষ্কৃতীরা পুলিশের উপরে হামলা চালালে পুলিশ বিজেপি কর্মীদের উপরে লাঠি চালায় ও তাঁদের আটক করে। জখম হন বেশ কয়েক জন।

সন্ধ্যায় এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে ফিরে এলে নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করতে যান তৃণমূল সাংসদ, বিধায়ক ও মন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, ‘‘এটা রাজনীতি করার বিষয় নয়। এ রকম জঘন্য অপরাধের সাজা যাতে দোষীরা পায় এবং এমন ঘটনা আর যাতে না ঘটে, সেটাই তো সর্বাগ্রে দেখা উচিত সকলের।’’

ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে তরুণী এ দিন বলেন, ‘‘প্রথমে দু’জন আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। হাসাহাসি করে আমার মোবাইল ফোনটা কেড়ে নেয়। ওদের পিছনেই এক জন ছিল। আমি ফোনটা চাইতে গেলে জুনেদ নামে এক যুবক আমাকে ছুরি দেখায় ও নিজেকে চার নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আরমান মণ্ডলের ভাই বলে পরিচয় দেয়। ওর সঙ্গে ছোটু নামে আর এক জন ছিল।’’ নির্যাতিতার অভিযোগ, জুনেদই তাঁর মুখ চেপে ধরে ভয় দেখায় ও ঝোপে টেনে নিয়ে যায়। সেখানে তিন জন তাঁকে নিগ্রহ করে আর বিশাল নামে এক জন পাশে বসে নেশা করতে থাকে। নির্যাতনের পরে চলে যাওয়ার আগে ওই যুবকেরা হুমকি দিয়ে বলে, ঘটনার কথা কাউকে বললে পরিণাম খুব খারাপ হবে। এই ঘটনা প্রসঙ্গে আরমান মণ্ডল বলেন, ‘‘জুনেদ নামে আমার কোনও ভাই নেই। এমন ঘটনা যারাই ঘটিয়ে থাক, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Titagarh Chaos Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE