এ বছর যাঁরা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়েছেন বা কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছেন, তাঁদের প্রায় সকলেই প্রথম ভোটার হতে চলেছেন। যাঁদের প্রথম ভোট হবে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন। বৃহস্পতিবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠাদিবসের কর্মসূচি থেকে সেই নতুন ভোটারদের উদ্দেশেই বার্তা দিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
ওবিসি তালিকা সংক্রান্ত মামলার জটিলতার কারণে দু’মাস ধরে থমকে ছিল জয়েন্টের ফল প্রকাশ। উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ হয়ে গেলেও আইনি জটিলতার কারণে বন্ধ ছিল কলেজে ভর্তির কেন্দ্রীয় পোর্টালের তালিকা প্রকাশ। হাই কোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে রাজ্য সরকার জয়েন্টের ফল প্রকাশের অনুমতি আদায় করে আনে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের দিনই ফল প্রকাশ করে জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড। শুরু হয়ে যায় কলেজে ভর্তিও। তবে এই পর্বে ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা কাজ করছিল, যা সরকার সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করছিল জনমানসে। বৃহস্পতিবার সেই প্রসঙ্গ তুলে মামলাকারীদের পাশাপাশি বিচারব্যবস্থার একাংশকে নিশানা করলেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব।
মমতা বলেন, ‘‘কেউ কেউ ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বড় বড় কথা বলে। তারাই নিয়োগে বাধা দেয়, ভর্তিতে বাধা দেয়। আমি দুঃখিত যে, জয়েন্টের ফল প্রকাশে একটু দেরি হয়েছে। এর জন্য আমাদের দোষ নেই। ওরা কোর্টে কেস করে, একসঙ্গে কেস করে। আবার এসে আমাদের নামে নিন্দা করে। এরা দু’নম্বরি।”
আরও পড়ুন:
বৃহস্পতিবার ছাত্রসমাবেশে মমতার আগেই বক্তৃতা করেন অভিষেক। তিনিই প্রথম জয়েন্টের ফল প্রকাশ এবং কলেজে ভর্তিতে বিলম্ব নিয়ে মানুষের উদ্বেগের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। অভিষেক বলেন, ‘‘দ্বাদশ শ্রেণির ফল প্রকাশের পর বহু ছাত্রছাত্রীর ভর্তিপ্রক্রিয়া আটকে ছিল। আমাদের কাছে দুর্ভাগ্যের যে, বাংলার সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে গিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের একাংশ বাংলার পড়ুয়াদের জীবনে অন্ধকার নামিয়ে আনতে চেয়েছিল। আমরা সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে তা রুখেছি। সেই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। তার এক ঘণ্টার মধ্যে সরকারি প্রক্রিয়া চালু হয়েছে।’’
প্রসঙ্গত, ভর্তিপ্রক্রিয়ায় বিলম্ব তৃণমূলের মধ্যেও অসন্তোষের বাতাবরণ তৈরি করছিল। রাজ্য জয়েন্টের ফল প্রকাশ না-হওয়ায় অনেক নেতা তাঁদের ছেলেমেয়েকে বাইরের রাজ্যে পাঠানোর পরিকল্পনা করতে শুরু করেছিলেন। কলকাতার কাউন্সিলর থেকে শুরু করে রাজ্যের বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিদের প্রশ্ন শুনতে হচ্ছিল দলের লোকের কাছ থেকে, কবে ফল বার হবে? রাজনৈতিক মহলের মতে, নতুন ভোটার হতে চলা ছাত্রদের উদ্দেশে শাসকদল জোড়া বার্তা দিতে চেয়েছে। এক, যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, তার জন্য মামলাকারী এবং বিচারব্যবস্থার একাংশ দায়ী। দুই, জটিলতা কাটতেই কালক্ষেপ না-করে সরকার তৎপরতার সঙ্গে ফলপ্রকাশ করেছে।